বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

ছবি: ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
ক্রিস জর্ডানকে কভারের ওপর দিয়ে হাঁকানো তাসকিন আহমেদের শট তখনও বাউন্ডারি লাইনে পৌঁছায়নি। কিন্তু ততক্ষণে উইকেটের মাঝে একে অপরকে জরিয়ে ধরে উল্লাসে মেতে পড়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাসকিন। পুরো দল তখনও ডাগ আউটে উল্লাসে ব্যস্ত কিন্তু প্যাড জোড়া পায়ে তাসকিন-শান্তর দিকে ছুটেছেন নাসুম আহমেদ। ২২গজ ও ডাগ আউটে বাংলাদেশের এমন উল্লাসই জানান দেয় টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। মিরপুরের হোম অফ ক্রিকেটে ইংলিশদের ৪ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
এদিন ১১৮ রানের ছোট লক্ষ্যে নামা বাংলাদেশকে শুরু থেকেই চাপে রাখার চেষ্টায় ছিল ইংল্যান্ড। লিটন দাস ও রনি তালুকদার শুরুর দিকে চাপ সামাল দিলেও তৃতীয় ওভারে স্যাম কারানের ওভারে বাধে বিপত্তি। কারানকে পুল করতে গিয়ে ৯ রানে সল্টের তালুবন্দি হন লিটন।
সঙ্গী হারিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে স্কোরবোর্ডে রান যোগ করতে থাকেন রনি। তবে দলীয় ২৭ রানে পাওয়ার প্লে'র আগে আর্চারের বলে মঈনের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন এই ওপেনার। এরপর শান্তকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আসেন হৃদয়।
গেল দিন অনুশীলনে টানা সুইপ-রিভার্স সুইপ অনুশীলন করেছিলেন শান্ত। স্পিনাররা বোলিংয়ে এলে মঈন, আদিল ও রেহানদের বিপক্ষে তাই খেলার চেষ্টা করেন এই ক্রিকেটার। তবে কোনোটিই ব্যাটে-বলে হয়নি তার। হৃদয়ও একবার চেষ্টা করেন রিভার্স সুইপের। তিনিও ব্যাটে-বলে করতে ব্যর্থ হন।
এসবের মাঝে ১০ ওভার পার হলে দলীয় ৫৬ রানে রেহানের শিকার হন হৃদয়। ১৮ বলে ১৭ রানে এই তরুণ ফিরলেও পাঁচে নামা মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে স্কোবোর্ডে রান যোগ করতে থাকেন শান্ত। তাদের জুটিতেই দলীয় রান চলে যায় ১০০'র কাছাকাছি।
মিরাজ-শান্ত স্লগ সুইপ ও রিভার্স সুইপেও পেতে শুরু করেন সফলতা। তবে দলীয় ৯৭ রানে আর্চারকে পুল করতে গিয়ে ১৬ বলে ২০ রানে আউট হন মিরাজ। ক্রিজে শান্তর সঙ্গে জুটি বাধতে আসেন সাকিব। কিন্তু দলের রান ১০০'র ঘরে পৌঁছাতেই মঈন আলীকে ইনসাইড আউট খেলতে গিয়ে জর্ডানের হাতে ধরা পড়েন সাকিব।
রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। ক্রিজে নতুন আসা আফিফকে নিয়ে তা সহজেই করে ফেলতে পারতেন শান্ত। কিন্তু আর্চারের গতির কাছে হার মেনে বসেন আফিফ।

এই পেসারের গতিময় ডেলিভারিতে সরে গিয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন আফিফ। বেল উড়ে চলে যায় পেছনের বাউন্ডারির কাছাকাছি। শান্তর সঙ্গে জুটি বাধতে ও দলকে জয়ের বন্দরে নিতে ক্রিজে আসেন তাসকিন। শেষ ১২ বলে প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৩ রানের।
১৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসা জর্ডানকে পুল করে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চাপ কমান শান্ত। পরের বলে মিস ফিল্ডিংয়ে ২ নিয়ে জয়ের খুব কাছে চলে যায় বাংলাদেশ। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে তাসকিনকে স্ট্রাইক দিলে ৯ বলে ৬ রানের প্রয়োজন দাঁড়ায় বাংলাদেশের।
