শেষ ওভারের নাটকীয়তায় মাশরাফিদের হারালো দোলেশ্বর

ছবি:

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে আজ মুখোমুখি হয়েছিলো আবাহনী লিমিটেড এবং প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব। আর এই ম্যাচে মাত্র ৩ রানে আবাহনীকে হারিয়ে রুদ্ধশ্বাস এক জয় তুলে নিয়েছে ফরহাদ রেজার নেতৃত্বাধীন প্রাইম দোলেশ্বর।
এদিন শুরুতে টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৩২ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলো প্রাইম দোলেশ্বর। জবাবে অধিনায়ক নাসির হোসেন এবং মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিথুন হাফসেঞ্চুরি হাঁকালেও আরাফাত সানি এবং ফরহাদ রেজার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২২৯ রানে অলআউট হয়ে যায় আবাহনী।
ফলে ৩ রানের শ্বাসরুদ্ধকর এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে দোলেশ্বর। ইনিংসের শেষ দুই বলে চার রান দরকার ছিলো আবাহনীর। হাতে ছিলো মাত্র একটি উইকেট। কিন্তু দুর্দান্ত একটি বলে আরিফুল ইসলাম সবুজকে উইকেট রক্ষক আবু সায়েমের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সর্বশেষ উইকেটটি তুলে নেন আরাফাত সানি।
এর আগে এই ম্যাচেও গত ম্যাচের মতো বল হাতে অসাধারণ পারফর্ম করেছিলেন আবাহনীর পেস তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজা। অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে গত ম্যাচে ৪ বলে ৪ উইকেট নিয়ে ইতিহাস রচনা করা মাশরাফি আজ ২ উইকেট শিকার করলেও যথারীতি দারুণ মিতব্যয়ী ছিলেন তিনি। ১০ ওভারে মাত্র ৩৬ রান দিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
আর মাশরাফির দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রথমে টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৩২ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় প্রাইম দোলেশ্বর। মাশরাফি ছাড়াও ৪৪ রানে ৪ উইকেট শিকার করেছেন আবাহনীর ভারতীয় রিক্রুট মানান শর্মা। এছাড়াও আরিফুল ইসলাম সবুজ ২৯ রানে নিয়েছেন ২টি উইকেট।
দোলেশ্বরের ছুঁড়ে দেয়া ২৩৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়তে হয়েছিলো আবাহনীকে। ২১ রানের মাথায় ওপেনার সাইফ হাসানকে (৬) বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান জোয়েইব খান। এরপর তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট ভেঙ্গে দিয়ে নাসিরদের বিপদে ফেলেন শরীফুল্লাহ।

তবে শান্ত ফিরে যাওয়ার পর আনামুল হক বিজয় এবং অধিনায়ক নাসির হোসেনের ব্যাটে বিপদ কাটিয়ে উঠতে থাকে আবাহনী। এই দুই ব্যাটসম্যান ৫২ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু ৭৮ রানের সময় বিজয়কে (৩৪) মার্শাল আইয়ুবের হাতে ক্যাচ বানান দোলেশ্বর অধিনায়ক ফরহাদ রেজা।
এরপরেই মূলত ভাঙ্গনের শুরু হয় আবাহনীর শিবিরে। দলের রান ২০০ পার হওয়ার আগেই ৮ উইকেট হারিয়ে বসে দলটি। মাঝে মোহাম্মদ মিথুন এবং অধিনায়ক নাসিরের জোড়া হাফসেঞ্চুরি জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলো আবাহনীর। ৫৩ রান করে নাসির ফিরে গেলেও উইকেটে আশার প্রতীক হয়ে টিকে ছিলেন মিথুন।
কিন্তু ৬০ রান করে তিনিও ফরহাদ রেজার শিকার হয়ে ফিরে গেলে জয়ের আশা অনেকটাই ম্লান হয়ে যায় আবাহনীর। তবুও শেষের দিকে আরিফুল ইসলাম সবুজের ২১ রানের ইনিংসটিতে আবারো জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলো মাশরাফিদের দল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলীয় ২২৯ রানের মাথায় সবুজকে ফিরিয়ে দিয়ে আবাহনীর কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন ফরহাদ রেজা।এদিন ম্যাচের শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিলো ফরহাদ রেজার প্রাইম দোলেশ্বর দলটি।
দোলেশ্বর শিবিরে প্রথম আঘাত হানার কাজটি করেছিলেন আরিফুল ইসলাম সবুজ। প্রতিপক্ষ দলের দুই ওপেনার আবু সায়েম এবং ইমতিয়াজ হোসেনকে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। ৩৩ রানের মাথায় ২ ওপেনারকে হারিয়ে ফেলা দোলেশ্বরকে দশম ওভারে এসে আরো বিপদে ফেলে দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
মার্শাল আইয়ুবকে সাইফ হাসানের হাতে ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন তিনি। তবে মার্শাল আউট হলেও পরবর্তীতে ফজলে মাহমুদ এবং ফরহাদ হোসেনের জোড়া অর্ধশতকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো প্রাইম দোলেশ্বর। দলীয় ১৭১ রানের মাথায় মাহমুদকে (৬৮) ফিরিয়ে দিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন সন্দ্বীপ রয়।
আর মাহমুদ ফিরলে টিকতে পারেননি আরেক হাফসেঞ্চুরিয়ান ফরহাদও। ৬৩ রান করে মানান শর্মার বলে বোল্ড হন তিনি। পরবর্তীতে অধিনায়ক ফরহাদ রেজার ২৮ রান ছাড়া আর কেউ সেভাবে রান করতে পারেননি। ফরহাদকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করে মাশরাফি ফিরিয়ে দিলে ৯ উইকেটে ২৩২ রানে থামে প্রাইম দোলেশ্বরের ইনিংস।
প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব-
ইমতিয়াজ হোসেন, আবু সায়েম, ফজলে মাহমুদ, মার্শাল আইয়ুব, ফরহাদ হোসেন, ফরহাদ রেজা (অধিনায়ক), জোয়েইব খান, শরীফুল্লাহ, শাহানুর রহমান, আরাফাত সানি, মামুন হোসেন
আবাহনী লিমিটেড-
আনামুল হক, সাইফ হাসান, নাজমুল হাসান শান্ত, নাসির হোসেন (অধিনায়ক), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিথুন, মাশরাফি বিন মর্তুজা, আরিফুল ইসলাম সবুজ, মানান শর্মা, সানজামুল ইসলাম, সন্দ্বীপ রয়।