লেহম্যান, ‘চিটশিট’ এবং মার্ক ওয়াটের কলেজের হোম ওয়ার্ক

সংগৃহীত
promotional_ad

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||


আরো পড়ুন

স্কটল্যান্ডকে বিদায় করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখছে জার্সি

১১ জুলাই ২৫
জার্সি ক্রিকেট

‘২ ডি, ‘ডি ৫, এ২, সি৪, এবং ডি’ ক্রিস সিলভারউডের প্রচলিত কোডেড সিগন্যাল। খানিকটা দূর্বোধ্য হলেও বাংলাদেশের সমর্থকদের সঙ্গে কোডগুলোর চেনা-জানা থাকার কথা। এশিয়া কাপের খেলা দেখলে কিংবা খোঁজখবর রাখলে এগুলো এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন মাঠের বাইরে বসে এসব কোড দিয়ে অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে বার্তা পাঠাতেন সিলভারউড এবং শ্রীলঙ্কা দলের অ্যানালিষ্ট। লঙ্কা দ্বীপে আসার আগেই অবশ্য এমন কোডেড সিগন্যাল দিতেন সিলভারউড।


২০২০ সালে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে কোডেড সিগন্যাল পাঠিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক কোচ। ক্রিকেটে এমন ঘটনা অবশ্য কমই দেখা মিলে। যারা ফুটবলের খোঁজ রাখেন তাদের কাছে মাঠের বাইরে থেকে তথ্য প্রেরণ করার ঘটনা বেশ পরিচিতই। বর্তমান সময়ে ক্লাব ফুটবলে এটি হরহামেশাই দেখা যায়। তবে ঘটনাগুলো হয়ে আসছে আরও আগে থেকে। তুমুলভাবে আলোচনায় আসে ২০০৬ ফুটবল বিশ্বকাপে।


৩০ জুন, বার্লিনে সেদিন জার্মানির প্রতিপক্ষ ছিল আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচে অতিরিক্ত সময় শেষে দুই দলের স্কোর ১-১। তাতে অনুমেয়ভাবেই তা ট্রাইব্রেকারে গড়ায়। পেনাল্টি শ্যূট আউটে সেদিন আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল জার্মানি। ট্রাইব্রেকারে সেদিন এস্তেবান ক্যাম্বিয়াসোর পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন জার্মান গোলকিপার জেন্স লেহম্যান।


ক্যাম্বিয়াসোর শট নেবার আগে নিচের মোজা থেকে একটা শিট বের করেছিলেন লেহম্যান। যেখানে লেখা ছিল আর্জেন্টিনার পেনাল্টি টেকারদের শট নেওয়ার সম্ভাব্য সাইড। সেদিন সেই কাগজ দেখেই বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাম্বিয়াসোর শট আটকে দিয়েছিলেন জার্মান গোলকিপার। যদিও পরবর্তীতে জানা যায় সেই শিটে নাকি ক্যাম্বিয়াসোকে নিয়ে কিছুই লেখা ছিল না। লেহম্যানের চিটকোড সেদিন লেখা না থাকলেও মার্ক ওয়াটের চিটশিটে লেখার কমতি ছিল না।


মোজা থেকে চিটশিট বের করে দেখছিলেন জেন্স লেহম্যান/ছবি: সংগৃহীত


promotional_ad

সর্বশেষ বিশ্বকাপে এটির দেখা মিললেও এবারের আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর ম্যাচে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে ওয়াটের চিটশিট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে রীতিমতো নায়ক বনে গেছেন ওয়াট। ম্যাচ চলাকালীন হঠাৎই পকেট থেকে একটি কাজ বের করেন তিনি। খানিকটা সময় নিয়ে সেটা পড়ে আবারও পকেটেই রেখে দেন স্কটল্যান্ডের এই স্পিনার। যেখানে কাইল মেয়ার্স, ব্রেন্ডন কিং, নিকোলাস পুরান এবং এভিন লুইসের শক্তি ‍ও দূর্বলতার কথা লেখা হয়েছিল।


ব্রেন্ডন কিংয়ের কথাই ধরা যাক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁহাতি এই ব্যাটারকে নিয়ে ওয়াটের চিটশিটে চারটি কোট লেখা ছিল। যেখানে প্রথম কোড, ‘স্লো স্টার্টার’, দ্বিতীয়ত ‘স্টেইস অন দ্য লেগ সাইড ওভার দ্য এক্সট্রা কভার’, তৃতীয়ত ‘লেগ স্টাম্প ইয়র্কার এবং ওয়াইড’, চতুর্থ এবং সর্বশেষ কোডে লেখা ছিল ‘ইট উইল ল্যাপ মি ৪৫ থিনার।’ এতসব পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমে শেষ পর্যন্ত কিংকে নিজের ঝুলিতেই পুড়েছেন ওয়াট।


লুইস, মেয়ার্স এবং পুরানদের বিপক্ষে পরিকল্পনা সাজিয়ে শতভাগ সফল হয়েছেন তিনি। মেয়ার্স ৪ বলে ১ রান নিলেও লুইস ২ বল খেলে কোন রানই করতে পারেননি। অধিনায়ক পুরান ৩ বল খেলে নিতে পেরেছেন ২ রান। এদিকে বোল্ড হওয়া কিং ওয়াটের ২ বলে কোন রানই করতে পারেননি। তাতে নিজের পরিকল্পনায় শতভাগ সফল হয়েছেন ওয়াট।


২৪ গজ দূর থেকে বল করছেন মার্ক ওয়াট/ ছবি: সংগৃহীত


এদিন আলজারি জোসেফ এবং ওডেন স্মিথকেও আউট করেছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। উইকেট ২২ গজের হলেও ওয়াটকে প্রায়শই ২৪ গজ দূরে থেকে বলতে করতে দেখা যায়। আলজারি এবং স্মিথকে আউপ করা দুটি বলও ২৪ গজ দূরে থেকে করেছেন ওয়াট। সেটার ব্যাখা দিতে গিয়ে ওয়াট জানান, এমন উপায়ে ব্যাটারদের থেকে তিনি নাকি খানিকটা এগিয়ে থাকেন।


ওয়াট বলেন, ‘আমি যখন ২৪ গজ দূরে থেকে বল করি তখন ব্যাটারদের খানিকটা তাড়াহুড়ো করতে দেই। আমি যখন বল ছাড়ি তখন ব্যাটাররা উপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। ততক্ষণে বল অর্ধেক ক্রিজ চলে যায়। ব্যাটাররা যদি অর্ধেক সেকেন্ড পিছিয়ে যায় তাতে আমি মনে করি এটি কিছুটা আমার পক্ষে যায়।’


এসব পরিকল্পনা সাজাতে বেশ খানিকটা সময় কাঠখড় পোড়াতে হয় ওয়াটকে। ম্যাচের আগেরদিন প্রায় ২-৩ ঘণ্টা প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের ভিডিও ফুটেজ দেখে সেগুলো নোট করে নেন ওয়াট। ভিডিও ফুটেজ সরবরাহে ওয়াটকে সহযোগিতা করেন স্কটল্যান্ড দলের অ্যানালিষ্ট জর্জ ম্যাকনিয়েল। প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের নিয়ে বিশ্লেষণ করাকে নিজের কলেজের হোম ওয়ার্কের সঙ্গে তুলনা করেছেন ওয়াট।


তিনি বলেন, ‘আমি ব্যাটারদের নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ করি এবং এটাকে আমার হোমওয়ার্ক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যেহেতু আমি কলেজে যাই না, তাই এটি আমার কলেজের কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। একদিন আগে আমি হয়তো দুই বা তিন ঘণ্টা বিশ্লেষণের কাজ করব।’


প্রতিনিয়ত সাফল্য পাওয়া ওয়াটের কাছে চিটশিট কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটাও খোলাসা করেছেন নিজেই। ওয়াট বলেন, ‘আমি যদি এই শিটটি ব্যবহার না করি তাহলে আমার নিজেকে ফাঁকা ফাঁকা লাগতো।’ সেটা যাই হোক, আধুনিক ক্রিকেটে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের নিয়ে ওয়াটের এমন পর্যালোচনার চিটশিট যে বড় ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে সেটা বোধহয় বলাই যায়।



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball