বিফলে গেল বৃষ্টি মাথায় ক্রিকেটের অপেক্ষা

ছবি: ছবিঃ ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||
বিশাল অর্থবহ কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নেয়া জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তান যেকোনো টুর্নামেন্টেই ছোট দল হিসেবে বিবেচিত হয়। এদেরকে হারিয়ে বাংলাদেশ যে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে, সেই ফাইনাল নিয়ে ক্রিকেটমোদীদের কেমন আগ্রহ থাকতে পারে? মাঠের অবস্থা না দেখে উত্তর দিলে, আপনার উত্তর ভুল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যকার ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনাল। বৃষ্টির কারণে খেলা শুরুর নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেছে আরও কয়েক ঘণ্টা আগেই। কিন্তু গ্যালারিতে চোখ রাখলে মনে হবে না বৃষ্টির উৎপাত আছে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। খেলা কখন শুরু হবে কারো জানা নেই, কিন্তু গ্যালারি মুখরিত দর্শকদের সরব উপস্থিতিতে।
দর্শক সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ জাগতে পারে। এই বৃষ্টি মাথায় কে বসে থাকবে গ্যালারিতে! কিন্তু মিরপুরের গ্যালারিতে চোখ রাখতেই সব সন্দেহ হাওয়া। দুই-এক হাজার নয়, অন্তত ১০-১২ হাজার দর্শক বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ফাইনালের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে গেছেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি দর্শকের মাথার উপরে ছিল না কোনো ছাদ। ক্রিকেটের টানে বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করে গেছেন তারা। যদিও এই অপেক্ষা ফুরায়নি তাদের, ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্তই হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ ছিল। মনে হয়েছে যেকোনো সময় শুরু হয়ে যাবে বৃষ্টি। কিন্তু আকাশের দিকে তাকানোর বালাই নেই স্টেডিয়ামের উদ্দেশে ছোটা দর্শকদের। দুপুরের মধ্যেই স্টেডিয়ামে এসে হাজির হাজারো দর্শক। এর মধ্যে অনেকে টিকেট পাওয়ার স্বস্তি নিয়ে অপেক্ষমান, অনেকে আবার কালোবাজারির কাছ থেকে টিকেট সংগ্রহে ব্যস্ত।
টিকেট সংগ্রহ শেষে দর্শকরা যখন মাঠে ঢোকার তাড়ায়, এমন সময় শুরু হয় বৃষ্টি। ৫টার দিক থেকে শুরু হয় বৃষ্টির উৎপাত। কখনো ভারী, কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়ে গেছে মিরপুরে। এর মধ্যেই গ্যালারিতে বসে অপেক্ষা করে গেছেন দর্শকরা। ৫টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টি ঝরেছে, তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে উইকেটের কভার ওঠার অপেক্ষা করে গেছেন তারা।
প্রায় তিন ঘণ্টার অপেক্ষার এই সময়ে মাঝে মাঝেই গ্যালারিতে জয়োধ্বনির মতো আওয়াজ শোনা গেছে। গ্যালারিতে চোখ রেখে বোঝা গেছে, দর্শকদের এই উচ্ছ্বাস বৃষ্টি কমার। বৃষ্টি কমলেই স্বস্তির নিঃশ্বাসের সঙ্গে হই-হুল্লোড়ে মেতে উঠছিলেন ক্রিকেট পাগল দর্শকরা। যদিও তাদের উচ্ছ্বাস মিলিয়ে যেতে সময় লাগছিল না। কারণ পরক্ষণেই হানা দিচ্ছিল বৃষ্টি।
বৃষ্টি ঝরে যাওয়ার এই সময়টায় কেবল দর্শকদেরই কার্যক্রম ছিল। খেলোয়াড়দের দেখা মিলছিল না। মাঠে এলেও ড্রেসিংরুমেই সময় কাটিয়েছেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। মাঠকর্মীরাও একটা সময় মাঠ ছাড়েন। কভারে ঢাকা উইকেটই কেবল চোখে পড়ছিল। এর মাঝেই একটু একটু করে ভরে উঠছিল গ্যালারি।
বৃষ্টিতেও এই অপেক্ষা যেন ক্রিকেটের প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেটমোদীদের একাগ্রতার ছবিই ফুটিয়ে তোলে, ভালোবাসার ছবি এঁকে যায়। যদিও দর্শকদের এই অপেক্ষা বিফলে গেছে। কারণ দীর্ঘ অপেক্ষার পর ৯টায় ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ-আফগানিস্তানকে যুগ্ন চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।
দুই দলের ক্রিকেটারদের কোলাকুলি দেখতে পাচ্ছিল দর্শকরা, ম্যাচটি যে আর হবে না সেটাও বুঝতে পারছিলেন তারা। তবু পুরো গ্যালারি তখনও অপেক্ষায়। আর অপেক্ষা না পুরানোর এই আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছ???ড়তে হয় দর্শকদের।