ইস্পাত কঠিন বিশ্বাসের কাছে শঙ্কার হার

ছবি:

প্রথম ইনিংসে পাঁচশ করেও দুইশ রানে পিছিয়ে থাকলে ড্রেসিং রুমের বাতাসে দম নেয়া সহজ হওয়ার কথা না। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত টেস্ট দলের ক্ষেত্রে কথাটা আরও সত্যি। চাপে ভেঙ্গে পড়ার উদাহরণ তো কম নয়! তার উপর দলের সবচেয়ে বড় তারকা অনুপস্থিত, যিনি ছাড়া টেস্ট জেতা এমনকি লড়াই করা কল্পনা করতেও কষ্ট হয়।
ম্যাচে নাক এগিয়ে থাকা লঙ্কানরাও এমন কিছু পরিকল্পনা করেছিল। রানের চাপে ফেলে বিশ্বাসে ফাটল ধরিয়ে ইনিংস জয় নিয়ে ঢাকায় ফেরার ছকই হয়তো আঁকা হয়েছিল লঙ্কান ক্যাম্পে। তবে চতুর্থ দিন সূর্যের তেজ কমার আগে তামিম-ইমরুলের ব্যাটের সকালের রোদ দেখল চিটাগং।
না, এবার হয়তো হবে! নিশ্চয়ই এমন ভাবনা টাইগার সমর্থকদের মনের কোণে ঘুরপাক খেয়েছে কয়েকশবার। কিন্তু 'পজেটিভ' থাকার মন্ত্র পড়তে পড়তেই ইমরুল আউট। সুইপ শটের টাইমিংয়ে গড়বড় করে অর্ধশত রানের জুটির ভাঙ্গন। খানিকবাদেই সেকেন্ড ইনিংসে বাংলাদেশের প্রলিফিক রান স্কোরার তামিম ইকবাল আউট।
অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বল খুঁজতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ... মনের দেয়াল ভেদ করে ভয় প্রবেশ করতে আর দেরি কই! বাকি ছিল কাঁপুনি ধরানো, সেটাও হয়ে গেল মুশফিকের দুর্ভাগ্যজনক আউটে। চোখের পলকে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটিং স্তম্ভের পতন। হাতে সাত উইকেট, তখনো ইনিংস পরাজয় এড়াতে দরকার ১১৯ রান।

এমন অংক গুলো মাথায় নিয়েই চতুর্থ দিনের শেষ বেলায় মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছিলেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মমিনুল হক। কয়েক হাত দূরেই লঙ্কান কাপ্তান চান্দিমাল মুখে হাসি নিয়ে যাচ্ছিলেন ড্রেসিং রূমের পথে। তার চোখে মুখে তৃপ্তি জ্বলজ্বল করছিল।
মনে মনে হয়তো পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনে আরও দুইটি উইকেট নিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের ভাবনা লালন করছিলেন তিনি। মমিনুলরা অবশ্য ম্যাচকে দেখছিল ভেবেছিল ভিন্ন চোখে। পুরনো অভিজ্ঞতা আর মানসিক শক্তির মিশেল ছিল মমিনুলদের চেতনায়। এক ছটাক নেতিবাচক মন্তব্যও কানে তুলতে চাননি তিনি। ইস্পাত কঠিন বিশ্বাসের দেয়ালে সব নেতিবাচক ভাবনা দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন তিনি।
তার ভাষায়, 'কাল রিয়াদ ভাই সহ আমরা সবাই কথা বলেছি এসব নিয়ে। আমরা এই সিচুয়েশনে এর আগেও অনেকবার ছিলাম। এমন অবস্থায় আসলে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মেন্টালি টাফ থাকা, নিজের উপর বিশ্বাস রাখা। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে টিম বয় পর্যন্ত সবার মাঝেই এই বিশ্বাসটা থাকা দরকার ছিল এবং সেটা ছিল।
শুধু আমরা না, সংবাদমাধ্যমে যারা আছেন তারা এমনকি পুরো দেশবাসির বিশ্বাসটাও গুরুত্বপূর্ণ। যদি সবাই বিশ্বাস রাখে তাহলে ভালো ফল আসবেই। রিয়াদ ভাই সহ আমরা সবাই একই কথা বলেছিলাম। দলের আশেপাশে প্রত্যেকেই যেন নেতিবাচক ভাবনা থেকে দূরে থাকে। আমরা ম্যাচটা বাঁচাতে পারব না, এই ভাবনা যেন কেউই লালন না করে। যদি একজনের মধ্যে এই জিনিসটা কাজ করে তাহলে ভাইরাসের মত জিনিসটা ছড়িয়ে যায়। '
ফল এসেছে সেই মমিনুলের হাত ধরেই। পঞ্চম দিনের মহা গুরুত্বপূর্ণ প্রথম সেশনে লঙ্কানদের কোন রকম সুযোগ না দিয়ে খেলেছেন তিনি ও লিটন দাস। ইনিংস বড় করে প্রথম ইনিংসের ড্যাডি সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসেও করেছেন সেঞ্চুরি। সঙ্গী লিটন দাস খেলেছেন সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই ইনিংস।
ম্যাচ বাঁচানোর ভিত গড়ে দিয়েছেন বিশ্বাসের ইট দিয়েই। দলের সবাই বিশ্বাসের মন্ত্র পাঠ করেছিল, তাই তো হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। মমিনুলের ভাষায়, 'দলের সবাই আমরা বিশ্বাস করব, এমন কথাই হয়েছে। আমরা যেন বিশ্বাস করি। আমরা সবাই বিশ্বাস করেছি, খেলা শেষ করে সুন্দরভাবে হাসি মুখে মাঠ ছাড়ব।'