সাব্বির কি শুধু নামেই এক্স ফ্যাক্টর?

ছবি: ছবিঃ সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণার আগে হঠাৎ করে বিসিবির নেওয়া পদক্ষেপে হইচই পড়ে যায় ক্রিকেট পাড়ায়। নিউজিল্যান্ড সফরের আগে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নেয়, নিষেধাজ্ঞায় থাকা সাব্বির রহমানকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অদ্ভুতুরে কারণে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগেই দলে ফেরানো হয় সাব্বিরকে।
শৃঙ্খলাজনিত কারণে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটাচ্ছিলেন সাব্বির রহমান। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফরের আগে সংবাদ সম্মেলনে বোমা ফাটান প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। জানান, সাব্বির রহমানকে দলে নিতে এক প্রকার বাধ্যই হয়েছেন তিনি।
বিষয়টি আরও ঘোলাটে হয় মাশরাফি বিন মর্তজার কথায়। তিনি জানান, বাধ্য করেননি তবে, সাব্বিরকে দলে নেয়ার আগ্রহ ছিল তাঁর। আগ্রহের পুরো কারণটাই ছিল ক্রিকেটীয়। সাব্বিরের মধ্যে রয়েছে এক্স ফ্যাক্টর। যেটার প্রয়োজন হবে বিশ্বকাপে। তাই তাকে নিউজিল্যান্ডে নিয়ে দলের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হবে।
মাশরাফির আস্থার প্রতিদান সাব্বির দিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মের আবহাওয়ার মতো বাংলাদেশ দলের নির্বাচন প্রক্রিয়াও পরিবর্তনশীল। এর ইঙ্গিত পাওয়া যায় আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের পর।
ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতার স্বাদ দেন মোসাদ্দেক হোসেন। সাকিব না থাকায় তিন নম্বরে নেমে কোনো রান না করেই ফেরেন সাব্বির।
এরপরই এক্স ফ্যাক্টর থেকে বাতিলের খাতায় নাম চলে যায় সাব্বিরের। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম চার ম্যাচে সাইড লাইনে ছিলেন তিনি। এটাই হয়তো সাব্বিরের পারফর্মেন্সে প্রভাব ফেলে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমে ক্যাচ হাতছাড়া ও ফিল্ডিং মিস করেছেন তিনি। ব্যাট হাতেও হয়েছেন ব্যর্থ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টস হেরে আগে ফিল্ডিং করেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে ডেভিড ওয়ার্নারের ১৬৬ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৩৮১ রানের পুঁজি গড়ে অস্ট্রেলিয়া। তবে সাব্বিরের ভুলে ব্যক্তিগত ১০ রানে জীবন পান ওয়ার্নার।
অজিদের ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মাশরাফি বিন মুর্তজার করা শর্ট বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ওয়ার্নার। কিন্তু সেই ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ হন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই ফিল্ডার।
মিরাজের করা ২৬তম ওভারে সাব্বির আবারও এই ভুলের পুনরাবৃত্তি করেন। ওই ওভারের তৃতীয় বলে ওয়ার্নারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটের ফাঁদে পড়তে পারতেন অজি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান উসমান খাওয়াজা। সে সময় ১৪ রানে ব্যাট করা খাওয়াজার সহজ রান আউট মিস করেন সাব্বির।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাব্বিরের দুই ভুলের কারণে বাংলাদেশকে বড় মাশুল দিতে হয়েছে। ব্যাট করতে নেমেও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। ৬৯ রান করা মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর ৭ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে নাথান কল্টার নাইলের করা প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন সাব্বির।
এরপরই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। মুশফিক একপ্রান্ত আগলে রাখলেও বিপরীত দিক থেকে আর কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান ছিলেন না। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩৩৩ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।

এতো আলোচনা শেষে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায়। সাব্বিরের মধ্যে থাকা সেই এক্স ফ্যাক্টর কোথাও গেল? নাকি সেটা ভুলে গেলো বাংলাদেশের টিম ম্যানেজম্যান্ট? সাব্বির কি নামেই এক্স ফ্যাক্টর? খাতা-কলমেই কেবল তাকে এক্স ফ্যাক্টর ভাবা হয়? এমন না হলে সাব্বিরকে ম্যাচ না খেলানোর কারণ নিশ্চয়ই টিম ম্যানেজম্যান্টের কাছে আছে। যদিও সেই কারণ সবার অজানা এবং শেষ পর্যন্ত হয়তো অজানাই থেকে যাবে।