promotional_ad

দুঃস্বপ্নের শুরুর পর লিটন-মিরাজে বাংলাদেশের স্বপ্নময় দিন

promotional_ad

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||


সকালের সূর্য দেখলে বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। সকালের সূর্য ঝকঝকে হলে আলোকিত দিন আর মেঘে ঢাকা হলে অনুজ্জ্বল। চিরাচিত কথা অনুযায়ী এমনটাই হওয়ার কথা। তবে রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হলো একেবোরে উল্টো। খুররম শেহজাদ ও মীর হামজার পেসের সামনে বাংলাদেশের সকালের শুরুটা হলো দুঃস্বপ্নের মতো। বিনা উইকেটে ১০ রান নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ ২৬ রান তুলতেই হারায় ৬ উইকেট। পাকিস্তানের পেসারদের সামনে ঘোল খেয়ে একে একে সাজঘরের পথ ধরেন জাকির হাসান, সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। ফলো-অন এড়াতে আরও কত রান দরকার সেটা ভেবেই হয়ত মাথার ঘাম ছুঁটছিল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজেমেন্টের।


এমন এক সময় সফরকারীদের সামনে মিরাকল ছাড়া অসম্ভবপর হয়ে ‍উঠেছিল রাওয়ালপিন্ডিতে টিকে থাকা। সেটা মিরাকলই যেন করে দেখালেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে থাকার সঙ্গে দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে দুজনে মিলে গড়লেন ১৬৫ রানের জুটি। বিপদ কাটানো ইনিংস খেলা মিরাজ ৭৮ রানে ফিরলেও লিটন থামেননি সেঞ্চুরির আগে। হাসান মাহমুদের সঙ্গে পঞ্চাশ পেরোনো জুটি গড়ে লিটন তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরিও। অনিন্দ্য সুন্দর এক ইনিংস খেলা লিটন শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন ১৩৮ রানে। বাংলাদেশ ২৬২ রানে অল আউট হতেই ১২ রানের লিড পায় পাকিস্তান। শেষ বিকেলে আব্দুল্লাহ শফিক ও শেহজাদকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের দিনটা আরও রঙিন করে দিয়েছেন হাসান। তাতে দুঃস্বপ্নের মতো সকালের শুরু করা টাইগাররা দিন শেষ করেছে স্বপ্নের মতো করে।


রাওয়ালপিন্ডিতে বিনা উইকেটে ১০ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। দ্বিতীয় দিনের সঙ্গে ৪ রান যোগ করতেই সাজঘরে ফেরেন জাকির। খুররম শেহজাদের লেংথ ডেলিভারিতে স্কয়ার লেগ দিয়ে খেলতে গিয়ে আবরার আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে গেছেন। যদিও আগেই ফিরতে পারতেন বাঁহাতি এই ওপেনার। আগের ওভারে মীর হামজার ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ফিরতে পারতেন লেগ সাইডে ফিল্ডিং করতে থাকা আবরারের হাতে ক্যাচ দিয়ে। পুরোপুরি ক্যাচ লুফে নিতে না পারার পরও আবেদন করেন আবরার। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল আবরারের হাতে যাওয়ার আগে মাটি ছুঁয়ে গেছে।


এমন কাণ্ড দেখে ধারাভাষ্য কক্ষে থাকা উরোজ মুমতাজ বলেন, ‘আবরারের লেন্স পরিবর্তন করা প্রয়োজন।’ আরেক ওপেনার সাদমানও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ইনিংসের প্রথম বলেই মীর হামজার দারুণ এক ডেলিভারিতে জীবন পেয়েছিলেন। তবে আগের দিনে পাওয়া সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি একদমই। শেহজাদের লেগ স্টাম্পের পড়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে পায়ের পেছন দিক দিয়ে বোল্ড হয়েছেন সাদমান। বাংলাদেশের ওপেনারকে ফিরতে হয় ১০ রানে। একই ওভারের চতুর্থ বলে নাজমুল হোসেন শান্তকেও ফিরিয়েছেন শেহজাদ।


ডানহাতি পেসারের মিডল এবং লেগ স্টাম্পে করা ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন শান্ত। তবে ব্যাটে-বলে করতে না পেরে বোল্ড হয়ে ফিরে গেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। প্রথম টেস্টে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়া বাঁহাতি ব্যাটার এবার ফিরেছেন ৪ রানে। সফরকারীদের বিপদ বাড়িয়েছেন মুমিনুল হক। ইনিংসের নবম ওভারে মীর হামজার প্যাডের উপর করা ফুল ডেলিভারিতে মিড অনে খেলতে চেয়েছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। তবে মোহাম্মদ আলীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় ১ রান করা মুমিনুলকে।



promotional_ad

পাকিস্তানের পেসারদের যেন সামলেই উঠতে পারছিলেন না বাংলাদেশের ব্যাটাররা। শান্ত ও মুমিনুলের বিদায়ের পর সাজঘরের পথে হেঁটেছেন মুশফিকুর রহিমও। মীর হামজার ব্যাক অব লেংথে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। পরের ওভারে ফিরে গেছেন সাকিব আল হাসানও। শেহজাদের গুড লেংথ ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন তিনি। সাকিব ফিরে বাংলাদেশের ব্যর্থতার শেষ পেরেকটা মেরে গেছেন। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তখন একশর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়।


