লিটন-মুস্তাফিজদের নিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপার লড়াইয়ে কুমিল্লা

ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বাংলাদেশের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল, মানছেন সালাহউদ্দিনও
২৬ ফেব্রুয়ারি ২৫
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই যেন চার-ছক্কার বৃষ্টি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসার পর জনপ্রিয়তা বেড়েছে ২০ ওভারের ক্রিকেটের। বিনোদনের খোরাক পেতে লিগগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন সমর্থকরা। ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) যাত্রা শুরু হলেও এখনও অন্য সবার মতো করে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে যেতে পারেনি। তবুও বিপিএলের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্দা উঠছে বিপিএলের ১০তম আসরের। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ক্রিকফ্রেঞ্জির আয়োজনে আপনাদের জানানো হবে কে কেমন দল সাজিয়েছে, শক্তিমত্তায় কারা এগিয়ে, কারাই বা পিছিয়ে। এবারের পর্বে থাকছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্যবচ্ছেদ।
বিপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম দল কুমিলা ভিক্টোরিয়ান্স। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ চারবার বিপিএলের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। বিপিএলের প্রতি আসরেই আলাদা আমেজ থাকে কুমিল্লাকে ঘিরে। দেশি-বিদেশি তারকা ক্রিকেটার থেকে শুরু করে মানসম্পন্ন কোচিং স্টাফ, উদীয়মান তরুণ ক্রিকেটার পর্যন্ত সবই থাকে এই দলে। বিশেষ করে গঠনমূলক পরিকল্পনার দিক থেকে কুমিল্লার মানের আরেকটি দল বিপিএলে খুঁজে পাওয়াই যেন অসম্ভব।
২০১৫ সালে মাশরাফি বিন মুর্তজার অধীনে প্রথমবারের মতো বিপিএল শিরোপা ছুঁয়ে দেখে কুমিল্লা। তারপর ২০১৮, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে আরও তিনবার শিরোপা জিতে দলটি। তিনবারই দলটির অধিনায়কত্ব করেন ইমরুল কায়েস। আর প্রতিটি শিরোপা জয়ের সময়ই দলটির হেড কোচ ছিলেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। দেশসেরা এই কোচ বরাবরের মতো এবারও থাকবেন কোনোবার ফাইনালে না হারা কুমিল্লার রণকৌশল সাজানোর দায়িত্বে।
দল হিসেবে বরাবরই বেশ বিচক্ষণ কুমিল্লা। এবারও সেই ধারা বজায় রেখেছে তারা। লিটন দাস, মুস্তাফিজুর রহমান, তানভীর ইসলাম, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সুনীল নারিনের মতো গতবারের পারফর্মারদের দলে ধরে রেখেছে তারা। অধিনায়ক ইমরুলকে অবশ্য ফ্র্যাঞ্চাইজিটি রিটেইন করেনি। এবারের ড্রাফট থেকে আবারও দলে ভিড়িয়েছে। এছাড়া মঈন আলী, আন্দ্রে রাসেল, জনসন চার্লস, রশিদ খানদের মতো পরীক্ষিতদের সরাসরি সাইনিংয়ে দলে নিয়েছে তারা।
ডিরেক্ট সাইনিংয়ের পাশাপাশি ড্রাফট থেকে জাকের আলী অনিক, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি, রিশাদ হোসেন, রাহকিম কর্নওয়াল, ম্যাথু ওয়াল্টারফোর্ট, মুশফিক হাসান, মোহাম্মদ এনামুল হক, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনদের মতো ক্রিকেটার দলে নিয়েছে তারা। এদের নিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপার মিশনে বেশ ভালোভাবেই আছে কুমিল্লা।

