এমন সুযোগ কখনও আসেনি

ছবি: ছবিঃ বিসিবি

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম থেকে ||
মিনিট, ঘণ্টা, দিন, মাস এরপর বছর। দশক বা যুগের হিসাব কষারও সুযোগ আছে। সংখ্যায় ১৮। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার বয়স। আগামী ১০ নভেম্বর ১৯ বছরে পা রাখবে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কতটা বয়স বাড়ল বাংলাদেশের সাদা পোশাকের ক্রিকেটের? প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে তো? অবশ্য এমন প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া কঠিন।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ১১৪টি। প্রত্যাশিত অনুপাতে সাফল্য আসেনি। জয় মাত্র ১৩টি ম্যাচে। ড্র ১৬টিতে, যার পেছনে বেশিরভাগ অবদান বৈরি আবহাওয়ার। হারতে হয়েছে ৮৫টি ম্যাচে। এতোদিন, এতোগুলো ম্যাচ খেলার পর অবশেষে একটি সুযোগ কাছে ডাকছে বাংলাদেশকে। যে সুযোগ আগে কখনই তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
টেস্টে কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রথম সাক্ষাতেই জয় তুলে নেয়া- এমন লক্ষ্য নিয়ে কখনো মাঠেই নামেনি বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো এমন লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে সাকিব আল হাসানের দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে যাওয়া বাংলাদেশের দৃষ্টি যে কেবল জয়েই, সেটা বলাই বাহুল্য।

আফগানদের বিপক্ষে এ্ই ম্যাচে জয় পেলে প্রথম সাক্ষাতেই কোনো প্রতিপক্ষকে হারানোর স্বাদ পাবে বাংলাদেশ। যা আগে কখনই করতে পারেনি বাংলাদেশ। বিভিন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলা প্রতিটি প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হার নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ হারই বিশাল ব্যবধানের। ব্যতিক্রম কেবল ভারত ও ইংল্যান্ড: বাকি প্রতিটা দলের বিপক্ষে প্রথম সাক্ষাতে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।
নিজেদের অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ৯ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। এ ছাড়া ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টেস্টে ৭ উইকেটে হারে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তিন বছরে পা রাখা দলটি। বাকি সাত প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে প্রতিটা ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।
১৯ বছরের পথচলায় বাংলাদেশ টেস্ট জিতেছে ১৩টি। তবে এর বেশিরভাগ জয়ই ছিল অনেকটা অপ্রত্যাশিত। আফগানিস্তানই একমাত্র দল, যাদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই জেতার পরিকল্পনা এঁটেছে বাংলাদেশ।
এমন হিসাবে আফগানিস্তান অবশ্য বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। ২০১৭ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দুটি ম্যাচ খেলা আফগানরা একটিতে জয় পেয়েছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই জয় তুলে নেয় রশিদ খান-মোহাম্মদ নবিরা। এবার রশিদ-নবিদের বিপক্ষেই প্রথম ম্যাচ জেতার স্বাদ নিতে চান সাকিব-মুশফিকরা।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামতে এতোদিন লেগে গেল বাংলাদেশের? উত্তর খুব বেশি কঠিন নয়। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে সীমাবদ্ধতার শেষ নেই। অধারাবাহিক ব্যাটিংয়ের সঙ্গে আছে পেস আক্রমণে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে না পারা, স্পিনবান্ধব উইকেটের ওপর নির্ভর করা, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের প্রতি জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অনিহা, নির্দিষ্ট কয়েকজন ক্রিকেটারের ওপর বেশি নির্ভর করার বিষয়গুলো।
তবু ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্ট জিতে নতুন এক অভিজ্ঞতায় নিজেদের নাম লেখাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। অপেক্ষা কেবল মাঠের লড়াইয়ের।