সাফল্যের কোনো শর্ট কাট হয় নাঃ ওয়ালশ

ছবি:

বল টেম্পারিং ইস্যুতে চারদিকেই চলছে সমালোচনার ঝড়। এই বিতর্কে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। দায়িত্ব ছেড়েছেন সহ অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারও। পদত্যাগ করতে পারেন কোচ ড্যারেন লেম্যানও। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা। তাদেরই একজন বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ।
এই ঘটনায় ভীষণ ভাবে মর্মাহত টাইগার কোচ। সাবেক এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ভুলেও ভাবতে পারেননি এমন কিছু ক্রিকেটে ঘটতে পারে। প্রথমে এই ঘটনার কথা শুনে তিনি বিশ্বাসই করতে চাইছিলেন না। পরে ভিডিও ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে ওয়ালশ বলেছেন, "আমি শোকাহত। যখন জানলাম এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে, বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। তার পরে ফুটেজটাও দেখলাম। বিস্ময়কর! দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি, ক্রিকেটে এ রকম কিছু কখনও দেখতে হবে।"
কোনো খেলাতেই এই ধরণের ঘটনার জায়গা নেই বলে জানিয়েছেন ওয়ালশ। তিনি নিজেই ‘জেন্টলম্যান্স গেম’-এর পতাকাবাহী। বল হাতে ব্যাটসম্যানদের প্রতি আগ্রাসী হয়েও ক্রিকেটের স্পিরিটকে সবসময় এগিয়ে রেখেছেন সব কিছু থেকে। পাকিস্তানে বিশ্বকাপের ম্যাচে নন-স্ট্রাইকার প্রান্ত ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া সেলিম জাফরকে আউট না করে একটি ম্যাচ হারারও স্মৃতি আছে ওয়ালশের।

সেই ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ক্যারিবিয়ান বলেছেন সবসময় সঠিক মনোভাব ও সঠিক পথেই জেতার চেষ্টা করেছেন তিনি। প্রতারণা করে জেতার চেয়ে মাথা উঁচু করে হারা অনেক সুখের বলে বিশ্বাস তার। ওয়ালশের ভাষ্যমতে, "ক্রিকেট কেন, কোনও খেলাতেই এই ধরনের ঘটনার কোনও জায়গাই নেই। আমি সব সময়েই ‘স্পিরিট অব দ্য গেম’-এ বিশ্বাস করে এসেছি।
অবশ্যই জিততে চাই। কিন্তু সঠিক মনোভাব, সঠিক পথে জিতব— এই ছিল আমার ক্রিকেট মন্ত্র। এই মন্ত্রেই আমাকে বড় করা হয়েছিল। কোনও দিন এর অন্যথা করার কথা ভাবিইনি। প্রতারণা করে জেতাটা আবার জেতা নাকি? তার চেয়ে মাথা উঁচু করে হার সহ্য করা অনেক সুখের। বল বিকৃতির ঘটনা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। আশা করব, এ জিনিস শেষ বার দেখলাম। যেন আর কখনও না ঘটে।"
এই প্রতারণাগুলো কোনো ভাবেই ক্রিকেটের সাথে যায়না বলে মনে করেন ওয়ালশ, "রিভার্স সুইং করাতে বলের একটা দিক ভারী করে তুলতে হয়। সেটার জন্য থুতু বা আঠালো কিছু লাগানো প্রয়োজন। এই বিশেষ ধরনের সুইংয়ের জন্য বলটাকে তৈরি করতে হয়। কারও নাম করতে চাই না। তবে আমরা খেলার সময়েও শুনেছি যে, লোশন বা স্কিনক্রিম ব্যবহার করা হচ্ছে বলকে তৈরি করার জন্য।
জানতাম, অনেকেই সানস্ক্রিন বা স্কিনক্রিম ব্যবহার করছে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। মুখ থেকে ক্রিম বলেও লাগানো হচ্ছে, অনেকেই এমন কথা বলত। এখন তো দেখছি, বাইরে থেকে অন্য দ্রব্য নিয়েও মাঠে ঢুকছে ক্রিকেটারেরা বল বিকৃতি ঘটাবে বলে। সেটা দিয়ে বলের আকৃতি নষ্টও করে ফেলা হচ্ছে। কত রকম সব হাতিয়ারের কথাই তো শুনছি। এটা নিশ্চয়ই ক্রিকেট নয়।"
বল বিকৃতি না ঘটিয়েও সুইং করানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন ওয়ালশ। ওয়ালশ মনে করিয়ে দিয়েছেন সাফল্যের কোনো শর্টকাট হয় না। রিভার্স সুইংকে ক্রিকেটে দরকার বলে মানলেও, বল বিকৃতির অপরাধকে পরিত্যজ্য করা উচিত বলে মনে করেন ওয়ালশ, "এটা একটা বিশেষ ধরনের স্কিল। আয়ত্তে আনতে পারলে দারুণ অস্ত্র।
তার জন্য বল বিকৃতি ঘটাতেই হবে, কে বলল! সমস্যাটা হচ্ছে, বলটাকে তৈরি করতে গিয়ে অনেক সময় অন্যায় পথ ধরা হয়। শর্ট-কার্ট রাস্তা। ওদের বোধ হয় পুরনো কথাটা মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার পড়েছে যে, সাফল্যের কোনও শর্ট-কার্ট হয় না। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। রিভার্স সুইংকে ক্রিকেটের দরকার, বল বিকৃতির অপরাধকে নয়।"