চতুর্থ বলে জর্ডানকে ৪ হাঁকিয়ে দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে যান তাসকিন। ২ রান প্রয়োজন হলে আরও একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের আরও একটি ইতিহাস লেখেন তাসকিন। তবে এই ইতিহাস গড়ায় অন্যতম নায়ক হয়ে থাকলেন শান্ত। যিনি অপরাজিত ছিলেন ৪৭ বলে ৪৬ রানে।
মিরপুরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও টস ভাগ্য গিয়েছে সাকিব আল হাসানের পক্ষে। প্রতিপক্ষের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করে ইংল্যান্ড। তবে তৃতীয় ওভারে এসে স্বাগতিকদের প্রথম সফলতা এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ডানহাতি এই পেসারকে বড় শট হাঁকাতে গিয়ে ডিপ থার্ড ম্যানে হাসান মাহমুদের তালুবন্দি হন দাভিদ মালান।
সঙ্গী হারালেও তিনে নামা মঈন আলীকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন ফিল সল্ট। ইংলিশদের চাপে ফেলতে তাসকিনকে দিয়ে ৩ ওভার করিয়ে বসেন সাকিব। আর কোনো সফলতা না এলেও এক উইকেট নিয়ে ১৯ রান দেন এই পেসার। তবে সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসে সল্টকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান সাকিব।
বাঁহাতি এই স্পিনারের ফ্লাইটেড ডিলেভারিতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বসেন ইংলিশ এই ওপেনার। ১৯ বলে ২৫ রানে সল্ট ফিরলে দলীয় ৫৫ রানে দারুণ এক ইয়র্কারে জস বাটলারের স্টাম্প ভাঙেন হাসান। ৪ রানে বাটলার ফিরে গেলে মেহেদি হাসান মিরাজকে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে শামীম পাটুয়ারির তালুবন্দি হন মঈন।
১৭ বলে ১৫ রানে এই ইংলিশ ব্যাটার ফিরলেও ইংল্যান্ডের হয়ে লড়তে থাকেন বেন ডাকেট ও স্যাম কারান। তাদের ব্যাটে দলীয় রান ১০০'র কাছাকাছি পৌঁছালেও মিরাজের ঘূর্ণিতে জোড়া আঘাত পায় ইংলিশরা। একই ওভারে স্টাম্পিংয়ে কারান ও ক্রিস ওকসকে বিদায় করেন মিরাজ।
৬ ব্যাটারকে হারিয়ে ধুকতে থাকা ইংলিশদের পক্ষে একাই লড়াই চালিয়ে যান ডাকেট। নিজের শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে ক্রিস জর্ডানকে বিদায় করে চতুর্থ উইকেট তুলে দেন মিরাজ। ১০১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসা ইংলিশদের সংখ্যা জাগে ২০ ওভার শেষ হওয়ার আগেই গুটিয়ে যাওয়ার।
যদিও শেষের দিকে অভিষিক্ত রেহান আহমেদের সঙ্গ পেয়ে ডাকেট শেষ ওভার পর্যন্ত লড়লেও, ইনিংসের শেষ ওভারে ডাকেটকে ফিরিয়ে দান মুস্তাফিজ। দারুণ এক ক্যাচ দিয়ে এই ইংলিশ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান শান্ত। এরপরের ৩ বলে কোন রান অবশ্য দেননি মুস্তাফিজ।
পরের বলে ওয়াইড হলেও রেহান আউট হন রান আউটে। শেষ দুই বলে চেষ্টা করেও আর্চার ও রশিদ দলকে এনে দিতে পারেননি ১২০ রানের পুঁজি। উল্টো শেষ বলে আর্চারের রান আউটে ১১৭ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস। ১২ রানে ৪ উইকেট নেন মিরাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ইংল্যান্ড- ২০ ওভারে ১১৭ অল আউট (ডাকেট ২৮, সল্ট ২৫) (মিরাজ ৪/১২)
বাংলাদেশ- ১৮.৫ ওভারে ১২০/৬ (শান্ত ৪৬, মিরাজ ২০) (আর্চার ৩/১৩)