promotional_ad

একজন মার্টিন ক্রো এবং মরিসনের ধারাভাষ্যের জীবন

মমিনুল ইসলাম
৬ বছর পর বিপিএলে ধারাভাষ্য দিতে বাংলাদেশে ড্যানি মরিসন, ক্রিকফ্রেঞ্জি
বাজিগার সিনেমায় অজয় শর্মা ওরফে ভিকি মালহোত্রার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব পেয়েছিলেন অক্ষয় কুমার, সালমান খান, অজয় দেবগানের মতো অভিনেতারা। তবে নেতিবাচক চরিত্র হওয়ায় তাদের কেউই সেদিন রাজী হননি। শেষ বেলায় এসে তরুণ শাহরুখ খানকে দিয়ে নেতিবাচক চরিত্র করিয়েছিলেন আব্বাস-মাস্তান পরিচালক জুটি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এমন সব নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করলেও শাহরুখ বিশ্ব জুড়ে পরিচিত ‘কিং অব রোমান্স’ নামে।

promotional_ad

বলিউড বাদশাহ হয়ে উঠেছেন মেয়েদের ভালোবাসার পুরুষ। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ সিনেমায় রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করে মানুষের মন জয় করেছেন শাহরুখ। তবে কিং খানের জীবন বদলে গেছে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ দিয়ে। পরিচালক আদিত্য চোপড়া ব্রিটিশ ছেলে ও ভারতীয় মেয়েদের প্রেমের গল্পে বানাতে চেয়েছিলেন সিনেমা।


আরো পড়ুন

বিপিএলের ধারাভাষ্য প্যানেলে মরিসন

২৪ ডিসেম্বর ২৪
ধারাভাষ্য দিতে আবারও বিপিএলে আসছেন ড্যানি মরিসন

এমন গল্পের জন্য প্রধান চরিত্রে কাজলের বিপরীতে ভেবে রেখেছিলেন টম ক্রুসকে। তবে বাবার পরামর্শে গল্পের প্লট পরিবর্তন করে ভারতীয় দুুজন ছেলে-মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক করে সিনেমা বানান আদিত্য। টম ক্রুসকে মাথা থেকে সরিয়ে গল্প লিখলেও সেখানে প্রথম পছন্দ ছিলেন না শাহরুখ। আদিত্য চেয়েছিলেন সালমান খান, আমির খান কিংবা সাইফ আলী খানকে দিয়ে রাজের চরিত্র করাতে। তবে তাদের কেউ রাজী না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বলিউড বাদশাহকে নিয়ে সিনেমা তৈরি করেন পরিচালক। 


‘বড়ে বড়ে দেশও মে অ্যায়সে ছোটি ছোটি বাতে হোতি র‍্যাহতি হ্যায়!’ সংলাপটি এখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়শই ভাইরাল হতে দেখা যায়। ভারতের ইতিহাসের অলটাইম ব্লকবাস্টার সিনেমাটি করোনায় হল বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত চলেছে ১২৭৪ সপ্তাহ। সেই সিনেমা জীবন বদলে দেয় শাহরুখের, হয়ে উঠেন বলিউডের কিং, ভারতের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার। রাজ-সিমরানের গল্পের সঙ্গে ক্রিকেটের মিল একেবারেই নেই। তবুও গল্পটা আসলে গল্পের প্রয়োজনেই বলতে হলো।


ড্যানি মরিসনের জীবনেও এমনটা বাটারফ্লাই ইফেক্ট আছে বলা যেতে পারে। শাহরুখের জীবন যেভাবে বদলে দিয়েছেন আদিত্য চোপড়া তেমনি মরিসনের জীবন বদলে দিয়েছেন একজন মার্টিন ক্রো। তাকে বলা হয়ে থাকে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ব্যাটার। কিউইদের হয়ে ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে ৭৭ টেস্টের সঙ্গে খেলেছিলেন ১৪৩ ওয়ানডে। ৭৭ টেস্টে ৪৫.৩৬ গড় ও ১৭ সেঞ্চুরিতে মার্টিন ক্রো করেছিলেন ৫ হাজার ৪৪৪ রান। পরিসংখ্যান হয়ত মার্টিন ক্রোর সামর্থ্যকে পুরোপুরি প্রতিফলন ঘটাতে পারেন না। 


বছর কয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়াতে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওয়াসিম আকরাম জানিয়েছিলেন, তাঁর ক্যারিয়ারে বোলিং করা সবচেয়ে কঠিন ব্যাটার ছিলেন মার্টিন ক্রো। ‘সুলতান অব সুইং’ যখন এভাবে কিছু বলেন তখন মার্টিন কত বড় মাপের ব্যাটার ছিলেন সেটা বোধগম্য হওয়ার কথা। নব্বই দশকে জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়ার পর সদ্যই সাবেক হওয়া ক্রিকেটাররা ধারাভাষ্যে যোগ দিতে শুরু করেছিলেন। মার্টিন ক্রো নিজেও হেঁটেছিলেন সেই পথে।


ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা সাবেক কিউই এই ব্যাটার সেই সময় স্কাই টিভির নির্বাহী প্রযোজকও ছিলেন। ১৯৯৭ সালে ক্রিকেট ছাড়ার পর ক্রিকেট ম্যাক্সে স্পোর্টস কোর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছিলেন মরিসন। পাশাপাশি ধারাভাষ্যও দিতেন। শুক্রবার পুরো নিউজিল্যান্ড যখন রাগবির ম্যাচ দেখতে বসে যেতেন সেখানেও শোনা যেতো মরিসনের কণ্ঠ। সেই সময় মরিসনের সঙ্গে কাজ করেছিলেন মার্টিন ক্রোও। একদিন হুট করেই একটা ম্যাগাজিন শো বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন সাবেক কিউই অধিনায়ক। 


সেখানে গুরুগম্ভীর আলোচনার সঙ্গে খানিকটা হাস্যরস যোগ করতে চেয়েছিলেন মার্টিন ক্রো। সেটা করতেই সেই ‘ক্রিকেট কোম্পানি শোতে’ যুক্ত করেছিলেন মরিসনকে। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপে সেই গল্পই শুনিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক পেসার ও বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার। এ প্রসঙ্গে মরিসন বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি সাবেক ব্যাটার ও অধিনায়ক মার্টিন ক্রোর হাতে ধরে পেশাদার ধারাভাষ্যে এসেছিলাম। স্কাই তখন মাত্রই নিউজিল্যান্ডে গিয়েছে। মার্টিন ক্রো তাদের হয়ে কাজ করতো।’



promotional_ad

‘খুব সম্ভবত ১৯৯৭ সালের শুরুর দিকে আমি ক্রিকেট ছেড়েছিলাম। সদ্যই অবসর নেয়া অনেকেই টিভিএনজেডের সঙ্গে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করতো। ক্রিকেট কোম্পানি তখন একটা ম্যাগাজিন শো করার কথা ভেবেছিল। মার্টিন ক্রো শোতে একটু হাস্যরস যোগ করতে চেয়েছিল। স্পন্সরাও নাকি এমন কিছুই আবদার করছিল। মার্টিন ক্রো তখন আমাকে সুযোগ করে দেয়। তখন থেকেই আমার শুরুটা হলো।’


আরো পড়ুন

সিলেটে ১৫০ টাকায় দেখা যাবে বিপিএল

৪ জানুয়ারি ২৫
ক্রিকফ্রেঞ্জি

মরিসনের জীবন অবশ্য পুরোপুরি বদলে গেছে ১৯৯৯ সালে ভারত সফরে। সেবার ইয়ান স্মিথের সঙ্গে ধারাভাষ্য দিতে উপমহাদেশে এসেছিলেন তিনি। তবে পরবর্তী সময়ে এশিয়ায় আসতে খুব বেশি আগ্রহী ছিলেন না স্মিথ। নিউজিল্যান্ডে তখন রাগবির জনপ্রিয়তা একেবারে তুঙ্গে, স্মিথও তাই ক্রিকেটের চেয়ে রাগবিতেই বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছিলেন। মরিসন যখন ভারত সফর শেষ করে নিউজিল্যান্ডে ফিরেছিলেন তখন কাজের প্রশংসার পাশাপাশি প্রতিদানও পেয়েছিলেন। 


দেশে ফেরার পর মরিসনকে ডেকে মার্টিন ক্রো একদিন বলেন, ‘তুমি আমাদের এশিয়ার প্রতিনিধি।’ সেদিনের পর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মরিসন বলেন, ‘১৯৯৯ সালের কথা মনে হয়, ইয়ান স্মিথের সঙ্গে আমি ভারতে এসেছিলাম। ধারাভাষ্যকার হিসেবে সেটাই আমার প্রথম বিদেশ সফর ছিল। ঈশ্বর মার্টিনকে ভালো রাখুক। আমি পাকিস্তানেও ধারাভাষ্য দিয়েছিলাম।’


‘দেশে ফেরার পর মার্টিন একদিন আমাকে ডেকে বলল, ‘ড্যানি, আজ থেকে তুমি আমাদের এশিয়ার প্রতিনিধি।’ কারণ সে তখন দেশে ব্যস্ত সময় পার করছিল। ধারাভাষ্য দিতে হতো আবার স্কাইয়ের প্রযোজক হিসেবেও কাজ করছিলেন। আর স্মিথ তখন রাগবি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এটা আমার জন্য দারুণ একটা সুযোগ ছিল। সেটার জন্য মার্টিন ক্রোর প্রতি আমি সবসময় কৃতজ্ঞ।’


