বাজে ফিল্ডিংয়ের পর সাকিবে স্বস্তি বাংলাদেশের

সংগৃহীত
promotional_ad

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||


দ্বিতীয় দিন সকালে দুই ওপেনারকে দ্রুত ফিরিয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন তাইজুল ইসলাম। প্রথম সেশনে তার কল্যাণেই ভারতের টপ অর্ডার গুড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। আর লাঞ্চের পরপরই কোহলিকে ফিরিয়ে লিডের স্বপ্ন বুনছিল টাইগাররা কিন্তু বাজে ফিল্ডিংয়ে সেটা আর হয়নি। ঋষভ পান্ত এবং শ্রেয়াস আইয়ারের ১৫৯ রানের জুটিতে বড় রানের পথে হাঁটছিল ভারত। তবে শেষ বিকেলে সাকিবের ঘূর্ণিতে ৩১৪ রানে অলআউট হয় ভারত। এরপর শেষ বিকেলে ব্যাটিং করতে নেমে বিনা উইকেটে ৬ রান তোলেছে বাংলাদেশ। ১০ উইকেট হাতে নিয়ে এখনও ৮১ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।


বিনা উইকেটে ১৯ রান নিয়ে আজ সকালে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই ভুগেছে ভারত। অপরদিকে স্পিনারদের কল্যাণে দুর্দান্ত শুরু করে বাংলাদেশ। পরপর নিজের দুই ওভারে যথাক্রমে লোকেশ রাহুল এবং শুভমান গিলকে ফিরিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ভারতের দুই ওপেনারই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরেছেন। গিলের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৯ বলে ২০ রান। আর ভারত অধিনায়ক সাজঘরে ফিরেছেন ৪৫ বলে ১০ রান করে।


প্রথম ঘন্টায় দুই উইকেট হারানোর পর দেখে-শুনে খেলতে থাকেন বিরাট কোহলি এবং চেতেশ্বর পূজারা। বিশেষ করে কোহলি। দুই প্রান্ত থেকেই স্পিন আক্রমণ দিয়ে দারুণ ভাবে চেপে ধরে বাংলাদেশ। বেশ কয়েকটি ছোট ছোট সুযোগও তৈরি করেছিল বোলাররা। ২৪তম ওভারের প্রথম বলে সিলিতে হাফ চান্স লুফে নিতে পারেননি জাকির হাসান। একই ওভারের শেষ বলে মিরাজের করা লেন্থ বল খেলতে গিয়ে প্যাডে আঘাত হানে পূজারার। জোরালো আবেদনও ছিল তবে আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি।


৩১তম ওভারে বোলিংয়ে ছিলেন তাইজুল। তৃতীয় বল কভারে খেলতে গিয়ে এডজ হয় পূজারার। তাতে সিলি পয়েন্টে মুমিনুলের হাতে ধরা পড়েন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৪ রান। আর ভারতের তিন উইকেটের তিনটাই নিজের ঝুলিতে পুড়েছেন তাইজুল।


ঋষভ পান্ত উইকেটে আসার পর ভারতের রানের গতি কিছুটা বাড়ে। এই উইকেটকিপার ব্যাটার শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলার চেষ্টা করেছেন। আর তাতে সুযোগও পেয়েছিল বাংলাদেশ। লাঞ্চের আগে সর্বশেষ ওভারে মিরাজের লেন্থ বল ঠিকমতো খেলতে পারেননি পান্ত। আউটসাইড এইডজ হয়ে বল চলে যায় প্রথম স্লিপে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা লিটন দাসের জন্য এটা কঠিন সুযোগ ছিল। তবে তার পর্যন্ত পৌঁছায়নি বল, ফলে বিপদও হয়নি ভারতের। আর তাতে ৩ উইকেটে ৮৬ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় সফরকারীরা। 


লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরেই এক প্রান্তে পেস আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার পরপরই সফলতা পায় স্বাগতিকরা। বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে আসেন তাসকিন। তার ওভারের চতুর্থ বলটি ছিল অফ স্ট্যাম্পের সামান্য বাইরে লেন্থ ডেলিভারী। তাতে কোহলির ব্যাটের কানা ছুঁইয়ে বল জমা পড়ে উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। কোহলিকে আউট করে ঘরের মাঠে নিজের অভিষেক টেস্ট উইকেট শিকার করেন তাসকিন। সাজঘরে ফেরার আগে ভারতের সাবেক এই অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছে ২৪ রান।


কোহলির পর শ্রেয়াস আইয়ারকেও ফেরাতে পারতেন তাসকিন। ৪৪তম ওভারের তাসকিনের গুড লেন্থ থেকে লাফিয়ে উঠা বল ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতে পারেননি আইয়ার। তার ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় লেগে বল চলে যায় পয়েন্টে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মিরাজ শূন্যে লাফিয়ে বলে হাত লাগালেও তা তালুবন্দি করতে পারেননি। বরং মাটিতে পড়ে নাখে আঘাত পান মিরাজ।


promotional_ad

শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা পান্ত হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন মাত্র ৪৯ বলে। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করতে থাকা এই উইকেটকিপার ব্যাটার স্পিনার কিংবা পেসার সবার বিপক্ষে সাবলীল ব্যাটিং করেছেন। পান্তের সঙ্গে আইয়ারও দ্রুত গতিতে রান তুলছেন। তবে এই ব্যাটার ইতোমধ্যেই একাধিক জীবন পেয়েছেন। ৪৯তম ওভারে সাকিবের বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি আইয়ার। প্রথম দফায় সোহানও বল গ্লাভসে জমাতে পারেননি। তাতে সহজ স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়। 


চা বিরতির আগে ফিরতে পারতেন পান্ত। ৫৩তম ওভারে মিরাজের বলে লং অনে তুলে মারেন পান্ত। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মুশফিক সেই বল তালুবন্দি করতে পারেননি। বরং তার হাত ছোঁয়ে বল চলে যায় সীমানার ওপারে। পান্তের পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন আইয়ারও। ৬০ বলে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। অন্যদিকে ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় হতাশার এক সেশন পার করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কেবল কোহলির উইকেট। ৪ উইকেটে ২২৬ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় ভারত।


একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করার পর অবশেষে সাজঘরে ফিরেন পান্ত। মিরাজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ৯৩ রান করা পান্ত। এই উইকেটকিপার ব্যাটারের বিদায়ে ভাঙ্গে ১৫৯ রানের জুটি।


পান্তের পর উইকেটে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অক্ষর প্যাটেল। ৭১তম ওভারে সাকিবের করা বলে লং অফের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শান্তর হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪ রান। অক্ষরকে ফিরিয়ে ম্যাচে প্রথম উইকেট তুলে নিলেন সাকিব।


পান্তের সঙ্গে লম্বা জুটি গড়েছিলেন আইয়ার। সঙ্গীর বিদায়ের পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না এই ব্যাটার। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করা আইয়ার আউট হয়েছেন ৮৭ রান করে। ৭৩তম ওভারে সাকিবের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি।


শেষ বিকেলে ভারতীয় ব্যাটারদের চেপে ধরেন সাকিব। ৭৭তম ওভারের চতুর্থ বলে সাকিবকে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন অশ্বিন। এতে লেগ বিফোরের আবেদন করলে তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। এরপর রিভিও নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আসেনি।


এরপরের ওভারে বোলিংয়ে আসেন তাইজুল। তার করা এই ওভারের শেষ বলে মিডল স্ট্যাম্পের ওপর পিচ করে বের হয়ে যাওয়া বল অশ্বিনের ব্যাটের পাশ ঘেষে উইকেটকিপারের গ্লাভসে জমা পড়ে। তাতে আউটের আবেদন করে বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। এবারও রিভিও নিয়ে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ।


টানা দুইবার রিভিও নিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর ৮১তম ওভারে অশ্বিনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন সাকিব। এবার আম্পায়ার আউট দিলে রিভিও নেন ব্যাটার। তবে তা বাংলাদেশের পক্ষেই যায়। সাজঘরে ফেরার আগে অশ্বিনের ব্যাট থেকে এসেছে ১২ রান। ইনিংসে এটা সাকিবের তৃতীয় শিকার।


আরেক প্রান্তে তাইজুলও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। ৮৪তম ওভারে তৃতীয় বলে এই বাঁহাতি স্পিনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট সাইড এইডজ হয়ে বল চলে যায় স্লিপে। সহজ ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি লিটন। উমেশকে ১৪ রানে ফিরিয়ে ইনিংসে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নিলেন তাইজুল।


এরপর আর বেশিক্ষণ টিকেনি ভারতের ইনিংস। মোহাম্মদ সিরাজ আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। আর তাতে ভারত অলআউট হয় ৩১৪ রানে। সাকিব এবং তাইজুল সমান চারটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেছেন। একটি করে উইকেট শিকার করেছেন মিরাজ এবং তাসকিন।


শেষ বিকেলে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে দেখে-শুনে খেলেছেন দুই ওপেনার জাইক্র হাসান এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। এদিন ৫ ওভার খেলে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬ রান তোলেছে বাংলাদেশ। ১০ উইকেট হাতে নিয়ে বাংলাদেশ এখনও ৮১ রানে পিছিয়ে আছে।


সংক্ষিপ্ত স্কোর:


বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)-   ২২৭/১০ (৭৩.৫ ওভার) (শান্ত ২৪, জাকির ১৫, মুমিনুল ৮৪, সাকিব ১৬, মুশফিক ২৬, লিটন ২৫, মিরাজ ১৫)


ভারত (প্রথম ইনিংস)- ৩১৪/১০ (৮৬.৩ ওভার) (পান্ত ৯৩, আইয়ার ৮৭; তাইজুল ৪/৭৪, সাকিব ৪/৭৯)


বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)-  ৬/০ (৫ ওভার) (শান্ত ৫*, জাকির ১*)



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball