‘২২’ ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিতে মোড়ানো সিলেটের সবুজ জার্সি

ছবি: সবুজ রঙের জার্সিতে সিলেট স্ট্রাইর্সের ক্রিকেটাররা

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট, সিলেট থেকে ||
বিপিএলে শাস্তি পেয়ে ডিপিএলে ২ ম্যাচ নিষিদ্ধ সাকিব
৩১ জানুয়ারি ২৫
শীতের মৌসুম হলেও নেই কদিন আগের মতো সেই ঘন কুশায়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে অবশ্য রোদের তীব্রতা। যদিও রোদের সেই প্রখরতা এত বেশি নয়। গ্যালারিতে না দাঁড়ালেও দূর থেকে ব্যাট-বলের ঠুকঠাক শব্দ শুনে বুঝতে বাকি ছিল না সিলেটের দুই নম্বর গ্রাউন্ডে নিজেদের প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রিকেটাররা। সাত দলের বিপিএল হলেও সিলেটে অনুশীলনের জন্য মাঠ কেবলই একটা।
সেখানেই একসঙ্গে চলছে সিলেট স্ট্রাইকার্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুন বরিশালের অনুশীলন। মোহাম্মদ রিজওয়ান, বেন হাওয়েল, বেনি কাটিং থেকে শুরু করে দেশি তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমরা খানিকটা ব্যস্ত সময়ই পার করছেন। ক্যামেরার লেন্সও খুঁজে নিচ্ছে বিরতিতে দিয়ে। ক্যামেরার লেন্স যখন ক্রিকেটারদের দিকে তাক করানো তখন হুট করেই চোখ আটকে যায় সিলেটের ড্রেসিং রুমের দিকে। দূর থেকে অবশ্য বুঝে ওঠার খুব বেশি সুযোগ নেই।
তবুও খালি চোখে যতটুুকু বোঝা গেল জার্সিতে ভরা বস্তা নিয়ে কয়েকজন মিলে ড্রেসিং রুমে ঢুকছেন। সহকর্মীর ক্যামেরার লেন্স জুম করে অবশ্য খানিকটা স্পষ্ট হওয়া গেল। যেখানে বস্তায় করে সবুজ রঙের জার্সি নিয়ে এসেছেন তারা। সেটা দেখার পর অবশ্য বিষয়টি চমকে ওঠার মতোই। কারণ এবারের মৌসুমে গোলাপি ও কালো সংমিশ্রণে বানানো জার্সি পড়ে খেলছে সিলেট। স্বাভাবিকভাবে তাই মনের অজান্তেই প্রশ্ন জাগে হুট করেই সিলেটের ড্রেসিং রুমে কেন সবুজ রঙের জার্সি।

গত মৌসুমে দাপুটে পারফরম্যান্সে ফাইনাল খেলেছিল সিলেট। সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় সিলেট এবার যেন পথই খুঁজে পাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে সবকটিতেই হারতে হয়েছে তাদের। সিলেট পর্ব শেষের আগে বদল এসেছে নেতৃত্বেও। রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে বিপিএল থেকে মাশরাফি বিন মুর্তজা বিরতি নেয়ায় গত মৌসুমের রানার্স আপদের নেতা এখন মোহাম্মদ মিঠুন। অধিনায়কের বদলে সঙ্গে কি জার্সিও বদলে ফেলছে সিলেট? এমনটা ভাবা যেতেই পারে! তবে ঘটনা অবশ্য একেবারেই ভিন্ন।
বাংলাদেশের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল, মানছেন সালাহউদ্দিনও
২৬ ফেব্রুয়ারি ২৫
খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানা গেছে, সিলেট পর্বে নিজেদের সেই দুই ম্যাচে নিজেদের বিভাগের ইতিহাস-ঐতিহ্যের মিশেলের বানানো হয়েছে সবুজ রঙের জার্সি। যেখানে ফুটিয়ে তোলা হবে সিলেটের বিখ্যাত আলী আমজাদের ঘড়ির চিত্র। ১৮৭৪ সাল থেকে এখনও কিনব্রিজ পার হয়ে শহরের উত্তর অংশের ঠিক প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে আছে ঘড়িটি। বর্তমান জার্সির যেখানে গোলাপি রঙ আছে সেখানে থাকবে সিলেটের আদি ভাষা অর্থাৎ সিলেটি নাগরি ভাষার ব্যবহার। শহরটির বিভিন্ন স্থাপনাও ঠাঁই পাবে নতুন এই জার্সিতে।
শুধু তাই নয় সবুজে রঙের জার্সিতে সম্মান দেয়া হবে ভাষা শহীদদের। ফেব্রুয়ারিকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের ভাষার মাস। বাংলা ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে জীবন দেয়া শহীদদের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারিকে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। তাদের সম্মানার্থে সিলেটের জার্সির পেছনে বাংলা অক্ষরে লেখা থাকবে ক্রিকেটারদের নাম ও জার্সি নম্বর। সিলেট পর্বের শেষ দুটি ম্যাচেই এই জার্সি পড়ে খেলবেন নাজমুল হোসেন শান্ত, জাকির হাসানরা।
ফ্র্যাঞ্চাইজির এমন উদ্যোগে মুগ্ধ বেনি হাওয়েল। জার্সি দেখার পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন নিজেই। যদিও বাংলায় পড়তে জানেন না তেমন কিছুই। যে কারণে উচ্চারণ করে তাকে বারংবার বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন সিলেটের মিডিয়া বিভাগের সদস্যরা। এদিকে ভাষার মাসকে ফুটিয়ে তুলতে জার্সিতে বেশ কিছু শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিপিএলে এবারই প্রথম কোনো দলকে এমন কিছু করতে দেখা যাবে।
যদিও ফেব্রুয়ারি নিয়ে এর আগেও বিপিএলে দেখা গেছে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। সবশেষ মৌসুমে লিগ পর্বের শেষ দিনে ধারাভাষ্যকাররা মাঝে মাঝে বাংলা শব্দ ব্যবহার করেছেন। আতহার আলী, শামীম আশরাফ চৌধুরি, কার্টলি অ্যামব্রোসদের গায়ে ছিল কালো রঙের পাঞ্জাবি। সেখানেও ছিল বাংলা ভাষার ছোঁয়া। ক্রিকেটারদের বাহুবন্ধনীতে ছিল বাংলা ব্যঞ্জন ও স্বর বর্ণের ব্যবহার। এবার বিশেষ আয়োজনে নজর কাড়তে যাচ্ছে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন জার্সি বদলের সঙ্গে সিলেটের ভাগ্যও কি বদলাবে?