তবুও দিনটা বাংলাদেশের

ছবি:

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৩৭৪/৪ (৯০) মমিনুল ১৭৫* মাহমুদুল্লাহ ৯*।
টস ভাগ্যঃ
চিটাগং টেস্টের উইকেট স্পিনারদের হয়ে কথা বলবে। ম্যাচ শুরুর আগে দুই অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও দীনেশ চান্দিমাল একই কথা বলেছিলেন। যতই দিন গড়াতে উইকেটে ততই স্পিন ধরবে। এমন উইকেটে প্রথম ইনিংসের রান মহামূল্যবান বিধায় টসে জিতে ব্যাটিং নিতে দ্বিতীয় চিন্তা করতে হয়নি রিয়াদকে।
স্পিন বলে চিটাগং টেস্টের মূল শক্তি, সেরা একাদশ নির্বাচনেও তারই প্রতিফলন দেখা গেল। বাংলাদেশের দশম টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ তার প্রথম টেস্টে তিন স্পিনার ও এক পেসার নিয়ে দল সাজান।
ব্যাটিংয়ে শুভ সূচনাঃ
ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুন করেছেন বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই ব্যাটের মাঝখান খুঁজে পান তামিম। লাহিরু কুমারাকে হ্যাট্রিক বাউন্ডারিও হাঁকান এই ওপেনার। লাকমল ও কুমারার পেস বেশ উপভোগ করছিলেন ইমরুলও। ইনিংসের শুরুতে বাউন্ডারির দেখা পান তিনিও। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের অষ্টম ওভারেই স্পিনার আনতে বাধ্য হন চান্দিমাল।
অফ স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরাকে ব্যবহার করতে ব্রেক থ্রু আনতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তামিম প্রথম ওভারেই পেরেরার অফ স্পিনকে স্টেপ আউট করে কাভার বাউন্ডারিতে পাঠান। পরের ওভারে ফের ক্রিজ ছেড়ে খেলেন তামিম। এবার বোলারের মাথার উপর দিয়ে ছয় হাঁকিয়ে দশম ওভারেই বাংলাদেশের ফিফটি পূর্ণ করেন তামিম। টানা দশ ইনিংস পর ওপেনিংয়ে অর্ধশত রানের জুটির দেখা পায় বাংলাদেশ।
তামিমের ফিফটিঃ
টেস্টের প্রথম সকালে লঙ্কানদের বোলারদের উপর ইনিংসের শুরু থেকেই চড়াও হন তামিম। প্রথমে লাহুরু কুমারাকে কয়েক দফা বাউন্ডারি ছাড়া করার পর আরেক পেসার লাকমলকে শাসন করেন তিনি। পেরেরার অফ স্পিনের বিরুদ্ধে আগ্রাসী ব্যাটিং করে রান বাড়িয়ে নেন তামিম। লঙ্কান বোলারদের লাইন লেন্থে থিতু হতে না দিয়েই মাত্র ৪৬ বলে ফিফটি তুলে নেন টাইগার ওপেনার।
পেরেরার আঘাতঃ
তামিম-ইমরুলের ব্যাটে ভালোই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নেয়া তামিম বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু ১৭তম ওভারে এসে তামিমের ডিফেন্সে ফাটল ধরান দিলরুয়ান পেরেরা। ব্যাট ও প্যাডে মাঝে জায়গা বের করে তামিমকে বোল্ড করেন তিনি। ৫৩ বল খেলে ৫২ রান করা তামিমের আরেকটি সম্ভাবনাময় ইনিংসের ইতি টানেন পেরেরা। সেই সাথে ওপেনিংয়ে তামিম-ইমরুলের ৭২ রানের দুর্দান্ত জুটির সমাপ্তি ঘটে।
মমিনুলের প্রতিআক্রমনঃ
তামিমের 'বিগ উইকেট' হারিয়েও প্যাডেল থেকে পা সরায় নি বাংলাদেশ। তিন নম্বরে নামা মমিনুল হক ওভার প্রতি পাঁচ করে রান তুলে ২০ ওভারেই বাংলাদেশের স্কোর সেঞ্চুরি ছাড়া করেন। স্পিন ও পেসের বিপক্ষে বাউন্ডারি খুঁজে নেন মমিনুল। কায়েস অন্য প্রান্তে সতর্ক ব্যাটিং করে দ্বিতীয় উইকেটে বড় জুটি গড়ার চেস্টা করেন।
ব্যর্থ ইমরুলঃ

চান্দিমাল ছিলেন জুটি ভাঙ্গার মিশনে। হেরাথ ও পেরেরার পর তৃতীয় স্পিনার হিসেবে সান্দাকানকে বোলিংয়ে আনেন তিনি। সাফল্য পেতে বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। উইকেটে জমে যাওয়া বাঁহাতি ইমরুলকে লাঞ্চ বিরতির আগে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলেন তিনি। রিভিউ নেয়ার সুযোগ থাকলেও সেই পথ মাড়াননি ইমরুল। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় বলটি লেগ স্টাম্পের উপর দিয়ে গেছে। ৭৫ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে দলীয় ১২০ রানে সাজঘরে ফিরে যান দুর্ভাগা ইমরুল।
চেনা মমিনুলঃ
প্রথম সেশনে দুই ওপেনারকে হারালেও ছন্দ পতন হয়নি বাংলাদেশের। তিন নম্বরে নামা মমিনুল হক লাঞ্চ বিরতির পর মাত্র ৫৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন। ক্রিজের ব্যবহার করে লঙ্কান বোলারদের লেন্থ নিয়ে খেলা করেন মমিনুল। স্পিনারদের বিপক্ষে কাট শটের সাথে স্টেপ আউট করে খেলতে থাকেন মমিনুল। সাড়ে চার রান রেটে বাংলাদেশের স্কোর দেড়শ রানে নিয়ে যান তিনি। মমিনুলকে সঙ্গ দেন ডান হাতি মুশফিকুর রহিম।
দুইশ রানে বাংলাদেশঃ
ঝুঁকিহীন ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের রান বাড়াতে থাকেন মুশফিক-মমিনুল জুটি। অর্ধশত ছাড়ানো জুটিতে ইনিংসের বাংলাদেশের স্কোর দুইশ ছাড়িয়ে যায়।
জুটির সেঞ্চুরিঃ
ইনিংসের ৪৯তম ওভারে এসে মুশফিক-মমিনুলের সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ পূর্ণ হয়।
মমিনুলের সেঞ্চুরিঃ
নব্বইয়ের ঘরে খেলছিলেন মমিনুল হক। কিন্তু চোখে মুখে নার্ভাস নাইনটিজের কোন আভাস ছিল না। ৫২তম ওভারে এসে সান্দাকানকে পর পর দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৯৬ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন, যা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। টেস্ট সেঞ্চুরির জন্য মমিনুলকে অপেক্ষা করতে হয়েছে তিন বছর। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষবার তিন অংকের দেখা পেয়েছিলেন মমিনুল।
বাংলাদেশের সেশনঃ
মমিনুল ও মুশফিকের সেঞ্চুরি পার্টনারশিপে দিনের দ্বিতীয় সেশনে দাপট দেখায় বাংলাদেশ দল। এক সেশনের ২৮ ওভারে সাড়ে চারের উপর রান রেটে কোন উইকেট না হারিয়ে ১৩০ রান করে চা পান বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। সেঞ্চুরিয়ার মমিনুলের সাথে ৪৭ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন মমিনুল হক।
মুশফিকের ফিফটিঃ
বিরতির পর ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন মুশফিকও। মমিনুলের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন ভঙ্গিমায় ব্যাটিং করে ফিফটি তুলে নেন সাবেক অধিনায়ক। ৪০ স্ট্রাইক রেটে খেলে জুটি বড় করে যান মুশফিক।
বাংলাদেশের তিনশঃ
ইনিংসের ৭১তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর তিনশ স্পর্শ করে। বাংলাদেশের বাড়ন্ত রান থামাতে ফিল্ডিং খুলে দেন লঙ্কান কাপ্তান চান্দিমাল। বাউন্ডারিতে পাহারাদার রেখে সেঞ্চুরিয়ান মমিনুলের বাউন্ডারি থামানোর চেস্টা করে লঙ্কানরা। তবে মনোযোগ হারায়নি মুশফিক-মমিনুল। রান রেট কিছুটা কমে আসলেও স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করে যান মুশফিক-মমিনুল জুটি।
জুটির ডাবল সেঞ্চুরিঃ
ইনিংসের ৭৮তম ওভারে মুশফিক-মমিনুল জুটি ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করে। দলের স্কোর তখন দুই উইকেটে ৩২৪ রান।
মমিনুলের দেড়শঃ
ঠিক পরের ওভারে ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শ করেন মমিনুল হক। ৮৮ স্ট্রাইক রেটে দেড়শ রান পূর্ণ করেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়বারের মত দেড়শ রান ছাড়া করেছেন তিনি।
নড়বড়ে নব্বইয়ের ফাঁদে মুশফিকঃ
পুরো ইনিংস জুড়ে বোলারদের কোন রকম সুযোগ দেন নি মুশফিকুর রহিম। অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় ইনিংস সাজিয়েছিলেন তিনি। নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে ক্যারিয়ারের ষষ্ট সেঞ্চুরির পথে এগোচ্ছিলেন তিনি। তবে নতুন বলে লাকমলের লেন্থ থেকে বের হয়ে যাওয়া বল সামলাতে গিয়ে ভুল করে বসেন তিনি। ফরওয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে ১৯২ বলে ৯২ রানে কট বিহাইন্ড হন তিনি।
লিটনের ভুলঃ
ঠিক পরের বলে নতুন ব্যাটসম্যান লিটন দাস মহা ভুল করে বসেন। লেন্থ থেকে ভেতরে আসা ছেড়ে খেলতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হন তিনি। লিটনকে শুন্য রানে সাজঘরে ফিরিয়ে দিনের শেষ বেলায় বাংলাদেশ ক্যাম্পে কাঁপুনি ধরিয়ে দেন সুরাঙ্গা লাকমল।
অক্ষত মমিনুল-মাহমুদুল্লাহঃ
দ্রুত দুই উইকেট পতনে চাপে পড়ে বাংলাদেশ দল। তবে উইকেটে জমে যাওয়া মমিনুল হক ও সদ্য ক্রিজে আসা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১৭৫ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন মমিনুল হক। অন্য প্রান্তে থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৯ রানে অপরাজিত আছেন। দুই স্পিনার পেরেরা ও সান্দাকার ছাড়াও শেষ বেলায় নতুন বলে দুই উইকেট নেন সুরাঙ্গা লাকমল।
বাংলাদেশ একাদশ- তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, কুমার দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক),মমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম, সানজামুল ইসলাম।
শ্রীলঙ্কা একাদশ- দিমুথ করুনারত্নে, ধনঞ্জয় দে সিলভা, কুশল মেন্ডিস, দিনেশ চান্ডিলেল (অধিনায়ক), নিরোশান ডিকওয়েলা (উইকেট রক্ষক), রোশান সিলভা, দিলরুয়ান পেরেরা, রঙ্গনা হেরাথ, সুরঙ্গ লাকমাল, লক্ষন সন্দাকান, লাহিরু কুমারা।