দেশীয় ক্রিকেটার এবং বিচক্ষণতাই কুমিল্লার শক্তি-
বিপিএলে কুমিল্লার মূল শক্তি দেশীয় ক্রিকেটাররাই। লিটন, মুস্তাফিজ, হৃদয়, তানভিররা পুরো আসর জুড়েই খেলবেন। আর এই পরিকল্পনাতেই অনন্য অবস্থানে চলে যেতে পারে কুমিল্লা। এদিকে এবার পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) শুরু হবে ১৭ ফেব্রুয়ারি। আর ১৯ জানুয়ারি থেকে চলবে আইএলটি-টোয়েন্টি। বড় দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ প্রায় একইসঙ্গে থাকায় পুরো আসর জুড়ে সেভাবে কোনো বিদেশি ক্রিকেটারদের পাবে না কুমিল্লা।
রিজওয়ান, ইফতিখার, জামান, নাসিম শাহ, খুশদিল শাহর মতো দলটিতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি ক্রিকেটার আছেন। আসরের অন্যান্য দলের এই দলের পাকিস্তানি ক্রিকেটাররাও ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিপিএল ছাড়বেন। সেই পর্যন্ত পাকিস্তানিদের খেলানোর সুযোগ আছে কুমিল্লার। দলটিতে যেহেতু পরীক্ষিত পাকিস্তানি পারফর্মারের সংখ্যা বেশি, সেক্ষেত্রে কিছুটা হলেও এর সুযোগ নিতে পারে তারা।
এদিকে পাকিস্তানিরা বিপিএল ছাড়ার পর ওদিক দিয়ে আইএলটি-টোয়েন্টি শেষ হবে। তখন কুমিল্লায় যোগ দেবে মঈন, রাসেল, নূর, রশিদের মতো ক্রিকেটাররা। রশিদ অবশ্য জাতীয় দলের সিরিজ শেষ করে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। পিএসএলে চলে যাওয়া এবং আইএলটি-টোয়েন্টি খেলে ফিরে আসা ক্রিকেটারদের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে দিতে দলে আসা যাওয়ার মাঝে থাকবেন জাকের আলী, মৃত্যুঞ্জয়, রিশাদ, মুশফিক, এনামুল এবং অঙ্কনরা। এ ছাড়া রাহকিম কর্নওয়াল, ম্যাথু ওয়াল্টারফোর্টের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই পাচ্ছে কুমিল্লা।
প্রত্যাশামতো পারফরম্যান্স না মিললেই বিপদ-
কুমিল্লা যেভাবে পরীক্ষিত ক্রিকেটারদের নিয়ে পরিকল্পনা করে এবং পুরো আসরজুড়ে খেলে যায়, তাতেই তারা সফল হয়। কিন্তু এর ব্র্যাতয় ঘটার সম্ভাবনাও থেকে যায়। যদি কুমিল্লার বিদেশি ক্রিকেটাররা আসরে থিতু হতে সময় নেয় বা সময়মত পারফরম্যান্স না করতে পারে- সেক্ষেত্রে দলটির বিপদে পড়ার একটি সম্ভাবনা থেকেই যায়।
গত আসরে শুরুটা ভালো করেনি কুমিল্লা। টানা তিন ম্যাচ হেরে আসর শুরু করলেও শেষদিকের মোমেন্টামে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় তারা। এবার যদি দলটি ভালো শুরু না পায়, সেক্ষেত্রে আসরের বাকিটা সময় আরও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে দলটির জন্য, যেহেতু দলটির বিদেশি ক্রিকেটাররা আসা-যাওয়ার মাঝেই আসরের সুনির্দিষ্ট কোনও সময়ে খেলবেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স-
রিটেইন- লিটন দাস, মুস্তাফিজুর রহমান, তানভীর ইসলাম, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সুনীল নারিন।
ডিরেক্ট সাইনিং- তাওহীদ হৃদয়, মঈন আলী, আন্দ্রে রাসেল, ইফতিখার আহমেদ, জামান খান, খুশদিল শাহ, জনসন চার্লস, নূর আহমেদ, নাসিম শাহ ও রশিদ খান।
ড্রাফট থেকে- জাকের আলী অনিক, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি, রিশাদ হোসেন, রাহকিম কর্নওয়াল, ম্যাথু ওয়াল্টারফোর্ট, ইমরুল কায়েস, মুশফিক হাসান, মোহাম্মদ এনামুল হক, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।