শরিফুল ইসলামঃ এক বিস্ময়কর তরুণ প্রতিভা

ছবি:

পঞ্চগড়ের এক তরুণ পেসার ঢাকার ক্রিকেট মাতাচ্ছেন। বয়স প্রায় ১৭, এরই মধ্যে খেলে ফেলেছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মর্যাদার আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ। সাধারণত যারা প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ পান তাদের অনেকেরই প্রথম অথবা দ্বিতীয় বিভাগে খেলার অভিজ্ঞতা থাকে।
কিন্তু এক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম এই তরুণ। কেননা প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বিভাগে খেলার কোনো প্রকার অভিজ্ঞতা ছাড়াই এবারের টুর্নামেন্টে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলছেন তিনি। নাম শরিফুল ইসলাম। উচ্চতা ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি। পঞ্চগড়ের কালীগঞ্জ টেকনিক্যাল কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র।
তবে এসব পরিচয় এখন আড়ালে চলে গেছে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে আট ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন এই পেসার। এই পারফরমেন্সই তাকে সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে খেলার। এখানেও বল হাতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন।
বিসিএলে এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচ খেলে দখল করেছেন ৯ টি উইকেট, এক ম্যাচেই সাতটি উইকেট দখল করেছেন তিনি। তার আগে এবারের জাতীয় লিগেও রাজশাহীর হয়ে খেলেছেন চার ম্যাচ, অর্জন ২৪.৫৪ গড়ে ১১ উইকেট। বাংলাদেশের ঘরয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার জহুরুল ইসলামের অনুরোধেই জাতীয় লীগে সুযোগ হয়েছিল শরিফুলের।

প্রিমিয়ার লীগে নিজের দলে টানতে চেয়েও এই পেসারকে পাননি জহুরুল। তবে, শরিফুলের বোলিং কারিশমায় মুগ্ধতা কমেনি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের, ‘এর আগে তৃতীয় বিভাগ ছাড়া ও কোথাও খেলেনি। ওকে নেটে দেখে আমি অনুরোধ করে জাতীয় লিগের দলে নিই। খুব ভালো বল করল। প্রিমিয়ার লিগেও আমি তাকে আমার দলে (গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স) নিতে চেয়েছিলাম। পরে প্রাইম ব্যাংকে খেলে।’
তৃতীয় বিভাগ থেকে সরাসরি জাতীয় লিগে খেলার ঘটনা বিরলই বলতে হবে। বিসিবির নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে প্রথম বিভাগের খেলোয়াড় না হলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলা যায় না। শরীফুলকে সুযোগ পাইয়ে দেয়ায় সেই সময় অনেক সমালোচনায়ও পরতে হয়েছে জহুরুলকে। তবে বল হাতে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেই সবার মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন এই পেসার। শরীফুলের বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র গতি।
তবে বাউন্সের সাথে এই বয়সেই রপ্ত করে নিয়েছেন কাটার। নিজের বোলিং প্রসঙ্গে শরিফুল জানিয়েছেন, ‘চার দিনের খেলায় বেশি বোলিং করা যায়। বেশি বোলিং মানে বেশি মজা। খুব মজা লাগছে বিসিএলে খেলতে। ব্যাটসম্যানের সামনে বল ফেলে সুইং করাতে, বাউন্স দিতে ভালো লাগে আমার। এক দিনের খেলায় কাটারও মারি। তবে আমার বেশি ভালো লাইন-লেংথ।’
এই তরুণে অনেক সম্ভাবনা থাকলেও, শরিফুলের কিছু সমস্যা আছে রানআপে। বিসিএলে শরীফুলের বোলিং কোচ মাহবুব আলী জাকি। তিনি জানিয়েছেন প্রতিটি বলে ভিন্ন ছন্দ আনতে গিয়েই এই সমস্যায় পড়েন শরিফুল, ‘ওর ছয়টা বলের রানআপ অনেক সময় ছয় রকমও হয়। ও কী বল করবে, সেটার ওপর রানআপ নির্ভর করে। সে জন্যই কখনো কখনো মেলাতে পারে না।’
এই তরুণ পেসারকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছেন কোচ। ভবিষ্যতে যুব দলের স্ট্রাইক বোলার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি, ‘সুযোগ পেলে পরবর্তী অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সে-ই হতে পারে আমাদের মূল স্ট্রাইক বোলার। ছেলেটার মধ্যে পেস বোলারসুলভ আক্রমণাত্মক মানসিকতা আছে।’