একটা সময় টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার রেকর্ড ছিল রিচার্ড হ্যাডলি। অলরাউন্ডার হলেও নিউজিল্যান্ডের স্ট্রাইক বোলার ছিলেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। হ্যাডলির অবসরের পর কিউইদের স্ট্রাইক বোলার হয়ে উঠেছিলেন মরিসন। পেশাদার ক্রিকেট ছাড়ার আগে কিউইদের হয়ে ৪৮ টেস্টে ১৬০ এবং ৯৬ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ১২৬ উইকেট। দুই যুগের বেশি সময় আগে ক্রিকেট ছেড়ে দেয়া মরিসন বর্তমান প্রজন্মের কাছে ধারাভাষ্যকার হিসেবেই বেশি পরিচিত।


ক্রিকেট বিশ্লেষণের সঙ্গে নাটকীয় বাচনভঙ্গিতে ধারাভাষ্য সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে মরিসনকে। মুখ, চোখের বিভিন্ন অবয়বের সঙ্গে বিভিন্ন সংস্কৃতির পোশাকে নিজেকে আলাদা করে তুলেছেন। হাস্যরস মিশিয়ে, মানুষকে হাসিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। বিশ্বকাপ, আইপিএল, সিপিএল, পিএসএল কিংবা বিপিএলে বৈচিত্র্যময় কাজের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন মরিসনের মা সুসান মরিসন। 


ড্যানির বয়স তখন ১২ কিংবা ১৩! সেই সময় ক্রিকেটের চেয়ে রাগবি আর সকার নিয়েই বেশি পড়ে থাকতেন তিনি। ১৯৭৮ সালে নাট্যকলা বিভাগে ডিপ্লোমা করেছিলেন তাঁর মা সুসান। নাট্যকলা বিভাগের ছাত্রী হওয়ায় বিভিন্ন মঞ্চ নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। অকল্যান্ডের মার্কারি থিয়েটারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর। ছেলে বয়সে ছোট হওয়ায় তাকেও সাথে করে নিয়ে যেতেন। সুসানের প্রেমিক ছিলেন তখন একজন লাইট ডিরেক্টর। প্রোডাকশনের কাজ দেখতে তার সঙ্গে সম্পর্ক জমিয়ে ফেরেছিলেন ছোট্ট মরিসন। 



এসবের পাশাপাশি মরিসনকে বিভিন্ন প্যান্টোমাইমের অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন সুসান। বলা হয়ে থাকে কথা না বলেও মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছানো কিংবা গল্প বলার অন্যতম মাধ্যম প্যান্টোমাইম। তরুণ মরিসন সেই সময় তাঁর মাকে বিভিন্ন চরিত্রে অঙ্গভঙ্গি করে অভিনয় করতে দেখেছিলেন। কোন কথায় কেমন অঙ্গভঙ্গি করতে হয় সেটা মাকে দেখেই শিখেছিলেন মরিসন। পরবর্তী সময়ে নিজের ধারাভাষ্যে এসব ব্যবহার করেছেন। 


সেই গল্প শুনিয়ে মরিসন বলেন, ‘১৯৭৮ সালে আমার মা নাট্যকলায় ডিপ্লোমা করেছিল। আমি তখন প্রায়শই মায়ের সঙ্গে থিয়েটারে যেতাম। তখন তো মায়ের প্রেমিকও ছিল। সে লাইটিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতো। মাঝে মাঝে আমি তাকে সহায়তা করতাম। অকল্যান্ডের মার্কারি থিয়েটারে আমি অনেক মঞ্চ নাটক দেখেছি। তখন আমি এসব মানুষদের আশেপাশেই থাকতাম। ক্রিকেটে ঢোকার আগে আমি টুকটাক রাগবি ও সকার খেলতাম।’


‘বিভিন্ন প্যান্টোমাইম, মৃৎশিল্পের অনুষ্ঠানে মা আমাকে নিয়ে যেতেন। তখন দেখতাম একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর অভিনয় করে দেখাতে হতো। কখনও কখনও ভিন্ন চরিত্রেও অভিনয় করতো। মাকে দেখতাম কোন কথায় সে কী ধরনের এক্সপ্রেশন দিচ্ছি কিংবা অঙ্গভঙ্গি করে দেখাচ্ছে। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটা আমাকে অনেক কাজে দিয়েছে। এটার ফলে মানুষকে বুঝতে পারাটা আমার জন্য সহজ হয়েছে। ক্যামেরার সামনে কিংবা মানুষের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হবে বা হয় সেটাও বুঝতে পেরেছি।’


শাহরুখের যেমন ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমা দিয়ে জীবন বদলে গেছে মরিসনেরটা বদলেছে মার্টিন ক্রোর হাত ধরে। মায়ের বদৌলতে হাস্যরসটা শিখলেও নিউজিল্যান্ডের সাবেক পেসার আজীবন তো কৃতজ্ঞ থাকবেন মার্টিন ক্রোর কাছেই। ধারাভাষ্য জীবনের শুরুর গল্পটা বলতে গিয়ে তাই হয়ত মরিসন দু’বার করে বললেন, ‘ঈশ্বর মার্টিনকে ভালো রাখুক।’



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball