স্নায়ুর লড়াইয়ে জিতলেন মাশরাফি

ছবি: ছবিঃ- ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ক্যারিয়ারের ২০০তম ম্যাচের দিন নিজের সেরা ফর্মে ছিলেন। ১৮ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া মাশরাফির ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়।
একের পর এক ইনজুরি পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই মাশরাফির সঙ্গী হয়ে ছিল। মাশরাফি ক্যারিয়ারের শুরুতে গতির পেছনে ছুটলেও দ্রুত বুঝতে সক্ষম হন, গতি নয়, মস্তিস্ক দিয়ে টিকে থাকবে হবে। ২০১১ সালে ইনজুরির ধাক্কা থেকে ফেরার পর মাশরাফির ক্যারিয়ার নতুন মোড় নেয়। ততদিনে ছয়বার মাশরাফিকে শল্যবিদের ছুরির নিচে যেতে হয়।
ক্যারিয়ারের শেষ ধাপে এসে ধারাবাহিকতায় মনোযোগ দিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। গতি নয়, লাইন লেন্থ ও সুইংয়ের সাথে স্লো বল ও কাটারে মাশরাফি নিজেকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলতে সক্ষম হন। দেশের হয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশ উইকেট শিকারি এখন তিনিই।

শুধু একজন পারফর্মার হিসেবে নয়, একজন অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি ক্রিকেট ইতিহাসের মহান তারকাদের কাতারে জায়গা করে নিবেন। মাঠে ও মাঠের বাইরের জনপ্রিয়তা এই সময়টা মাশরাফিকে অবিশ্বাস্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। তবে এই মাশরাফিরই ২০০তম ম্যাচের আগে অনেক আলোচনা সমালোচনার জন্ম নিয়েছে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন ইস্যুতে।
মাশরাফি, যিনি কিনা বাংলাদেশ ক্রিকেটের বরপুত্র হিসেবে পরিচিত, তাঁর রাজনীতিতে অংশগ্রহন দেশের ক্রিকেট ভক্তদের দুই ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, নির্বাচন-রাজনীতি মাশরাফির মনোযোগ ক্রিকেট থেকে সরিয়ে নিবে না তো?
উইন্ডিজদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে খেলবেন কিনা, এই ইস্যুতেও সন্দেহ ছিল। তবে সব শঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। ওয়ানডে সিরিজের আগে নির্বাচন সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের জবাব দিয়ে ক্রিকেটে মনোযোগ দিয়েছেন, দলের ওপর আলাদা করে চাপ পড়তে দেন নি তিনি।
নিজের ২০০তম ম্যাচে এসে বল হাতে সেই পারফর্মার মাশরাফিকেই দেখলো বাংলাদেশ। উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের কোন রকম সুযোগ না দিয়ে দেখিয়েছেন লাইন লেন্থ ও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারিশমা।
১০ ওভারে ৩০ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে উইন্ডিজ মিডেল অর্ডারে ধস নামান তিনি। মুস্তাফিজ শেষ বেলায় তিন উইকেট নিলেও ক্যারিয়ারের ২০০তম ম্যাচে মিডেল ওভারে মাশরাফির স্পেলের আলো কেড়ে নেয়া কঠিন হবে।
শাই হোপ, ড্যারেন ব্রাভো ও রভম্যান পাওয়েলের মত উপরের সারির ব্যাটসম্যানদের সাজঘরে ফিরিয়েছেন তিনি, এবং সেটা ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। মাঠের পারফর্মেন্স দিয়ে বাইরের বিতর্ক মুছে নিজেকে আরেকবার চেনালেন মাশরাফি, নিজের ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচে।
ব্যক্তি মাশরাফির কাছে অবশ্য বিষয়টি নতুন নয়। কারণ ২০১৪ সালে দলের অধিনায়কত্ব নেয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফর্মার তিনিই। এই সময়ে ৬১টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৮১ উইকেট নিয়ে, যা বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ৫৭ ম্যাচে ৭৪ উইকেট নিয়ে মাশরাফির পরে অবস্থান সাকিব আল হাসানের। সেই ধারবাহিকতার স্বাদ এখনও পেয়ে যাচ্ছেন মাশরাফি। সেই ধারবাহিকতা দিয়েই জয় করলেন মাঠের বাইরের হাজারো বিতর্ক, জয় করলেন স্নায়ুর চাপ।