ইয়াসির, শামীম, অঙ্কনদের ‘ঝড়’ নিয়ে বিপিএল শেষে আলাপ করতে চান সোহান
ছবি: মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (বামে), ইয়াসির আলী রাব্বি (মাঝে), শামীম হোসেন পাটোয়ারী (ডানে), ক্রিকফ্রেঞ্জি
ব্যাটিং বান্ধবে বোলাররা হাঁসফাঁস করলেও হেড-ক্লাসেনের ছক্কা বৃষ্টিতে গ্যালারিতে বসে হাত তালি দিয়েছেন দর্শকরা। টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা ক্রিকেটপ্রেমীরাও আনন্দ, উল্লাসে ফেঁটে পড়েছেন। আইপিএল কিংবা আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যখন এমন রান উৎসবে মাতোয়ারা তখন বাংলাদেশে একেবারে ভিন্ন চিত্র। টার্নিং আর মন্থর উইকেটে ব্যাটাররা কেবল টিকে থাকার লড়াইয়ে ছিলেন।
জাতীয় দলের মতো বিপিএলেও নেই রানের দেখা। কয়েক বছর ধরে উইকেটে রান চেয়ে এসেছে বাংলাদেশের সমর্থকরা। বিসিবির পক্ষ থেকে আশার বাণী শুনিয়েছেন, তবে ফলাফল দেখাতে পারেননি। বিপিএলের একাদশ আসর শুরুর আগে নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদও একই কথা বলেছেন, মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। প্রায় এক দশকেও না পাওয়া ক্রিকেটপ্রেমীরা তাই আশায় বুক বাঁধতে পারছিলেন না একদমই। যদিও মাঠের ক্রিকেটে চোখে পড়েছে ভিন্নতা।
বিপিএলের এবারের মৌসুমের প্রথম ম্যাচ থেকেই রানের দেখা মিলেছে। এখন পর্যন্ত হওয়া ৮ ইনিংসের দুটিতে ১৯০’র বেশি আর দুটি ইনিংসে দুইশ ছুঁয়েছে কিংবা ছাড়িয়েছে। বাকি ইনিংসগুলোতে রান না হওয়ার বড় ব্যর্থতা ব্যাটিংয়ের। বেশিরভাগ ক্রিকেটার কিংবা অধিনায়কই উইকেট নিয়ে ইতিবাচক ধারণাই দিয়েছেন। উইকেট ভালো হওয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও নিজেদের সামর্থ্যের পুরোটা ঢেলে দেয়ার প্রচেষ্টায় আছেন। দেশের জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশিদের দাপট দেখা যায়।
টুর্নামেন্টের প্রথম দুই দিনের চার ম্যাচের বেশিরভাগ দাপুটে পারফরম্যান্সই এসেছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের থেকে। প্রথম দিনের প্রথম ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীর ১৯৭ রানের সবচেয়ে বড় কারিগর ছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। ৮ ছক্কা ও ৭ চারে ২০০ স্ট্রাইক রেটে ডানহাতি ব্যাটার খেলেছিলেন ৪৭ বলে ৯৪ রানের ইনিংস। অথচ গত মৌসুমে ৫ ম্যাচ মিলে পঞ্চাশ পার করেছিলেন ইয়াসির। আরেক ব্যাটার এনামুল হক বিজয়ও করেছিলেন ৬৫ রান।
রাজশাহীর ১৯৭ রানের জবাবে ১১ বল থাকতে ম্যাচ জিতে নেয় ফরচুন বরিশাল। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের জয়ে ফাহিম আশরাফের সঙ্গে বড় অবদান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও। ২১৫.৩৮ স্ট্রাইক রেটে ৪ ছক্কা ও ৫ চারে ২৬ বলে অপরাজিত ৫৬ রান করে হয়েছেন ম্যাচসেরা। দ্বিতীয় দিনের খুলনা টাইগার্স ও চিটাগং কিংসের ম্যাচের বড় রানের নায়কও বাংলাদেশের ব্যাটার। উইলিয়াম বসিস্তো অপরাজিত ৭৫ রান করলেও দলের রান দুইশ পেরিয়েছে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ব্যাটে।
ছয় ছক্কায় ২৬৮.১৮ স্ট্রাইক রেটে খেলেছেন ২২ বলে অপরাজিত ৫৯ রানের ইনিংস। ১৮ বলে ছুঁয়েছেন পঞ্চাশ। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মাঝে সবচেয়ে দ্রুততম। রান তাড়ায় শামীম হোসেন পাটোয়ারী চিটাগংসের হয়ে ৭৮ রান করেছেন। ৫ ছক্কা ও ৭ চার মারা বাঁহাতি ব্যাটার খেলেছেন ২০৫.২৬ স্ট্রাইক রেটে। দেশের ব্যাটারদের এমন টি-টোয়েন্টি সূলভ ব্যাটিং আর শট নির্বাচন ও পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলায় তৃপ্তি পাচ্ছেন দর্শকরা।
নুরুল হাসান সোহান অবশ্য এখনই স্রোতের সঙ্গে ভেসে যেতে চান না। ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও পুরো টুর্নামেন্ট শেষে এটা বিচার-বিশ্লেষণ করতে চান রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক। জড়তা কাটিয়ে এমন ব্যাটিংয়ের পেছনে জাতীয় ক্রিকেট লিগ টি-টোয়েন্টিকে খানিকটা কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি। সোহান মনে করেন, বাংলাদেশের ব্যাটাররা আরও যত বেশি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলবেন ততো বেশি আত্মবিশ্বাস পাবেন।
ম্যাচ শেষে সোহান বলেন, ‘অবশ্যই, বিপিএলের আগে এনসিএলের ম্যাচ হলো। ওইখানেও কিন্তু হাই স্কোরিং কিছু ম্যাচ হয়েছে। যত টি-টোয়েন্টি খেলবে আমার কাছে মনে হয় টি-টোয়েন্টির যে আত্মবিশ্বাসটা খেলোয়াড়রা আরও বেশি পাবে। ওইদিক থেকে ভালো শুরু হয়েছে। দেখা যাক, টুর্নামেন্ট চলাকালীন আরও অনেক ম্যাচ হবে। টুর্নামেন্ট শেষে এটা আলোচনা করার সুযোগ থাকবে।’
অঙ্কন, ইয়াসির, শামীমদের মতো বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও নিজের ভূমিকা ও ম্যাচের পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ব্যাটিং করেছেন সোহান। প্রথম ম্যাচে ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ২২৭.২৭ স্ট্রাইক রেটে ১১ বলে ২৫ রান করেছিলেন। পরের ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের সঙ্গে রংপুরের বিপদে করেছেন ২৪ বলে ৪১ রান। ১৭০.৮৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা সোহান চারটি চারের সঙ্গে দুটি ছক্কাও মেরেছেন।
নিজের এমন ব্যাটিংয়ে অবশ্য বিশেষ কিছু দেখছেন না। বরং দলের প্রয়োজন মেটাতে পারাই প্রধান লক্ষ্য রংপুরের অধিনায়কের। সোহান বলেন, ‘পাওয়ার হিটিং বা এগুলো নিয়ে কিছু না। দল আমার কাছ থেকে যেটা চাচ্ছে ওইটা কতটুুকু দিতে পারছি ওইটা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অন্য কিছু বিশেষভাবে চিন্তা করার কিছু নেই।’