বহু সমস্যার দেশ নিউজিল্যান্ড

ছবি: ছবি- বিসিবি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ দল ওয়ানডে ফরম্যাটে কোনো প্রতিযোগিতাই করতে পারে নি। তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ওপেনার তামিম ইকবাল তিন ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন দীর্ঘ ইনিংস খেলতে। অচেনা লেগেছে ব্যাটিং অর্ডারের আরেক স্তম্ভ মুশফিকুর রহিমকেও। লিটন দাস, সৌম্য সরকাররাও সম্পূর্ণ খোলস ছাড়া হতে পারেননি।
ফলাফল, তিন ম্যাচেই বাংলাদেশের স্কোর ছিল মাঝারি মানের। আপাত দৃষ্টিতে টপ অর্ডারের ব্যর্থতাই ধবল ধোলাই এর মূল কারণ মনে হলেও এর সাথে আরও কিছু কারণ জুড়ে দেয়া যায়।
ওয়ানডে সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিরিজ জুড়ে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা নিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বলেছেন, 'প্রথম দুইটা ম্যাচ হয়নি। তখন আমি না শুধু। পুরো দল ইতিবাচক ছিল। আমরা মনে হয় ভিন্ন কিছু করতে গিয়েছি। খেলা হয়তো বা এই উইকেটে সুইং বা বাউন্স থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বেসিকে থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেটা আমরা করতে পারি নি।

'হয়তো বা দুইটি ম্যাচে যা হয়েছে আজকেও তাই হয়েছে। কাল হয়তো এটা চিন্তা করি নি। কারণ সব দিনই তো ইতিবাচক থাকতে হবে। একই ভাবে গিয়েছে। এশিয়া কাপে বা ওয়েস্ট ইন্ডিজে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে হয়তো তামিম রান করেছে। এশিয়া কাপে যেমন অনুভব করেছি এখানেও হয়তো সেটা অনুভব করছি। এশিয়া কাপে ২০ রানে ৩০ রানে তিন উইকেট গিয়েছে। এখানেও সেটা হয়েছে।'
তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ দলের বিশেষজ্ঞ পেসারদের দুর্বলতার জায়গায় খোলাসা করে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং সহায়ক উইকেট। উইকেটে বল গ্রিপ না করলে প্রতিপক্ষকে থামিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশি পেসারদের। ডেথ ওভারে মুস্তাফিজ, মাশরাফিদের অন্যতম হাতিয়ার স্লো ডেলিভারি, কাটার। উইকেটের সাহায্য থাকায় এই ডেলিভারি গুলো কিছুটা থেমে ব্যাটে আসে। নিউজিল্যান্ডে দেখা যায় উল্টো চিত্র। ব্যাটসম্যানরা খুব সহজেই কাটার, স্লোয়ার বল পড়তে পারে। ফলে তৃতীয় ওয়ানডের এক পর্যায়ে খেই হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশি বোলাররা আক্রমণও করে নি, রক্ষণাত্মক বোলিংও করে নি।
সাকিব আল হাসানের না থাকাও বাংলাদেশ দলের হারের অন্যতম কারণ বলা চলে। বাংলাদেশ দলের কম্বিনেশনের জন্য সাকিব আল হাসান নিউক্লিয়াসের মতন। সাকিব একাদশে না থাকলেও বাড়তি বোলারের খোঁজ করতে হয়, একই সাথে আরেকজন বাড়তি ব্যাটসম্যানও। নিউজিল্যান্ডের মতন কঠিন কন্ডিশনে ভঙ্গুর কম্বিনেশন নিয়ে পার পেয়ে যাওয়া কঠিন।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিউইদের বিপক্ষে খেলার আগে বাংলাদেশ দল মানসিক দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। নিউজিল্যান্ডের বাইরের কন্ডিশনে বাংলাদেশের বিপক্ষে কিউইদের রেকর্ড ইতিবাচক নয়। ঘরের মাঠে শেষ দুইবারের দেখায় দুইবারই নিউজিল্যান্ডকে ধবল ধোলাই করেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে ২০১৭ সালে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কিউইদের কন্ডিশনে অন্য বাংলাদেশকে দেখা যায়।
শরীরী ভাষায় আমুল পরিবর্তন দেখা যায় বাংলাদেশ দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারদের। ঘরের মাঠে সত্যিকারের বাঘ নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনকে খুব একটা পছন্দ করে না। ইনজুরি প্রবণতাও বেড়ে যায় কয়েকগুন। বাংলাদেশ দলের ওপেনার তামিম ইকবাল বলেছেন,
'সিরিজ শুরুর আগে আমাকে যখন প্রশ্ন করা হতো আমি কি চাই? তখন আমি উত্তর দিতাম, একটা ম্যাচ জিততে চাই এখানে। একটা ম্যাচ জিতে কুফাটা কাটানো দরকার, প্রথম দুই ম্যাচে তো হয় নি, আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি নি। এই কারণেই বেশ হতাশ। সব ম্যাচ হারলেও এখানে আমাদের গত সিরিজটা বরং ভালো ছিল।
'একটা ম্যাচ তো জেতার কথা ছিল এবং অন্য আরেকটাতেও আমাদের সুযোগ ছিল। আমার খুব সহজ একটা সূত্র আছে, যেখানে আমি ভালো খেলি সেটাই বিশ্বের সেরা শহর। যেখানে ভালো খেলিনা সেটা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দেশ। আগামী দুই দিন পর কি হবে জানি না।'