১১ দফা দাবিতে কী বললেন ক্রিকেটাররা

ছবি: ছবি- ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
সোমবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রাঙ্গনে ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা। ৬০ জনের বেশি ক্রিকেটার উপস্থিত ছিলেন দাবি উত্থাপনের সময়।

দাবিগুলো মেনে নেয়া না পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন না সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালসহ দেশের অন্যান্য ক্রিকেটাররা। ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। যেখানে সব ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে ধরেছেন ১০জন ক্রিকেটার।
ক্রিকেটারদের দাবিগুলো তুলে ধরা হলোঃ
নাঈম ইসলাম, প্রথম দাবিঃ আমাদের ক্রিকেটাররা প্রাপ্য সম্মান পায় না। ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) বর্তমান কোনো কার্যক্রম আমাদের ক্রিকেটারদের সমর্থনে করা হয় না। আমাদের পক্ষে ওনাদের আমরা কখনোই পাইনি। আমাদের প্রথম দাবি কোয়াবের সেক্রেটারি, প্রেসিডেন্ট যারা আছেন তাঁদের পদত্যাগ শিগগিরই করতে হবে। ক্রিকেটাররা নির্বাচন করবে কোয়াবের কে সেক্রেটারি হবে, কে প্রেসিডেন্ট হবে। একটা নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা কমিটি বানাবো।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, দ্বিতীয় দাবিঃ আপনারা জানেন প্রিমিয়ার লিগের অবস্থানটা কী এখন। সব ক্রিকেটাররাই এ ব্যাপারে খুব অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এখানে পারিশ্রমিকের একটা মানদণ্ড বেঁধে দেয়া হচ্ছে। ক্রিকেটারদের অনেক সীমা দিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমার যেভাবে আগে প্রিমিয়ার লিগ খেলতাম, ক্রিকেটাররা আগে যেভাবে চুক্তি করত। ক্রিকেটাররা নিজেদের পারিশ্রমিক নিয়ে সব সময় তৎপর থাকত। ক্রিকেটারদের সব ক্ষেত্রে ক্ষমতা থাকত। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। প্রিমিয়ার লিগে দলগুলোর সঙ্গে ক্রিকেটাররা নিজেরা চুক্তি করবে। দল নির্বাচন এবং পারিশ্রমিকের ব্যাপারে নিজেরা চুক্তি করবে। এটা আমাদের দ্বিতীয় দাবি, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আগের পদ্ধতিতে চালানো হোক।
মুশফিকুর রহিম, তৃতীয় দাবিঃ আমাদের তৃতীয় দাবি বিপিএল সংক্রান্ত। আমরা জানি এ বছরের বিপিএল একটু অন্য নিয়মে হচ্ছে, সেটা অবশ্যই আমরা সম্মান করি। কিন্তু আমাদের প্রধান দাবি আগের নিয়মে যেভাবে বিপিএল হতো আগামী বছর থেকে আগের মতো বিপিএল চাই আমরা। স্থানীয় ক্রিকেটাররা যেন বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ন্যায্য মূল্য পায়। আমরা যেটা দেখি বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রচুর টাকায় চুক্তি করা হয়। কিন্তু স্থানীয় ক্রিকেটাররা সেটা পায় না। এটা অবশ্যই করতে হবে যেন আমাদের স্থানীয় ক্রিকেটাররা সেই পারিশ্রমিকটা পায়। সঙ্গে বিদেশি লিগগুলোর মতো আমাদের ক্রিকেটারদেরও ড্রাফটে নিজেদের ক্যাটাগরি পছন্দ করার সুযোগ দিতে হবে।
সাকিব আল হাসান, চতুর্থ দাবিঃ ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি ১ লাখ টাকা করতে হবে। ক্রিকেটারদের বেতন ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। অনুশীলনের ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। জিম, ইনডোর, মাঠ সব কিছুর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ১২ মাসের জন্য কোচ, ফিজিও, ট্রেইনার নিয়োগ দিতে হবে। পরবর্তী মৌসুমের আগে আমরা চাই এই সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা হোক।
সাকিব আল হাসান, পঞ্চম দাবিঃ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখানে অনেকগুলো ছোট ছোট ইস্যু আছে যেগুলো অনেক সময় বলা হয় না। এই জিনিসগুলোর উন্নতি খুব দরকার যদি আমরা ক্রিকেটের সংস্কৃতি ভালো করতে চাই। এখানে প্রথম হচ্ছে বল। আমরা যে বল দিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলি সেটা মানসম্মত হয় না। এমন বলে খেললে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবার নতুন ধরনের বলের সাথে মানাতে কষ্ট হয়। ক্রিকেটারদের দৈনিক ভাতা ১৫০০ টাকা থেকে বাড়াতে হবে। কারণ বিসিবি যে ফিটনেস লেভেল দাবি করছে ১৫০০ টাকায় পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হয় না ক্রিকেটারদের। ভেন্যুগুলোতে ক্রিকেটারদের ভ্রমণ খরচ ২৫০০ টাকা থেকে বাড়াতে হবে। বিভাগ ভিত্তিক যাতায়াতের জন্য বিমান ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে হবে। যে হোটেলের ব্যবস্থা করা হবে সেখানে কমপক্ষে জিম এবং সুইমিং পুল থাকা বাধ্যতামূলক। আপনারা যদি দেখেন মাঠে আমরা কী বাসে চড়ে আসি। খুবই হতাশাজনক একটা বিষয়। মাঠে আসার জন্য ক্রিকেটারদের জন্য এসি বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
এনামুল হক জুনিয়র, ষষ্ঠ দাবিঃ জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা ৩০ জন করতে হবে এবং বেতন বাড়াতে হবে। তিন বছর ধরে বেতন বাড়ানো হয় না। সেটা বাড়াতে হবে।
তামিম ইকবাল, সপ্তম দাবিঃ আমরা ক্রিকেট নিয়ে, ক্রিকেটারদের সম্মান নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের আজকের উদ্যোগ শুধুমাত্র ক্রিকেটারদের নিয়েই না। আপনি যদি চিন্তা করেন একটা গ্রাউন্ডস ম্যান, সে কি ধরনের বেতন পাচ্ছে। আপনারা সবাই দেখেন ওরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে। মাস শেষে হয়তো ৫-৬ হাজার টাকা পায়। কোচের কথা, আপনি যদি দেখেন আমরা নিজেরাই বাঙালি কোচদের প্রোমোট করতে চাই না। বিদেশি একটা কোচ যে টাকা বেতন পায় আমাদের হয়তো ২০ জন কোচ মিলেও তা পায় না। এমনও সময় গেছে সম্প্রতি একটা সফরে দেশি কোচের অধীনে দল ভালো খেললেও পরবর্তী সিরিজে তাঁকে আর দায়িত্ব দেয়া হয়নি। আম্পায়ারিং নিয়ে আমরা সবাই অভিযোগ করি। আম্পায়ারদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে টাকা দিয়ে। আমরা তা দেই কি দেই না এটা আপনারা সবাই জানেন। আপনারা সবাই জানেন তাঁদের কি ধরনের বেতন দেয়া হয়। ফিজিও, ট্রেইনার সবার ক্ষেত্রেই একই। এখন উপযুক্ত সময় বাংলাদেশিদের প্রাধান্য দেয়ার।
এনামুল হক বিজয়, অষ্টম দাবিঃ আমরা দুইটা চার দিনের টুর্নামেন্ট খেলি। বিসিএল এবং এনসিএল। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের ওয়ানডে ভার্সনে আমরা মাত্র একটি আসর খেলি (ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ)। আমাদের আরেকটি আসর বাড়ানো উচিত। বিপিএলের মাধ্যমে আমরা একটি টি-টোয়েন্টি লিগেই খেলি। এ ছাড়া কোনো টি-টোয়েন্টি আসর হয় না। আমার কাছে মনে হয় বিপিএলের আগ মুহূর্তে একটি টি-টোয়েন্টি আসর হওয়া জরুরি। যাতে আমাদের বিপিএল আরও ভালো যায়। ওয়ানডের ব্যাপারে যেটা বলব আমাদের জাতীয় লিগের আগে ওয়ানডে একটি খেলা হতো। পাঁচ বছর আগেও হতো। চার দিনের ম্যাচ খেলে আমরা একটি ওয়ানডে খেলতাম। সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা চাই ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগের একটি ওয়ানডে আসর চালু করা হোক।
নুরুল হাসান সোহান, নবম দাবিঃ ঘরোয়া আসরের ক্ষেত্রে আমাদের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী থাকতে হবে। তাতে আমরা যেন প্রস্তুতি নিতে পারি সারা বছরের।
জুনায়েদ সিদ্দিকী, দশম দাবিঃ পয়েন্ট হচ্ছে বিপিএল-প্রিমিয়ার লিগের টাকাটা আমরা যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাই। যেমন শেষ প্রিমিয়ার লিগে দশটি দলই তাদের টাকা পরিশোধ করেছে। এখনও আমরা ব্রাদার্স ইউনিয়নের কাছ থেকে ৪০ ভাগ টাকা পাই নাই। বোর্ডে অনেকবার যাওয়া হয়েছে, কোয়াবকেও অনেকবার বলা হয়েছে। জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে এটা আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ প্রাপ্য নয়। আমাদের দলের অনেক ক্রিকেটারই যাওয়া আসা করে। এটা খুবই দৃষ্টিকটু। তো আশা করব, যে সময় দেওয়া থাকে সে সময়ের মধ্যে যেন পাই।
ফরহাদ রেজা, একাদশ দাবিঃ ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের একটি নিয়ম বেধে দেয়া আছে যে, দুটির বেশি খেলতে পারব না। এখন জাতীয় দলে খেলার বাইরে যে সময়টা আমরা পাই তখন যদি আমরা ফ্রি থাকি তাহলে যেন বাইরে খেলতে যেতে পারি, তাহলে আমাদের খেলাও হবে, অনেক কিছু শেখাও হবে।