শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে রংপুরের প্রতিশোধ

ছবি: ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম থেকে ||
ম্যাচ জেতার জন্য রংপুর রাইডার্সের তখন প্রয়োজন কেবলই ২ রান। হাতে ২ উইকেট থাকা রংপুরের বল ছিল তখনও ১১টি। এমন সময় কাইল মেয়ার্সের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কভারে থাকা রাকিবুল হাসানের হাতে ক্যাচ দিলেন আবু হায়দার রনি। রাকিবুল ক্যাচ নেয়ার পর যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন তিনি। আবু হায়দার ফেরার পর রংপুরের প্রয়োজন ছিল ১০ বলে ২ রান, হাতে ১ উইকেট। স্ট্রাইক প্রান্তে হাসান মাহমুদ থাকা ফরচুন বরিশালের ফিল্ডাররা রীতিমতো ঘিরে নিলেন। তবে দারুণভাবে সেই ওভারের চার বল কাটিয়ে দেন হাসান।
শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে এক রান নিয়ে স্কোর লেভেল করেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। এমন সময় সুপার ওভারের আশা জাগলেও চার মেরে রংপুরকে জেতান হাসান। তাতে করে বিপিএলের এবারের আসরে প্রথম দেখায় বরিশালের কাছে হারা রংপুর শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ জিতে প্রতিশোধ নিলো। বল হাতে রংপুরের জয়ের ভিতটা অবশ্য গড়ে দিয়েছিলেন আবু হায়দার। দারুণ বোলিংয়ে মাত্র ১২ রানে নেন ৫ উইকেট।
জয়ের জন্য ১৫২ রান তাড়ায় ব্রেন্ডন কিংয়ের ব্যাটে দারুণ শুরু করে রংপুর। প্রথম দুই ওভারে রংপুরকে ২১ রান এনে দেন তিনি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে গিয়ে নিজেদের প্রথম উইকেট হারায় তারা। কাইল মেয়ার্সের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন মুমিনুল হক।

লম্বা সময় পর বিপিএলে ফেরা বাঁহাতি এই ব্যাটার এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। মুমিনুল ফিরলেও থামানো যায়নি রংপুরের রানের গতি। কিংয়ের সঙ্গে বরিশালের বোলারদের ওপর রীতিমতো তাণ্ডব চালাতে থাকেন সাকিব আল হাসান। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগের বলে কিংকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের বলে স্টাম্পিং হয়েছেন ২২ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলা কিং।
এক ওভার বাদে সাকিবকেও ফিরিয়েছেন মিরাজ। দারুণ ছন্দে থাকা সাকিব লং অনের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে প্রীতম কুমারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। ঝড় তোলা সাকিব ফিরেছেন ১৫ বলে ২৯ রান করে। সেই সময় নুরুল হাসান সোহানকে ফিরিয়ে রংপুরকে চেপে ধরে বরিশাল। চাপটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন মিরাজ। ছন্দে থাকা শেখ মেহেদীকে আউট করেছেন তিনি।
হঠাৎ ছন্দপতনে ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে রংপুর। শুরুতে জিমি নিশামের উইকেটও তুলে নিতে পারতো বরিশাল। কিন্তু মিরাজের বলে ক্যাচ নিতে পারেননি প্রীতম। দলের ১২ ওভারের মাঝেই নিজের ৪ ওভার শেষ করেন মিরাজ। যেখানে ২৪ রান দিয়ে ডানহাতি এই অফ স্পিনার নিয়েছেন ৩ উইকেট। বিপর্যয় সামাল দেয়া টম মুরস আউট হয়েছেন ১৭ বরে ১৭ রান করে, ওবেদ ম্যাককয়ের বলে।
দারুণ ব্যাটিং করা নিশামকে ফেরালেও সেটা অনেকটা দেরি হয়ে যায়। ম্যাককয়ের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে মুশফিককে ক্যাচ দিয়েছেন। নিশাম সাজঘরে ফেরেন ১৭ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলে। ১৩ রান করা প্রিটোরিয়াসকে ফেরালেও জয় আটকানো যায়নি রংপুরের। শামীমকে সঙ্গে নিয়ে রংপুরের জয় নিশ্চিত করেন হাসান।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে তামিমের ব্যাটে দারুণ শুরু পেয়েছিল বরিশাল। ২০ বলে ৩৩ রান করে তামিম ফিরলেও বরিশালকে কাইল মেয়ার্সের ব্যাটে এগিয়ে যেতে থাকে তারা। গত ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়া মেয়ার্স এদিন করেছেন ২৭ বলে ৪৬ রান। এরপর আবু হায়দার রনির পেস বোলিংয়ে দাঁড়াতে পারেননি মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। তাতে ভালো শুরুর পরও ১৫১ রানের পুঁজি পায় বরিশাল। রংপুরের হয়ে ১২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন আবু হায়দার।