নিজের পকেট থেকে শ্রমিকদের বেতন দেবেন সাকিব

ছবি: ছবিঃ- বিসিবি

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
সাতক্ষীরায় সাকিব আল হাসানের অ্যাগ্রো ফার্মের শ্রমিকরা চার মাসের বেতন বকেয়া দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন- এ খবর আগেই ছড়িয়ে পড়েছে। এবার আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন সাকিব। ফেসবুকে দেয়া পোস্টে জানিয়েছেন, শ্রমিকদের নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে চান তিনি।
ক্রিকেট থেকে শর্তসাপেক্ষে নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর থেকে দেশের বাইরেই বেশি অবস্থান করছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। এই মুহূর্তে সময় দিচ্ছেন নিজের সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে।
এছাড়া সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সেবা করার জন্য ফান্ড গঠনের কাজ করছেন তিনি। নানান কারণে ব্যস্ত থাকায় নিজের কাঁকড়া ফার্মের খোঁজ খবর নেননি তিনি। তাঁর ব্যবসায়ীক অংশীদারও তাঁকে কিছুই জানায়নি!
ফেসবুকে করা পোস্টে নিজের কারখানার শ্রমিকদের আচরণে হতাশা প্রকাশ করেন সাকিব। তাঁর মতে, এপ্রিলের শেষের দিকে পারিশ্রমিক পাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হলেও শ্রমিকরা তা ভুলে গিয়ে আগেই আন্দোলনে নেমে পড়েছে!
পুরো বিষয়টি যাচাই না করে মানুষের সামনে নিয়ে আসায় গণমাধ্যমের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ পাওয়া গিয়েছে সাকিবের সেই লেখায়।

সাকিবের সম্পূর্ণ পোস্টের বঙ্গানুবাদঃ
‘দেরিতে সাড়া দেয়ার কারণে ক্ষমা চাচ্ছি। আমি সমস্ত তথ্য আর চিন্তা-ভাবনাগুলো একটু গুছিয়ে নিতে চাচ্ছিলাম, যেন আপনাদের সবার কাছে সত্যটা তুলে ধরতে পারি। যদিও আমার নামটা ওই এগ্রো ফার্মের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু ব্যস্ত সূচির কারণে এটিও আমার অন্যান্য কোম্পানির মতোই পার্টনাররা পরিচালনা করেন।
আমি এগুলোর নিয়মিত খোঁজ রাখার বা ঘুরে দেখার সুযোগ খুব কমই পেয়ে থাকি। আপনারা জানেন যে বছরের বড় একটা সময় আমি দেশের বাইরে অবস্থান করি। আমাদের দ্বিতীয় সন্তান আসছে এবং এই পুরো সময়টায় আমি এগ্রো ফার্মের ব্যবসার ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। মিডিয়ার মাধ্যমে শ্রমিকদের বিষয়টা আমি জেনেছি।আমার ব্যবসায়িক অংশীদাররা আমাকে জানায়নি যে, শেষ কয়েক মাসে আসলে কী হয়েছে?
কিন্তু তারা কিছু শ্রমিককে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বেতন দিয়ে দেয়ার কথা বলেছিল। যদিও সব শ্রমিকের কাজ জানুয়ারিতেই শেষ হয়ে গেছে। তবু ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এলো, বিক্ষোভ করল। সম্ভবত নিচু মানসিকতার কিছু মানুষের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য।
যাই হোক, বিষয়টা জানার সঙ্গে সঙ্গে এর গুরুত্ব অনুধাবন করে পুরো বিষয়টা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। তাদের বেতন আমার নিজের ফান্ড থেকে পরিশোধ করে দেব। কোন কোম্পানি প্রদত্ত অর্থ বা আমার অংশীদারদের থেকে নিয়ে নয়। আসলে আমি মনে করি এটা কোম্পানির অভ্যন্তরীণ একটা বিষয় যা অভ্যন্তরীণই থাকাই উচিত ছিল।
আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি তাদেরকে মাস শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে না দেখে। যেহেতু তারা নিজেরাই এই বিষয়ে রাজি হয়েছিল। আরও অনেকের মতোই আমিও অসহায় মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছি, তাই অবাক হচ্ছি যে, মানুষ এটা কিভাবে ভাবল এত বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে আমি বঞ্চিত করব, যাদেরকে গত ৩ বছর ধরে নিয়মিত বেতন দিয়ে আসা হচ্ছে।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমি বুঝতে পারছি যে, এটা মিডিয়ার কোন একটা অংশের কাজ যারা ব্যাপারটা খুব ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে দেখেনি। ভালো হতো যদি তারা সত্যটা খুঁজে দেখত, আকর্ষণীয় হেডলাইন বানানোর দিকে মনযোগ না দিয়ে। যেটার কিছু অংশ মিথ্যা এবং পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
আমি মনে করি, মিডিয়ার একটা শক্তিশালী ভূমিকা আছে সত্য যাচাই করার এবং সঠিক তথ্যের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করার। তা না হলে হয়তো তারা আরও অনেককেই আমার মতো আঘাত করবে কোন কারণ ছাড়া। তারা পুরো বিষয়টায় ভালোভাবে নজর দিয়ে বাকি অংশীদারদের নামেও দায় আনতে পারত শুধুমাত্র আমার নামটা তুলে ধরার বদলে। আমি আশা করি, মিডিয়া এবং সাংবাদিকরা প্রতিবেদন করার বেলায় আরও যত্নবান হবেন।
জাতি হিসেবে আমি মনে করি, আমাদের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে মনযোগ দেয়ার এবং আমাদের উচিত মিথ্যা, ভিত্তিহীন তথ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং কঠোর হওয়া। আমার মনে হয় আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে আমাদের এখন নজর দেয়া উচিত।
সবাই নিরাপদে থাকুন, ভালো থাকুন।’