মালিঙ্গাকে খুঁজে পেয়েছিলেন মাশরাফিদের কোচ

ছবি: ছবিঃ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে খেলে ফেলেছেন লঙ্কান পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। শেষ ম্যাচেও এই পেস তারকার বোলিং দেখে ভক্তদের আক্ষেপ বাড়তেই পারে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মরণঘাতী ইয়র্কারে তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকারদের স্টাম্প ছত্রখানা করেছেন।
এই কিংবদন্তি পেসারকে ২০০১ সালে খুঁজে বের করেছিলেন শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পেস বোলিং কোচ চম্পাকা রামানায়েকে। বিসিবির এইচপি দলের এই বোলিং কোচও লঙ্কান। তাঁর হাত ধরেই প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেটে পা রাখেন মালিঙ্গা।
তাই বিদায় বেলায় সাবেক এই গুরুকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি। মালিঙ্গার রাউন্ড আর্ম অ্যাকশনটি যে অনন্য এটা প্রথমে তাঁকে বুঝিয়েছিলেন রামানায়েকে। সেই সময় লঙ্কান দলে দিলহারা ফার্নান্দো এবং শানাকাদের মতো পেসার ছিল। তবে মালিঙ্গার পেসই বেশি মুগ্ধ করেছিল এই লঙ্কান কোচকে। বিদায় বেলায় এসব ঘটনা খুলে বলেছেন মালিঙ্গা।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, 'চম্পাকা আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রধান ব্যক্তি যিনি ২০০১ সালে আমাকে প্রথম খুঁজে পেয়েছিলেন। এরপর তিনি বুঝতে পারেন যে আমার মধ্যে কিছু একটা আছে। আমার বোলিং অ্যাকশন আলাদা, তবে তিনি বুঝেছিলেন যে আমার পেস আছে। ঐ সময় পেস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ আমাদের দিলহারা ফার্নান্দো, শানাকাদের মতো বেশ কিছু পেস বোলার ছিল। চম্পকা বলেছিলেন আমার বোলিং অ্যাকশন অনন্য।'
১৫ বছর আগে ২০০৪ সালের ১ জুলাই সাদা পোষাকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল মালিঙ্গার। এরপর ১৭ই জুলাই একই দলের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। অভিষেকের পর থেকে শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর স্কিড করা বল প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপুনি ধরিয়েছে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে শুরু করেছিলেন ওয়ানডে ইতিহাসের দশম সেরা বোলার হিসেবে। বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ৩৩৮ উইকেট নিয়ে। ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা বোলারদের তালিকায় অনিল কুম্বলেকে টপকে নয় নম্বরে এখন মালিঙ্গা।
১৫ বছর আগের স্মৃতিচারণে মালিঙ্গা জানিয়েছেন, তাঁকে খেলানোর জন্য দলও খুঁজে দিয়েছিলেন রামানায়েকে। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কোচিংয়ের মনোযোগী হয়েছিলেন বাংলাদেশের এই বোলিং কোচ। নিজ দলে মালিঙ্গাকে সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। একটি ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে সেখান থেকেই আলোচনায় চলে আসেন মালিঙ্গা। এরপর পর্যায়ক্রমে জাতীয় দলে জায়গা পান তিনি। মালিঙ্গার বিশ্বাস রামানায়েকে খেলোয়াড় তৈরি করেন।
মালিঙ্গার ভাষ্যমতে, 'এরপর আমি বলেছিলাম ঠিক আছে। তিনি নিজেকে একজন কোচ এবং খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় দেন। একই সঙ্গে তিনি আমার জন্য একটি দল খুঁজতে চান। পরবর্তীতে আমি তাঁর দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাই এবং সেখানে খেলি। আমি ৮ উইকেট শিকার করেছিলাম। এরপর তিনি ক্রিকেট খেলা থামিয়ে কোচিংয়ে মনোনিবেশ করেন। আমি মনে করি কেউই এমনটা করেনি। আমি এবং কুলাসেকারা উভয়েরই একই কোচ ছিল। আমরা এরপর ১২-১৩ বছর একসঙ্গে খেলেছি। তিনি অন্যতম সফল একজন কোচ বলে আমি মনে করি, তিনি খেলোয়াড় তৈরি করেন।'
শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া ক্রিকেটের কোচিং ছেড়ে ২০০৮ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান রামানায়েকে। শ্রীলঙ্কার হয়ে ১৮টি টেস্ট ও ৬২ ওয়ানডে খেলা এই পেসার এরপর টানা দুই বছর বাংলাদেশের পেসারদের নিয়ে কাজ করেন। তবে এরপর শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব নিতে বাংলাদেশ ছাড়েন তিনি।
২০১৭ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হয়ে আসেন বাংলাদেশে। তবে জাতীয় দল নয় তাঁকে দায়িত্ব দেয়া হয় এইচপির। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার জেরে চুক্তি নবায়ন হয়নি বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের। তাই অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে পেস বোলিং কোচের দায়িত্ব দেয়া হয় রামানায়েকেকে। এই একটি সিদ্ধান্তই কলম্বোতে মিলিয়ে দিয়েছে গুরু-শিষ্যকে।