মুদ্রার এক পিঠে মুরলী, আরেক পিঠে হেরাথ

ছবি:

শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তীতুল্য বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ। রঙিন পোষাক তুলে রেখেছেন আজ অনেকদিন হলো। তবে, সাদা পোষাকে এখনও তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারফরমেন্স করছেন।
প্রথম বাঁহাতি হিসেবে ইনিংসে ৯ উইকেট, টেস্ট হ্যাটট্রিক, প্রতিটি দেশের বিপক্ষে ৫ উইকেট, চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট সহ আরও অনেক রেকর্ডে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
হেরাথ সম্প্রতি একান্ত এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন 'বিডিনিউজ২৪.কমের' সাথে। সেখানে বিভিন্ন প্রসঙ্গে উঠে এসেছে বাংলাদেশের সঙ্গে তার স্মৃতি ও বিভিন্ন অভিজ্ঞতা।
হেরাথ কদিন আগেই বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন লঙ্কানদের হয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ খেলতে। বল হাতে এবারও ভেলকি দেখিয়েছেন এই স্পিনার। বাংলাদেশ সফর শেষে নিজের মতো সময় কাটাচ্ছেন তিনি। মাঝে মাঝে অনুশীলনে একটু আধটু সময় দিচ্ছেন।
সামনেই ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ তাই নিজেকে প্রস্তুত করছেন তিনি। হেরাথ জানিয়েছেন, "এই যে, আজকে যেমন অনুশীলন করলাম, এভাবেই চলছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয়ে গেল। আমি তো এখন আর খেলি না এসব। সামনে ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ আছে, সেটির জন্যই নিজেকে প্রস্তুত রাখছি।"

হেরাথের ক্যারিয়ারের সাফল্যমধয় অধ্যায়ের শুরু আসলে মুরালিধরন অবসর নেওয়ার একটু আগে থেকেই। তবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তিনি প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে ১৬ রানে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন। তবে মূল ম্যাচে বল হাতে ব্যর্থ ছিলেন তিনি। ফলে বাদ পড়েছিলেন দল থেকে। তবে সাঙ্গাকারার একটি ফোন কলেই হেরাথের ক্যারিয়ার ঘুরে যায়।
এই প্রসঙ্গে হেরাথ বলেন, "তার কয়েক মাস আগে বাংলাদেশে গিয়ে একটি টেস্টে ভালো করতে পারেনি। বাদ পড়েছিলাম। ২০০৯ সালের ইংলিশ গ্রীষ্মে আমি গিয়েছিলাম ইংল্যান্ডে ক্লাব ক্রিকেট খেলতে। হঠাৎ সাঙ্গার (কুমার সাঙ্গাকারা) ফোন পেলাম। জানাল যে মুরালির চোট, আমি খেলার মত ফিট কিনা। আমি বলেছিলাম, ‘অবশ্যই।’
তাড়াহুড়ো করে অনেক চেষ্টায় পরের ফ্লাইট ধরে চলে আসি। প্রথম ইনিংসে খুব ভালো করতে পারিনি। শেষ ইনিংসে পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল ১৬৮। আমি ভেবেছিলাম আমরা পারব না। নিজেকে নিয়েও একটু হতাশ ছিলাম যে ভালো করতে পারব না। তখন চন্দিকা (হাথুরুসিংহে, তখনকার সহকারী কোচ) দারুণ উৎসাহ দিয়েছিল। বলেছিল যে আমাকে দিয়েই সম্ভব। আমি ৪ উইকেট নিলfম, আমরা ৫০ রানে জিতলাম।"
নিজের ক্যারিয়ারের স্মরণীয় পারফরমেন্সগুলো ঘাটতে গিয়ে হেরাথের কথায় উঠে এসেছে চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে ৪ উইকেট তুলে নেয়া পারফরমেন্সটিও। হেরাথ মনে করেন দলের জয়ে অবদান রাখা প্রতিটি পারফরমেন্সই তার কাছে স্পেশাল।
হেরাথ বলেছেন, "ওই ৯ উইকেট (পাকিস্তানের বিপক্ষে) অবশ্যই স্মরণীয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ (২০১১ সালে ডারবানে), ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয় (২০১৪) ভোলার নয় কখনোই। গলে ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেটও স্মরণীয় (৭/৪৮, ২০১৫ সালে), কারণ ভারতীয়রা স্পিন সবসময়ই ভালো খেলে। এমনকি বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ টেস্টে ৪ উইকেট, দলের জয়ে অবদান রাখা এ রকম প্রতিটি টেস্টই আমার কাছে স্পেশাল।"
বাংলাদেশের মাটিতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আরেকটি পারফরমেন্স হেরাথ চাইলেও ভুলতে পারবেন না। তা হলো ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ রানে ৫ উইকেট! এর সাথে দুটি রান আউটও করেছিলেন তিনি। একথা হেরাথই মনে করিয়ে দিয়েছেন।
"সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সেটিই আমার সেরা সাফল্য, মনে তো থাকবেই। আমরা খুব কম রান করেছিলাম (১১৯), জিতে তাই দারুণ কিছুর দরকার ছিল। গাপটিলকে আমি রান আউট করলাম, এরপর থেকেই খেলার মোড় পাল্টে গেল।
৫ উইকেটের সঙ্গে দুটি রান আউটও করেছিলাম। শুধু ওই ম্যাচ নয়, বিশ্বকাপ জয়টাও ছিল বিশেষ কিছু। সাঙ্গা, মাহেলা (জয়াবর্ধনে), লাসিথ (মালিঙ্গা), আমাদের প্রজন্মের সবাই একটি বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া ছিলাম। বাংলাদেশ তাই সবার হৃদয়েই আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে।"