দাদার চলে যাওয়া মানতেই পারছি নাঃ খালেদ মাসুদ

ছবি: ছবি- সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। এই ক্রিকেটই আবার কেড়ে নিতে পারে তাজা প্রাণ। এমনই এক ঘটনার সাক্ষী ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান খালেদ মাসুদ পাইলট। যা এখনো তাঁর বুকে ঝড় তোলে।
১৯৯৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঘটেছিল এক মর্মান্তিক ঘটনা। অভিশপ্ত ওই দিনে বলের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার রমন লাম্বা। ২১ বছর আগের ঘটনা মনে করে এখনো কেপে উঠে খালেদ মাসুদের বুক। লাম্বার চলে যাওয়া এখনো মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
লাম্বার স্মৃতি মনে করে খালেদ মাসুদ বলেন, 'দাদার (রমন লাম্বা) কথা খুব মনে পড়ে। যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন ওকে মিস করব। ওর এভাবে চলে যাওয়াটা এখনো মানতে পারি না।'

ঘরোয়া লিগের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আবাহনী ক্রীড়াচক্র ও ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং। সে দিনের সেই ম্যাচে লাম্বার দলের অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মাসুদ। স্বল্প রানের ম্যাচ ছিল, চাপও বেশি ছিল। সঙ্গে আবাহনী-মোহামেডানের ম্যাচের উত্তাপ। মোহমেডানকে চাপে ফেলতে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন আবাহনীর অধিনায়ক খালেদ মাসুদ।
যার সুবাদে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ফিল্ডিং করতে আসেন রমন লাম্বা। হেলমেট ছাড়াই দাঁড়িয়ে যান তিনি। তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। সাইফুল্লা খানের শর্ট বল পুল করেন মেহরাব হোসেন অপি এবং বলটি আঘাত হানে লাম্বার মাথায়। মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঢাকার একটি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। কোমায় চলে যাওয়া লাম্বাকে আর বাঁচানো যায়নি। জীবন-মৃত্যুর মাঝে তিন দিন ছিলেন তিনি। ২৩ ফেব্রুয়ারি সবাইকে কাঁদিয়ে লাম্বা চলে যান না-ফেরার দেশে।
খালেদ মাসুদ বলেন, 'আমাদের কথা শুনে হেলমেট পরলে দাদাকে (রমন লাম্বা) এ ভাবে চলে যেতে হতো না। খেলার মাঠে আবাহনী ও মোহমেডানের লড়াইয়ের কথা সবারই জানা। সেই ম্যাচটা ছিল স্বল্প রানের। তাই স্নায়ুচাপে ছিলাম। আমাদের অধিনায়ক আকরাম ভাই (আকরাম খান) চোটের জন্য মাঠে ছিলেন না। আমি দলটাকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম। খুব কম রান করেছিলাম আমরা।'
'ওই রানের পুঁজি নিয়ে জিততে হলে আমাদের আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং করতে হতো। সবাইকে কাছে ডেকে নিয়েছিলাম। রমন লাম্বা হেলমেট ছাড়াই দাঁড়িয়ে গেল ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে। আমি দাদাকে বললাম, তুমি হেলমেট নিয়ে নাও। দাদা পাল্টা বলেন, দু’একটা বলের জন্য দরকার নেই হেলমেটের।' যোগ করেন তিনি।
সেই ঘটনা এখনো ভুলতে পারেননি সাইফুল্লা এবং মেহরাবও। বাংলাদেশের হয়ে ৪৪ টেস্ট খেলা খালেদ মাসুদ বলেন, 'রমন লাম্বার মৃত্যু অপি আর সাইফুল্লা অনেক দিন ভুলতে পারেনি। নিজেদের অপরাধী বলে মনে করত। যে দিন রমন লাম্বার দেহ ক্লাবে আনা হল, সে দিন আমরা নিজেদের আর স্থির রাখতে পারিনি। কয়েক বছর আগে ফিল হিউজ মারা গেল মাঠের ভিতরে। রমন লাম্বার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। কী করে ওকে ভুলবো বলুন?'
ক্রিকেট বল ছিনিয়ে নিয়ে গেল ৩৮ বছরের রমন লাম্বাকে। যা এখনো দুঃস্মৃতি হয়ে ঘুরে বেড়ায় সেই ঘটনার সাক্ষীদের মনে।