যেভাবে আহত হচ্ছে বাংলাদেশ

ছবি:

সাকিব আল হাসান, রুবেল হোসাইন, আল আমিন হোসাইন, আরাফাত সানি, মোহাম্মদ শহিদ, সাব্বির রহমান... গত চার বছরে মাঠে ও মাঠের বাইরের আচরনের কারনে বিভিন্ন ধাপে শাস্তি পেতে হয়েছে জাতীয় দলের খেলা এই ক্রিকেটারদের। ছোটখাটো বিষয় গণনা করতে গেলে লিস্ট আরও লম্বা হবে।
সাকিব আল হাসানকে দিয়েই শুরু করা যাক। ২০১৪ সালে মিরপুরে এক ওয়ানডে ম্যাচ চলাকালীন সময় ড্রেসিং রুমে থাকা সাকিব অশোভন ভঙ্গিমায় ক্যামেরার দিকে তাকান। শার্ট লেস সাকিবের দিকে বার বার ক্যামেরা দৃষ্টি দেয়ায় আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করে বসেন তিনি।
স্টেডিয়াম ভর্তি মানুষ দেখল সাকিবের এমন আচরন, দেখলো পুরো বিশ্ব। স্বভাবতই সাকিবের এমন আচরন ভালো লাগে নি বিসিবির। ফল স্বরূপ সাকিবকে তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে নিষিদ্ধ করে বিসিবি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই সিরিজে বাংলাদেশকে ধবল ধোলাই সইতে হয়।
সাকিবকে ছাড়াই মুশফিকের বাংলাদেশকে খেলতে হয় এশিয়া কাপের মত বড় আসর। সাকিবহীন বাংলাদেশকে পেয়ে বসে আফগানিস্তান। ফলাফল, ফতুল্লায় গ্যালারীতে বসে সতীর্থদের হার দেখতে হয় সাকিবকে।
আফগানদের বিপক্ষে এশিয়া কাপের হার তাড়া করে বেড়ায় পরের বছরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত। সেই আফগানদের বিপক্ষেই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে হয়ে বাংলাদেশকে। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জয় পেলেও ম্যাচ শুরুর আগে পুরনো ভূতের সাথে লড়তে হয়েছে স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের।
২০১৪ সালে তিন ম্যাচে নিষিদ্ধ হওয়ার পর অনাপত্তিপত্র না নিয়েই ক্যাবিরীয় প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) খেলতে গিয়ে বিপদে পড়েন সাকিব। রাগের বসে টেস্ট-ওয়ানডে থেকে অবসরের কথাও বলে বসেন তিনি। সব কিছু মিলিয়ে ছয় মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করার মত শাস্তি সইতে হয় সাকিবকে।
কিছুদিন পর সাকিবকে ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যেতে হয় বাংলাদেশকে। ২০০৯ সালে এক সাকিবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় করেছিল বাংলাদেশ, পরেরবারের দেখায় সাকিবকে ছাড়াই সফরে গিয়ে শুন্য হাতে ফিরে আসে মুশফিকরা।

শুধু সাকিব নন... এখনকার বাংলাদেশ দলের আরও অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার মাঠের বাইরে অমূলক আচরন করে বিপদে পড়েন। রুবেল হোসাইন, তার অভিনেত্রী গার্ল ফ্রেন্ড নাজনিন আক্তার হ্যাপিকে ধর্ষণ করার অভিযোগে জেল জরিমানার মুখে পড়েন। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে ঠিক আগে এই ঘটনা ঘটে।
একই ধরনের নারী ঘটিত অভিযোগ এসেছে বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানির বিরুদ্ধে। আরেক পেসার মোহাম্মদ শহিদ, তার বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ এসেছে। নারী নির্যাতনের মত ন্যাকারজনক ঘটনার দায়ে দোষী বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলা শহিদ।
রুবেল ২০১৫ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দিয়ে নিজেকে সঠিক পথে ফেরালেও সানি ও শহিদ পথ হারিয়েছেন। আব্দুর রাজ্জাক দল থেকে বাদ পড়ার পর সানিই ছিলেন দলের অন্যতম সেরা স্পিনার। মোহাম্মদ শহিদের মধ্যে সত্যিকারের টেস্ট বোলার খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশ।
মাঠের বাইরের বেপরোয়া জীবন ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার নয়, দেশের ক্রিকেটের ক্ষতি করেছে। সম্ভাবনাময় পেসার আল আমিন হোসাইনও একই ভুল করেছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিয়ম ভেঙ্গে মাঝপথে দেশে ফিরে আসতে হয় তাকে।
তবে বিশ্বকাপের পরও দলে ছিলেন তিনি। খেলেছেন ২০১৬ এশিয়া কাপ, টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু একই বছরের বিপিএলে সাব্বির রহমান সহ হোটেল রুমে নারী ঘটিত কাণ্ডে জড়িয়ে বড় অংকের জরিমানা ও শাস্তির মুখে পড়েন আল আমিন।
এরপর থেকে নির্বাচকদের গুড বুকের বাইরে চলে যান আল আমিন। অথচ আল আমিন হোসাইন ২০১৬ সালের টি-টুয়েন্টির এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন। এখন বোলিং গড়ের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসারদের একজন আল আমিন।
সাব্বির রহমান, তরুন এই প্রতিভার বিতর্কিত ঘটনার লিস্ট বেশ লম্বা। আল আমিনের সাথে হোটেল রুম কাণ্ডের পরও শিক্ষা হয়নি তার। মাঠে মেজাজ হারিয়ে কয়েকবার সতর্কবার্তা ও ডিমেরিট পয়েন্ট গুনতে হয়েছে তাকে।
বিসিবি কয়েক দফা তাকে জরিমানা করলেও শুধরান নি সাব্বির। ২০১৭ সালের বিপিএলেও আম্পায়ারের সাথে বাজে আচরন করে শাস্তি পেয়েছেন তিনি। সর্বশেষে এনসিএলে বড় শাস্তির মুখে পড়তে হয়ে এই তরুন হার্ড হিটারকে।
এবার দর্শকের গায়ে পরিকল্পনা করে হাত তুলেছেন তিনি। এই ঘটনার পর ম্যাচ রেফারি ও আকসুর কর্তাদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদে গিয়েও নমনীয় আচরন করেনি সাব্বির। ফলাফল হিসেবে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে তাকে।
ছয় মাস ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সাব্বিরকে। কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও বাইরে রাখা হয়েছে তাকে। তার উপর ২০ লক্ষ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে সাব্বিরকে। সামনের সিরিজ গুলোতে সাব্বিরকে নির্বাচকরা বিবেচনায় আনবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের বেশ কিছু স্মৃতির জন্ম দিয়েছিলেন সাব্বির। কিন্তু বাকী সবার মতই, সাব্বিরের মাঠের বাইরের আচরনই কাল হয়ে দাঁড়ালো। শুধু সাব্বিরের জন্য নয়, ক্রিকেটারদের এমন আচরনে ব্যক্তির চেয়ে বেশি আহত হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট।