ইডেনেও সেই ব্যাটিং ব্যর্থতার গল্প
ছবি: ছবিঃ- বিসিবি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে প্রথমবারের মতো দিবা-রাত্রির ম্যাচ খেলতে নামা বাংলাদেশ ম্যাচের প্রথম দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পারল না। ইন্দোর টেস্টের মতো এই ম্যাচেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় দিন কাটল বাংলাদেশের। ম্যাচের প্রথম দিন বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে মাত্র ১০৬ রানে। জবাবে তিন উইকেটে ১৭৪ রান করে দিন শেষ করেছে ভারত। লিড ৬৮ রানের।
বাংলাদেশের অল্প রানের জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই বোলারদের বিপক্ষে চড়াও হয়ে খেলছিলেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং মায়াঙ্ক আগারওয়াল। দুজন মিলে প্রথম চার ওভার দাপটের সঙ্গেই ব্যাটিং করেছেন। কিন্তু পঞ্চম ওভারে আল আমিন হোসেনের বলে মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে তালুবন্দি হন মায়াঙ্ক। ১৪ রান করে ফেরেন আগের টেস্টের এই ডাবল সেঞ্চুরিয়ান।
ভারতের ইনিংসের ১২তম ওভারে রোহিতের ক্যাচ ছেড়েছেন আল আমিন হোসেন। আবু জায়েদ রাহির বলে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত। সেটা লুফে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন আল আমিন। এরপরেই চা পান বিরতিতে যায় দুই দল।
চা পান বিরতির পর এবাদত হোসেনের ওভারের পঞ্চম বলে লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হয়ে ফিরে যান রোহিত (২১)। তিনি অবশ্য আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি তাতে।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে ৯৪ রানের জুটি গড়েন চেতেশ্বর পূজারা। হাফ সেঞ্চুরির পর এবাদতের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান পূজারা।
ব্যক্তিগত ৫৫ রানে সাদমান ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ভারতের টেস্ট বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান। এরপর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি। দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন কোহলি (৫৯*) এবং অজিঙ্কা রাহানে (২৩*)।
এর আগে বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় শুরু হওয়া ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু উমেশ যাদব-ইশান্ত শর্মাদের তোপের সামনে নাস্তানাবুদ হয়েছে দলটি।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৯ রান এসেছে ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিকের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া লিটন দাস করেছেন ২৪ রান। ভারতের হয়ে প্রথম ইনিংসে ইশান্ত শর্মা একাই নেন পাঁচ উইকেট। এছাড়া উমেশ যাদব তিনটি ও মোহাম্মদ শামি দুইটি করে উইকেট শিকার করেন।
গোলাপি বলের ম্যাচে শুরুটা দেখেশুনেই করেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিক এবং ইমরুল কায়েস। প্রথম ছয় ওভার অনেকটা সাবধানী ব্যাটিং করতে থাকেন দুজন। কিন্তু ইনিংসের সপ্তম ওভারে এসে ইশান্ত শর্মার প্রথম বলে রিভিউ নিয়ে বাচলেও তৃতীয় বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পরে বিদায় নেন ইমরুল।
চার রান করে বিদায় নেন এই বাঁহাতি ওপেনার। খানিক পর উমেশ যাদবের বলে স্লিপে রহিত শর্মার দুর্দান্ত ক্যাচে সাত বলে শুন্য রানে বিদায় নেন অধিনায়ক মমিনুল হক। এর দুই বল পরে বোল্ড হন মোহাম্মদ মিঠুন। ইনিংসের ১২তম ওভারে মোহাম্মদ শামির বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হন মুশফিকুর রহিম।
শুন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। চার ব্যাটসম্যান বিদায় নিলেও একাই লড়াই চালিয়ে যান সাদমান। কিন্তু তাকেও ব্যক্তিগত ২৯ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় করেন উমেশ যাদব। এরপর ছয় রানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ফেরান ইশান্ত শর্মা।
দলের বাকি ব্যাটসম্যানরা গোলাপি বলের বিপক্ষে সুবিধা করতে না পারলেও উল্টো চিত্র দেখা যায় লিটন দাসের ক্ষেত্রে। ইশান্ত শর্মা-উমেশ যাদবদের বিপক্ষে ইতিবাচক মানসিকতায় আক্রমণাত্মক মনোভাবে ব্যাটিং করতে থাকেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
যদিও মোহাম্মদ শামির বাউন্সারের বিপক্ষে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। শামির ছোড়া বাউন্সার মাথায় আঘাত হানে লিটনের। এরপর ফিজিওর চিকিৎসা নিয়ে খেলা চালিয়ে গেলেও কয়েক ওভার পর রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
লাঞ্চ বিরতির পর ব্যাটিং করতে নেমে ইশান্ত শর্মার বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি নিচের সারির ব্যাটসম্যানরা। ১৯ রান করা নাঈম হাসানকে বোল্ড করে নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নেন ইশান্ত। এরপর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন আল আমিন। তার উইকেটটি নেন শামি।
দলের ১২ ব্যাটসম্যান মিলে করেছেন ৯২ রান, বাকি ১৪ রান এসেছে অতিরিক্তের খাতা থেকে। লিটন দাস মাথায় চোট পাওয়ায় মেহেদি হাসান মিরাজ ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন মাত্র ৮ রান। মিরাজের উইকেটটিও নেন ইশান্ত।
একই ইনিংসে মাথায় চোট পান নাঈম হাসানও। প্রথম ইনিংসে তিনি আউট হয়েছেন ১৯ রান করে। নাঈমের বদলি হিসেবে তাইজুলকে নেয়া হয়েছে কনকাশন সাব হিসেবে।
লিটনের বদলি হিসেবে নামা মিরাজ এই ম্যাচে বোলিং করতে পারবেন না। যেহেতু লিটন একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে এই ম্যাচে খেলেছেন। তাইজুল ব্যাটিং বোলিং দুটোই করতে পারবেন।
ক্রিকেট ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো দুইজন কনকাশন সাব হিসেবে খেলছেন একই দলের একাদশে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসঃ ১০৬/১০ (৩০.৩ ওভার)
(সাদমান ইসলাম ২৯*, লিটন ২৪ রিটায়ার্ড হার্ট; ইশান্ত ৫/২২)
ভারত প্রথম ইনিংসঃ ১৭৪/৩ (৪৬ ওভার)
(কোহলি ৫৯*, পূজারা ৫৫; এবাদত ২/৬১)