ঐচ্ছিক সৌম্য থেকে আবশ্যক সৌম্য

ছবি: ছবি - ক্রিকফ্রেঞ্জি

এশিয়া কাপে সৌম্য সরকারের সুযোগ মিলেছিল বদলী খেলোয়াড় হিসেবে, সুযোগ পেয়ে খেলেছেন সাত নম্বর পজিশনে। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও বল হাতে সাত নম্বর পজিশনের দাবি মিটিয়েছেন তিনি। কিন্তু ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলে ছিলেন না তিনি। সাকিব-তামিম ছিলেন না, তাই সৌম্য সরকারের না থাকা অবাক করার মতই ছিল।
কিন্তু রাখা হলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে, টানা চার দিনের ম্যাচ খেলে খুলনা থেকে ঢাকা সফর করে পরের দিনই বিকেএসপিতে দলের নেতৃত্বে নেমে পড়েন তিনি। খেলেন ১০২* রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস।
১৯ অক্টোবরের সেই সৌম্যময় সেঞ্চুরির পর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেছিলেন, 'সৌম্য সরকার আমাদের পুলের প্লেয়ার। সে আমাদের ভাবনায় আছে। দেশের প্রয়োজনে যখন দরকার হবে তখন তাঁকে আনা হবে।'
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে ইমরুল কায়েসের অবিশ্বাস্য ফর্ম ও লিটন দাসের ব্যাটে রান, সৌম্যর জায়গা কই? কিন্তু তৃতীয় ওয়ানডের আগে নির্বাচকদের ঐচ্ছিক তালিকায় থাকা সেরা ক্রিকেটার সৌম্য সরকারের সুযোগ মিললো, তাও আবার ফজলে রাব্বির টানা দুই ম্যাচের ব্যর্থতায়।
নির্বাচকদের ঐচ্ছিক তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে মাঠ কাঁপানো ইনিংস খেলা আবশ্যক ছিল সৌম্য সরকারের, প্রয়োজন ছিল ২০১৪-১৫ মৌসুমের খুনে মেজাজের সৌম্যর আবির্ভাবের।

বড় ইনিংসের মঞ্চও সাজানো ছিল তাঁর জন্য। আগে ব্যাট করা জিম্বাবুয়ে ২৮৭ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শুরুতেই লিটন দাসের উইকেট হারিয়ে বসে। প্রথম ওভারেই সৌম্য সরকারকে মাঠে নামতে হয়, তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে।
তিনে নামলেও মূলত ওপেনার হিসেবে বাংলাদেশ দলের ইনিংস সাজাতে হয়েছে তাঁকে। আরেক ইনফর্ম ওপেনার ইমরুল কায়েসের সাথে সমান তালে ব্যাটের ধাঁর দেখিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি।
খুনে মেজাজের ব্যাটিংয়ে ৯২ বল খেলে ১১৭ রান করেছেন তিনি। ছয়টি চার ও ছয়টি ছয়ে সাজানো ইনিংসের স্ট্রাইক রেট ছিল ১২৭। হরিজন্টাল ব্যাটের শট গুলো লং অন থেকে ডিপ মিড উইকেট অঞ্চলে আঁচড়ে ফেলে দর্শকদের চোখ কপালে তুলেছেন তিনি।
বার বার ফিরিয়ে এনেছেন ২০১৫ সালের সেই সৌম্যর স্মৃতি, যখন তিনি বিশ্বকাপে চাপের মুহূর্তে প্রতি আক্রমণে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণকে ভোঁতা করেছেন। একই বছর ঘরের মাঠে এসে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংও সৌম্যর বেধড়ক পিটুনি সহ্য করেছিল।
বছর জুড়ে একশ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরেই সৌম্যর রান স্কোরিংয়ে ভাটা নামে। আয়ারল্যান্ডে ২০১৭ সালে দুটি ফিফটি ছাড়া গত দুই মৌসুমে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না সৌম্যর ক্যারিয়ারে।
মানসিক ও টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধানের খোঁজে কেটে গেছে অনেক সময়। চলতি বছর প্রিয় কোচ সালাউদ্দিনের সাথে নিজের ব্যাটিং এর সমস্যা নিয়ে আলাদা ভাবে কাজ করেছেন সৌম্য।
এশিয়া কাপের আগে নিবৃত্তে কাজ করে গেছেন নিরলস ভাবে। ফলাফলটা এশিয়া কাপে না পেলেও পেয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেট ও পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। কোচ সালাউদ্দিন সম্প্রতি ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন, 'আমার মনে হয় এটা খুব দ্রুতই সমাধান করা যাবে এবং সে খুব ভাল ভাবেই ফিরবে।'
কদিন আগে ঐচ্ছিক তালিকা চলে যাওয়া সৌম্য ফিরেছেন, ফিরেছেন বড় স্টেটমেন্ট নিয়ে, জায়গা করে নিতে, নির্বাচকদের 'আবশ্যক' তালিকায়।