জ্যোতির সেঞ্চুরির পর ফাহিমা-সুমনার ১০ উইকেট, বাংলাদেশের রেকর্ড জয়

ছবি: বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ফাহিমা খাতুন (বামে), নিগার সুলতানা জ্যোতি (মাঝে) ও জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা (ডানে), আইসিসি

হাফ সেঞ্চুরির পর ইনিংস আর লম্বা করতে পারেননি ফারজানা হক পিংকি। ডানহাতি ব্যাটার না পারলেও সেঞ্চুরির পথেই হাঁটছিলেন শারমিন আক্তার সুপ্তা। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেও ৬ রানের আক্ষেপে পুড়তে হয় তাকে। শারমিন না পারলেও ঠিকই সেঞ্চুরি করেছেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। বাংলাদেশের অধিনায়কের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ২৭১ রানের পুঁজি পায় টাইগ্রেসরা। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের মেয়েদের সর্বোচ্চ পুঁজিও এটি।
রিতুর ব্যাটে বাংলাদেশের রেকর্ড গড়া জয়
১৩ এপ্রিল ২৫
জ্যোতি, ফারজানা, শারমিনের এমন ব্যাটিংয়ের দিনে বাংলাদেশের জেতার জন্য বাকি কাজটা সেরেছেন ফাহিমা খাতুন ও জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা। বাংলাদেশের দুই স্পিনারের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি থাইল্যান্ডের ব্যাটাররা। তাদের দুজনের ঘূর্ণিতে মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় তারা। বাংলাদেশের হয়ে পাঁচটি করে উইকেট নিয়েছেন ফাহিমা ও জান্নাতুল সুমনা। নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে ১৭৮ রানের জয়। ওয়ানডে ক্রিকেটে যা বাংলাদেশের মেয়েদের সবচেয়ে বেশি রানে জয়ের রেকর্ড।
লাহোরে সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মাঠে জয়ের জন্য ২৭১ রান তাড়ায় শুরুই পেয়েছিলেন থাইল্যান্ডের দুই ওপেনার নাত্তায়া বুচাথাম ও চানিডা সুত্তিরুয়াং। উদ্বোধনী জুটিতে তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৩৮ রান। বোলিংয়ে এসে সেই জুটি ভাঙেন ফাহিমা। ডানহাতি লেগ স্পিনারের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ২২ রান করা সুত্তিরুয়াং। আরেক ওপেনার বুচাথামকে লেগ বিফোর উইকেট করেছেন ফাহিমা। তিনি আউট হয়েছেন ১৭ রানে। তিনে নামা নান্নাপাট কনচারোয়েনকিকের উইকেটও নিয়েছেন ডানহাতি এই স্পিনার।
ফাহিমা টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেয়ার পর মিডল অর্ডারে ধস নামান জান্নাতুল সুমনা। ২০১৮ সালের পর বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে খেলতে নামা ডানহাতি স্পিনার ৫ ওভারে ৭ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। যেখানে তিনটি মেডেন ওভারও নিয়েছেন তিনি। আরেক স্পিনার ফাহিমা ৮.৫ ওভারে ২১ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে ৪৫ ম্যাচ খেলা ফাহিমা প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ৫ উইকেট পেয়েছেন। তাদের দুজনের এমন বোলিংয়েই মাত্র ৯৩ রানে অল আউট হয়েছে থাইল্যান্ডে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটিই তাদের সর্বনিম্ন স্কোর।

টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের মেয়েদের। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই ফেরেন ইশমা তানজিম। তবে দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ে তোলেন ফারজানা ও শারমিন। শুরুর ধাক্কা সামলে দুজনে মিলে ১০৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন। ৭৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা ফারজানা ফিরলে ভাঙে তাদের জুটি। ডানহাতি ওপেনার আউট হয়েছেন ৮২ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলে। ফারজানা ফেরার কিছুক্ষণ পর হাফ সেঞ্চুরি করেছেন শারমিন।
আগামী মাসে বাংলাদেশে আসছে সাউথ আফ্রিকার মেয়েরা
১৪ এপ্রিল ২৫
ডানহাতি ব্যাটারকে দারুণভাবে সঙ্গ দিতে থাকেন জ্যোতিও। এদিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করতে থাকেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। যদিও হাফ সেঞ্চুরি পেতে ৪৫ বল খেলতে হয়েছে ডানহাতি ব্যাটারকে। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর রান তোলার গতি আরও বাড়িয়ে দেন তিনি। শেষ ওভারে চার মেরে ৭৮ বলে সেঞ্চুরি করেন জ্যোতি। মেয়েদের ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড এটি। এর আগে ১৫৬ বলে সেঞ্চুরি করে সবার উপরে ছিলেন ফারজানা।
বাংলাদেশের অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত ১৫ চার ও এক ছক্কায় ৮০ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন। ডানহাতি ব্যাটারের বিদায়ে ভাঙে ১৫২ রানের জুটি। বাংলাদেশের ওয়ানডেতে একই ম্যাচে দুটি শত রানের জুটির ঘটনা এবারই প্রথম। এদিকে জ্যোতি ফিরলেও শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন শারমিন। ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়া ডানহাতি ব্যাটার খেলেছেন ১২৬ বলে অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংস। কয়েক মাসে আগেও নব্বইয়ের ঘরে আটকে পড়েছিলেন শারমিন। তাদের ব্যাটেই নিজেদের সর্বোচ্চ ২৫২ রানের পুঁজিকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের মেয়েরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল- ২৭১/৩ (৫০ ওভার) (ফারজানা ৫৩, ইশমা ৮, শারমিন ৯৪*, জ্যোতি ১০১; মায়া ১/২৮)
থাইল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল- ৯৩/১০ (২৮.৫ ওভার) (সুত্তিরুয়াং ২২, বুচাথাম ১৭; জান্নাতুল সুমনা ৫/৭, ফাহিমা ৫/২১)