এমন সময় বাংলাদেশের হাল ধরেছেন মিরাজ ও লিটন। একটু একটু করে সফরকারীদের বিপদ কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকেই অনেকটা ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করছিলেন তারা দুজন। লাঞ্চ থেকে ফেরার পরই জুটির পঞ্চাশ পূর্ণ করেছেন। সেই সঙ্গে লাঞ্চের পর দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন বাংলাদেশের এই দুই ব্যাটার। যেখানে শেহজাদের এক ওভারে এসেছে ১৭ রান। বিপদ কাটানো শতরানের জুটিতে ফলো-অনও এড়ান লিটন ও মিরাজ। মাটি কামড়ে থাকা ইনিংসে ৮২ বলে লিটন ছুঁয়েছেন পঞ্চাশও। আরেক ব্যাটার মিরাজ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৮১ বলে। তাতে টানা তিন ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মিরাজ।


এদিন বিশ্বের চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে ৩০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর আটে নেমে পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন তিনি। ব্যক্তিগত রেকর্ডের পাশাপাশি রেকর্ড হয়েছে জুটিতেও। টেস্ট ক্রিকেটে পঞ্চাশের আগে ৬ উইকেট হারানোর পর সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েছেন তারা দুজন। এমন কীর্তির পরও সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া হয়নি মিরাজের। শেহজাদের স্লোয়ার ডেলিভারিতে স্ট্রেইট ড্রাইভ করতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ৭৮ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলা মিরাজের বিদায়ে ভাঙে লিটনের সঙ্গে ১৬৫ রানের জুটি। মিরাজকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট তুলে নেন শেহজাদ। এদিকে চা-বিরতিতে যাওয়ার আগে তাসকিন আহমদকেও হারায় বাংলাদেশ। চা-বিরতি থেকে ফিরে হাসানকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন লিটন।


৮ উইকেটে হারানোয় অনেকটা দেখেশুনে খেলছিলেন তিনি। পাশাপাশি লিটনকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন হাসান নিজেও। ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেয়ার সঙ্গে দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে লিটন করেছেন সেঞ্চুরিও। আবরারের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে কাট করে থার্ডম্যান দিয়ে চার মেরে ১৭২ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে যা দ্বিতীয়। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে একাধিক সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন ডানহাতি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। এ ছাড়া দলের রান পঞ্চাশের চেয়ে কম থাকা অবস্থায় পাঁচের পরে নেমে বিশ্বের প্রথম ব্যাটার হিসেবে তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন লিটন।


আগের দুটি পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেঞ্চুরির পর লিডের আশায় দ্রুত রান তুলতে থাকেন তিনি। তবে সালমান আলী আঘাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় লিটনকে। সালমানের বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাইম আইয়ুবের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। লং অন থেকে একটু ডানে গিয়ে সাইম ক্যাচ নিলে লিটনকে ফিরতে হয় ১৩৮ রানে। একই ওভারে আউট হয়েছেন নাহিদ রানাও। ৫১ বলে ১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন লিটনকে যোগ্য সঙ্গ দেয়া হাসান। বাংলাদেশে ২৬২ রানে অল আউট হলে প্রথম ইনিংসে ১২ রানের লিড পায় পাকিস্তান। স্বাগতিকদের হয়ে শেহজাদ ছয়টি, মীর হামজা ও সালমান নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।


শেষ বিকেলে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। তাসকিনের হাতে নতুন বল তুলে দেন অধিনায়ক শান্ত। প্রথম ওভারে বেশ কয়েকটি দারুণ ডেলিভারি করলেও উইকেট এনে দিতে পারেননি ডানহাতি এই পেসার। অন্যপ্রান্তে বোলিংয়ে এসেই নিজের প্রথম ওভারে আব্দুল্লাহ শফিককে আউট করেছেন হাসান। বাংলাদেশ পেসারের অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের গুড লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন শফিক। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে আসা শেহজাদকেও ফিরিয়েছেন হাসান। তরুণ এই পেসারের বলে বোল্ড হয়েছেন শেহজাদ। ৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করেছে পাকিস্তান।



সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে)-


পাকিস্তান (প্রথম ইনিংস)- ২৭৪/৮ (৮৫.১ ওভার) (আবদুল্লাহ ০, শান ৫৭, সাইম ৫৮, শাকিল ১৬, বাবর ৩১, রিজওয়ান ২৯, সালমান ৫৪; মিরাজ ৫/৬১, তাসকিন ৩/৫৭)


বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ২৬২/১০ (৭৮.৪ ওভার) (সাদমান ১০, জাকির ১, শান্ত ৪, মুমিনুল ১, মুশফিক ৩, সাকিব ২, লিটন ১৩৮, মিরাজ ৭৮, তাসকিন ০, হাসান ১৩*; শেহজাদ ৬/৯০)


পাকিস্তান (দ্বিতীয় ইনিংস): ৯/২ (৩.৪ ওভার) (শফিক৩. সাইম ৬*; হাসান ২/৩)



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball