টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমি ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল আফগানিস্তান

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
Publish Date: 10:54 Sunday, June 23, 2024
|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
 
শেষ পাঁচ বলে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন ২২ রান। হাতে মাত্র এক উইকেট। ম্যাচ জিততে অজিদের ঝুঁকি না নিয়ে উপায় নেই। অ্যাডাম জ্যাম্পা সেটাই করলেন কিন্তু আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের শর্ট বল উড়িয়ে মেরেও সীমানা পার করতে পারলেন না। লং অনে মোহাম্মদ নাবি সহজ ক্যাচ নিতেই উল্লাসে মাতোয়ারা আফগানিস্তান। বোলিং কোচ ডোয়াইন ব্রাভো সবার আগে ঢুকলেন মাঠে। একে একে যোগ দিলেন কোচিং স্টাফের অন্যরাও। আর মাঠে তখন আনন্দে যেন দিশেহারা রাশিদ খান, গুলবাদিন নাইব, ফাজালহাক ফারুকিরা।

বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস যে এদিন আফগান ক্রিকেটারদেরই মানায়। তিন সংস্করণ মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম জয় বলে কথা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং; তিন বিভাগেই দাপট দেখিয়ে ২১ রানে জিতল রাশিদ খানের দল। একইসঙ্গে তারা টিকে রাখল সেমি-ফাইনাল খেলার আশা। যে কারণে প্রেসেন্টেশনে গুলবাদিন নাইব বলেই বসলেন, ১০ বছরের মাঝে আফগানিস্থান ক্রিকেটের সর্বোচ্চ অর্জন এটি। এখন তাদের চোখ সেমিফাইনালে। 

এদিন আফগানদের জয়ের নায়কও এই নাইব।  অষ্টম বোলার হিসেবে আক্রমণে এসে ৪ ওভারে মাত্র ২০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়া বোলিংয়ে নাভিন উল হাক ও ব্যাটিংয়ে বড় অবদান রাখেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরানরা। সেন্ট ভিনসেন্টে রোববার ভোরে ১৪৮ রানের পুঁজি নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ১২৭ রানে গুটিয়ে দেয় আফগানিস্তান।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক জয় প্রায় চলেই এসেছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপে। কিন্তু এক গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের কাছে হেরে বসে পুরো দল। ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক বনে যান তিনি। আর রবিবারও এই ম্যাক্সওয়েলের কাছেই ম্যাচের নাটাই হারিয়ে বসতে নিয়েছিল আফগানরা। কিন্তু ৪১ বলে ৫৯ রান করা ম্যাক্সওয়েলকে বিদায় করে আফগানদের জয়ের পথ খুলে দেন নাইব। 
 
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতে নাভিনের তোপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। নিজের প্রথম দুই ওভারে এই পেসার ট্র্রাভিস হেড ও মিচেল মার্শকে প্যাভিলিয়নে পাঠান। মোহাম্মদ নবী প্রথম বলেই ডেভিড ওয়ার্নারকে শিকার বানান। ৩২ রানে তিন উইকেট হারানোর পর মার্কাস স্টয়নিসকে নিয়ে ম্যাক্সওয়েল চাপ সামলে নেন।
 
১০ ওভারে অজিদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৭০ রান। তখনও ম্যাচ অজিদের হাতের মুঠোয়। কিন্তু গুলবাদিন ১১তম ওভারে বল হাতে নিয়ে কাঁপিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। নিজের তৃতীয় বলে স্টয়নিসকে (১১) রহমানউল্লাহ গুরবাজের ক্যাচ বানিয়ে দুর্দান্ত ব্রেকথ্রু আনেন। তারপর এই পেসার তার পরের তিন ওভারে টিম ডেভিড, ম্যাক্সওয়েল ও প্যাট কামিন্সকে নিজের শিকার বানান।
 
১১১ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে আর ফেরার পথ খুঁজে পায়নি অজিরা। নাভিন দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আরেকটি উইকেট পান। অ্যাস্টন অ্যাগারকে ফিরিয়ে তৃতীয় উইকেট পকেটে ঢুকান তিনি। ইনিংসের চার বল বাকি থাকতে আজমতউল্লাহ ‍ওমরজাই জাম্পাকে নবীর ক্যাচ বানিয়ে জয় নিশ্চিত করেন।  
 
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটে দারুণ শুরু পায় আফগানিস্তান। ওপেনিং জুটি অস্ট্রেলিয়াকে বেশ ভুগিয়েছেও। ইনিংসের ১৬তম ওভারে ১১৮ রানে ভাঙে এই জুটি। ৪৯ বলে চারটি করে চার ও ছয়ে ৬০ রান করে আউট হন গুরবাজ। স্টয়নিসের বলে ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যাচ হন তিনি। 
 
অ্যাডাম জাম্পা পরের ওভারে জোড়া আঘাত করেন। ৪৮ বলে ৬ চারে ৫১ রানে থামেন ইব্রাহিম। তারপর বল হাতে নিয়ে আবারও জ্বলে ওঠেন কামিন্স। নিজের শেষ দুই ওভারে হ্যাটট্রিক করে আফগানিস্তানের রানের লাগাম টেনে ধরেন তিনি। ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন তিনি। সুপার এইটে দুই ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করলেন অজি পেসার।

এই হারে অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নে বড় ধাক্কা লাগলো। শেষ ম্যাচে তারা খেলবে ভারতের সঙ্গে। ম্যাচটি জিততেই হবে তাদের, হারলেই বিদায়। আর আফগানিস্তান বাঁচিয়ে রাখলো সেমিফাইনালে খেলার আশা। এজন্য বাংলাদেশকে হারাতে হবে তাদের। ভারত জিতে গেলে সেমিফাইনালে ওঠার সমীকরণটা জেনেই বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে আফগানরা। কারণ পরের ম্যাচ তারা খেলবে ভারত-অস্ট্রেলিয়া লড়াইয়ের পর।
 
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
 
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৮/৬ (গুরবাজ ৬০, ইব্রাহিম ৫১) (কামিন্স ৪-০-২৮-৩)
 
অস্ট্রেলিয়া: ১৯.২ ওভারে ১২৭ অল আউট (মার্শ ১২ ম্যাক্সওয়েল ৫৯) (নাইব ৪-০-২০-৪)