আকবরদের অনুপ্রেরণা ছিল ফুটবলের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা

ছবি: ছবিঃ আইসিসি

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার জন্য আগে ভাগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিল বাংলাদেশ যুব দল। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশ দল ক্যাম্প গড়েছিল পচেফস্ট্রুমের নর্থওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে এখানেই অনুশীলন করেছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল।
এ ছাড়া ২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপের সময় এখানে বেসক্যাম্প করেছি??? স্পেন জাতীয় দল। ইনিয়েস্তা-জাভিরা যেখানে বসে ফুটবল বিশ্বকাপ জেতার ছক কষতেন, সেখান থেকেই বিশ্বকাপ জয়ের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সেবারই বিশ্বকাপ ঘরে নিয়েছিলেন জাভি-ইনিয়েস্তা-ভিলারা।
এটাই বাংলাদেশের যুবাদের বিশ্বকাপ জিততে অনেকাংশে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে বিশ্বাস, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বোলিং কোচ মাহবুব আলী জাকি। তিনি বলেছেন, ‘যে ড্রেসিংরুমে আমরা বসতাম, স্পেনের খেলোয়াড়রা এখানেই বসতেন। ড্রেসিংরুমে তাঁদের ছবি টাঙানো।’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত এই বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের বোলাররা নিয়েছেন ৪০ উইকেট। দুর্দান্ত বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতকে অল আউট করার কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের যুবাদের।

যদিও সেমিফাইনালে ওয়াসিম আকরাম-শোয়েব আখতারদের উত্তরসূরি পাকিস্তান যুব দলের ক্রিকেটাররা ভারতের একটি উইকেটেরও পতন ঘটাতে পারেননি। সেখানে বাংলাদেশি পেসারদের গতি আর আগ্রাসী বোলিংয়ের সামনে মাথা নোয়াতে হয়েছে ভারতের প্রায় সবার।
যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বোলারদের পারফরম্যান্সের নেপথ্যে ছিলেন বোলিং কোচ মাহবুব। তিনি জানিয়েছেন, এই সাফল্যের পেছনের গল্পটা অনেক লম্বা, যার শুরুটা হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার পরামর্শ মেনেই কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে মাহবুব বলেছেন, ‘২০১৭ সালে, এই ছেলেদের যখন আমরা হাতে পাই এবং তাদেরকে যুব বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করতে বলা হয়, তার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা একটা সফরে শ্রীলঙ্কা যাই। তখন জাতীয় দলের হয়ে মাশরাফিও সেখানে ছিল। তার সঙ্গে আমার কিছু কথা হয় সেখানে। জানতে চাই দক্ষিণ আফ্রিকায় কিভাবে বোলিং করলে সফল হওয়া যাবে, কোন লাইন-লেন্থে বল করতে হবে। মাশরাফির পরামর্শ ছিল, বল কোমরের ওপরে তুলতে হবে। আক্রমণাত্মক বোলিং করতে হবে। এই পরিকল্পনা মাথায় রেখেই কাজ শুরু করি।’
বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগেই দলের ক্রিকেটারদের কড়া বার্তা দিয়েছিলেন বোলিং কোচ। তিনি বিশ্বকাপের আগে ক্রিকেটারদের মাঝে যুদ্ধের দামামার বার্তা দিয়েছিলেন। মাহবুব বলেছেন, ‘আমি খেলোয়াড়দের বলেছিলাম, আমরা বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি মানে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। আমি মাঠে রক্ত দেখতে চাই, প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের আঙুল ভাঙতে দেখতে চাই।’
ক্রিকেটারদের আগ্রাসী মনোভাব এবং শরীরী ভাষা ধরে রাখতে দরকার ছিল বাড়তি শক্তি। এটা নিয়ে কাজ করেছেন বাংলাদেশের স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ রিচার্ড স্টনিয়ার। তিনি ক্রিকেটারদের পরিশ্রম করিয়ে, দৌড়ে খাটিয়ে, ব্যায়াম করিয়ে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে আরও শক্তিশালী করে তুলেছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যুব দলের বোলিং কোচ বলেন, ‘ওদেরকে এমনভাবে অনুশীলন করানো হয়েছে যেন প্রত্যেকে ১২ ওভার বোলিং করতে পারে। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকায় উচ্চতার কারণে বাতাসে অক্সিজেন কম থাকে, তখন যাতে সমস্যায় না পড়তে হয়।’
বিশ্বকাপের আগে ত্রিশটিরও বেশি যুব ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব আসরে মাঠে নামার আগে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ড সফর করে এসেছে বাংলাদেশের এই দলটি। মূলত বিভিন্ন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই এই পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছিলো বাংলাদেশ যুব দলের টিম ম্যানেজমেন্ট। সেই লক্ষ্যে দেশের মাটিতেও ঘাসের উইকেটে অনুশীলন করানো হয়েছিল যুবাদের।
বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতির কথা জানিয়ে মাহবুব বলেছেন, ‘বিশ্বকাপে খেলতে যাবার আগে আমাদের অনুশীলন করার কথা ছিল চট্টগ্রামে, কিন্তু বিপিএলের কারণে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বগুড়ায়। তাতে ভালোই হয়। বগুড়ার উইকেট পেস সহায়ক। আমরা আগে থেকে বলে উইকেটে ঘাস রাখার ব্যবস্থা করি। উইকেটে ৫ মিলিমিটার ঘাস রেখে অনুশীলন করেই আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা রওনা হই।’