এ কেমন ক্রিকেট সংস্কৃতি?

ছবি: ছবিঃ বিসিবি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি বলতেন, ‘কোনো ক্রিকেটারই চায় না অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে খেলতে। দল নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও নিশ্চয়তা যে কোন ক্রিকেটারের মাথা থেকে দুশ্চিন্তার বোঝা সরাতে সাহায্য করে।‘ নিজের অধিনায়কত্বের শুরুতে ভিরেন্দ্র শেহবাগ, জাহির খান, যুবরাজ সিং, হরভজন সিং এর মত ক্রিকেটারদের থেকে সেরা পারফর্মেন্সটা এভাবেই বের করে নিয়েছিলেন গাঙ্গুলি। এভাবেই ভারতীয় ক্রিকেটে দল নির্বাচনের সঠিক সংস্কৃতির বীজ বপন করেছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে যার ফল ভোগ করেছে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও বর্তমানে ভিরাট কোহলির ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বিশ্বকাপ স্কোয়াড ইস্যুতে ক্রিকেট সংস্কৃতি পরিপন্থী কাজ করেছে।
ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে সৌম্য সরকার, লিটন দাস, সাব্বির রহমানদের ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে সৌম্য ও সাব্বির রানের দেখা পেলেও ঢাকা লীগে কেউই রানে ছিলেন না। কিন্তু বিশ্বকাপের জন্য এই তিন ক্রিকেটারকে রেখেই স্কোয়াড সাজিয়েছে নির্বাচকরা।

সাথে আঙ্গুল তুলে শর্ত জুড়ে দিয়েছে, আয়ারল্যান্ডে ভালো পারফর্ম না করলে দল থেকে বাদ পড়তে হবে। প্রথমে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু খোলামেলা ভাবে মিডিয়ার সামনে এই সম্ভাবনার কথা বলেছেন।
‘একটা হচ্ছে যে আমাদের যাদেরকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে, তাদের ফর্ম ভালো হচ্ছে না। এটা একটা ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, ইনজুরি একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক খেলোয়াড়কেই আমরা ধরেছিলাম বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকবে। কিন্তু এখনো তারা পুরোপুরি সুস্থ না। যেহেতু আমাদের সময় আছে, আমি বলতে এসেছিলাম যে, তোমরা স্কোয়াড দিয়ে দাও ১৫ জনের। কিন্তু দল পরিবর্তন করা হতে পারে,‘ ১৫ই এপ্রিল বলেছিলেন পাপন।
বিসিবির এহেন ফর্মুলার কড়া সমালোচনা করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুখ আহমেদ। ক্রিকেটারদের অযথা চাপের মুখে ফেলে সেরা পারফর্মেন্স আদায় করা যায় না, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নির্বাচক ফারুখ।
‘ম্যানেজমেন্ট টিমটা নিয়ে একটু অনিশ্চয়তায় আছে। এটা আমার ভালো লাগে নি। আমি দেখেছি যে ২৩ মে পর্যন্ত সময় আছে, এটা নিয়ে এখনো চিন্তা করছে। এটা আসলে পুরো দলকে আত্মবিশ্বাস দিবে না এমন করে চিন্তা করলে। কারণ প্লেয়াররা এত বড় টুর্নামেন্ট খেলতে যাবে। আমরা সবাই জানি যে জুন-জুলাই এ বিশ্বকাপ হবে। এটার পরিকল্পনা আরও ছয়-সাত মাস থেকেই হওয়া উচিত ছিল।
‘সেটাও হয়েছে কিন্তু সাথে সাথে বলা হয়েছে যে আয়ারল্যান্ডের পারফর্মেন্সের পরে পরিবর্তন আসতে পারে দলে। এটা আমি আসলে খুব ভালোভাবে দেখি না। টিমের প্লেয়াররা আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগবে। যদি ভালো না খেলি বাদ পড়ে যেতে পারি। এইসব না বলে যদি বলতাম, এটাই আমাদের সেরা দল, যারা ফর্মে নেই আশা করব তাঁরা ফর্মে ফিরে আসবে। তাহলে কিন্তু আত্মবিশ্বাসটা একটু ভালো হত।‘
আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া আয়ারল্যান্ড সিরিজ বাংলাদেশ দলের বেশ কিছু ক্রিকেটারের পারফর্মেন্স আতশি কাঁচ দিয়ে দেখা হবে। বাড়তি দুইজন ক্রিকেটার হিসেবে আয়ারল্যান্ড সিরিজের বহরে থাকবে ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি রাব্বি ও অফ স্পিনার নাঈম হাসান। ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা রাব্বির সুযোগ থাকবে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নড়বড়ে অবস্থায় থাকা ব্যাটসম্যানদের জায়গায় দখল করার। যারা মূল স্কোয়াডে আছেন, তাদের মাথার ওপর যথারীতি খড়গ হাতে অপেক্ষামান অবস্থায় থাকবে নির্বাচকরা।