টপ অর্ডারের সমাধান নাঈম শেখ?

ছবি: ছবিঃ বিসিবি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার থেকে ব্যর্থতা যেন পিছুই ছাড়ছে না। দুর্বল টপ অর্ডার আরও একবার দৃশ্যমান হয়েছে চলমান ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে। অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দল। এবার তরুণদের সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা করছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচকরা। যে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দলে ডাক পেয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার নাঈম শেখ।
ঘরের মাঠে চলতি টি-টোয়েন্টি সিরিজটিকে পাইপলাইনের শক্তি যাচাই করার মঞ্চ হিসেবে নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দলের বাজে পারফরম্যান্সে সাহস যোগাতে পারেননি নির্বাচকরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ হারার পর সৌম্য সরকারের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে বসিয়ে তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দিতে তারুণ্যনির্ভর দল ঘোষণা করেছে তারা।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মাত্র ৪ রান করে ফেরেন ওপেনার সৌম্য। পাওয়ার প্লেতে ৩৪ রান তুলেই ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। জিম্বাবুয়ের দেয়া ১৪৫ রানের লক্ষ্য যেন পাহাড়ের মতো সামনে এসে দাঁড়ায় সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের। শেষ পর্যন্ত তরুণ অলরাউন্ডার আফিফ হোসেনের ২৬ বলে ৫২ রানের ইনিংস বাঁচিয়ে দেয় বাংলাদেশকে।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতা দূর করতে পরের ম্যাচে বিকল্প পথ বেছে নেয় বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিককে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয়। অভিজ্ঞরা উপরের দিকে ভিত গড়ে দেবে এমন পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাও বৃথা গেছে, দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে নামা মুশফিকও ব্যর্থ হয়ে ফেরেন।

আফগানদের বিপক্ষেও টপ অর্ডারের করুণ পরিণতিতে পাওয়ার প্লেতে ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। শুরুতেই পিছিয়ে পড়া সাকিবের দল আর ম্যাচে ফেরার পথ খুঁজে পায়নি। শেষ পর্যন্ত ২৫ রানের হার নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
সফলতার মুখ না দেখা টপ অর্ডারে নতুন মুখ দলে ভিড়িয়েছে বাংলাদেশ। ২০ বছর বয়সী নাঈম শেখকে ওপেনিং সমস্যার সমাধান হিসেবে ভাবছেন নির্বাচকরা। তরুণ এই ওপেনারও রয়েছেন সুযোগের অপেক্ষায়।
মাঠে নামার সুযোগ পেলে সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিতে চান নাঈম। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পাওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ক্রিকফ্রেঞ্জিকে বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করব। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। চেষ্টা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই আমার। নিয়মিত যেন রান করতে পারি এই চিন্তাই সব সময় মাথায় থাকে। সব দিক থেকেই দলের জন্য একটু হলেও যেন অবদান রাখতে পারি, সেটাই লক্ষ্য থাকে।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্স করেই নির্বাচকদের নজরে এসেছেন নাঈম। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) ২০১৮-১৯ মৌসুমে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ১৬ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি এবং ৫ হাফ সেঞ্চুরিতে ৮০৭ সংগ্রহ করেছেন তিনি। সম্প্রতি ঘরের মাঠে আফগান ‘এ’ দলের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিংশৈলী দেখিয়েছেন তিনি। সিরিজে একটি সেঞ্চুরি এবং একটি হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন নাঈম। ৪টি চারদিনের ম্যাচে একটি হাফ সেঞ্চুরি এবং ৩২টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৪টি সেঞ্চুরি এবং ৯টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর।
নাঈমের ভাষায়, ‘শ্রীলঙ্কা সিরিজ খেলেছি। যেটা খেলেছিলাম খুলনায়, এই সিরিজটায় খুব একটা ভালো হয়নি। তবে আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে যে সিরিজটা খেললাম সেটায় ভালো খেলেছি। ১২৬ রানের একটা ইনিংস ছিল, এক ইনিংসে ৪৯ রান এবং আরেকটায় ৬৫ রান করেছিলাম।’
জাতীয় দলে ডাক পাওয়া যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই বড় পাওয়া, আর প্রথমবারের মুহূর্তটা তো বর্ণনাতীত। নাঈম শেখের উত্তেজনাটাও কোনো অংশে কম নয়। সুযোগ পেলে সবার মতো নাঈমও দলের নিয়মিত সদস্য হওয়ার লক্ষ্যেই খেলবেন।
বাংলাদেশের উদীয়মান এই ক্রিকেটার বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো লাগছে, জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। খুশি লাগছে অনেক, বাসার সবাই অনেক খুশি। একাদশে খেলার সুযোগ পেলে সেরাটা দিতে চাই। পারফরম্যান্স করে দলের নিয়মিত সদস্য হওয়াই এখন লক্ষ্য।’
চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর জিম্বাবুয়ে এবং ২১ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই একাদশে সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবেন নাঈম। কিন্তু টপ অর্ডারের সমাধান হিসেবে নিজেকে পরিচিত করাতে পারবেন তো বাঁহাতি এই ওপেনার?