মাঠে ফিরছে পূর্ণ শক্তির বাংলাদেশ

ছবি: বাংলাদেশ দল

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত সিরিজে তামিম ইকবাল এবং সাকিব আল হাসানদের ছাড়াই সিরিজ জিতেছিলো বাংলাদেশ। ইনজুরি কাটিয়ে এবার উইন্ডিজদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ফিরেছেন তাঁরা।
সুতরাং আগামীকাল মিরপুর শের-এ বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই খেলতে নামছে লাল সবুজের দলটি। ফেভারিটদের কাতারে থেকেই অবশ্য ম্যাচটি খেলবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
কেননা ওয়ানডেতে কাগজে কলমে উইন্ডিজদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বর্তমানে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের সপ্তমে অবস্থান করা টাইগারদের মোট রেটিং পয়েন্ট ৯৩। যেখানে মাত্র ৭২ পয়েন্ট নিয়ে নবমে আছে ক্যারিবিয়ানরা।
তবে এই ম্যাচে কিছুটা মধুর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্বাগতিকদের। ইনজুরি কাটিয়ে ওপেনিংয়ে ফেরা তামিম ইকবালের সঙ্গী কে হবেন সেটি নিয়েই এখন চলছে জল্পনা কল্পনা। কারণ উইন্ডিজদের বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ আরও একবার দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। তাঁর পাশাপাশি দারুণ ফর্মে আছেন ইমরুল কায়েস এবং লিটন কুমার দাস।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দুটি শতক হাঁকিয়েছিলেন ইমরুল। এছাড়া উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন এশিয়া কাপের ফাইনালে শতক হাঁকানোর পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেছিলেন আশি ঊর্ধ্ব একটি ইনিংস।
এর ফলে ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বেই রয়েছেন এখন টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে প্রস্তুতি ম্যাচে ১০৩ রানের দারুণ ইনিংস খেলার দরুন সৌম্য সরকার যে অগ্রাধিকার পেতে পারেন তা বলাই বাহুল্য। অবশ্য সৌম্যকে তিন নম্বরে এবং ইমরুলকে ওপেনিংয়েও খেলাতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।
এদিকে আগামীকালের ম্যাচে একাধিক পেসার খেলানো হবে কিনা সেটি নিয়ে এখনও রয়েছে কিছুটা ধোঁয়াশা। অবশ্য প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন মূলত মিরপুরের উইকেট দেখেই একাদশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন তাঁরা। নান্নু বলেছিলেন,
'যেহেতু আমরা মিরপুরে খেলবো। সেই হিসেবে সেখানকার পিচের ধারণা করে দল সাজানো হবে যে তিনটি পেসার নাকি স্পিনার খেলবে। এটি আসলে টিম ম্যানেজমেন্টের বিষয়, নির্বাচকদের না। একটি আলোচনা হবে। তবে যেটি দলের জন্য ভালো হবে সেটাই করা হবে।'
যদিও ধারণা করা যাচ্ছে হোম অফ ক্রিকেটে উইন্ডিজদের স্পিন দিয়েই ঘায়েল করতে চাইবে টাইগাররা। সেক্ষেত্রে সাকিব আল হাসান এবং মেহেদি হাসান মিরাজের সাথে দলে অন্তর্ভুক্তি ঘটতে পারে নাজমুল ইসলাম অপুর। সেক্ষেত্রে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে পেস আক্রমণ সামলাতে দেখা যেতে পারে মুস্তাফিজুর রহমানকে।

মুখোমুখিঃ
এখন পর্যন্ত দুই দল মোট ৩১টি ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে জয়ের পাল্লা ভারি ক্যারিবিয়ানদের দিকেই। মোট ২০টি ম্যাচে টাইগারদের বিপক্ষে জয় পেয়েছে তারা। অপরদিকে বাংলাদেশ জিতেছে ৯টিতে এবং বাকি ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।
পিচ এবং কন্ডিশনঃ
পরিসংখ্যান বলছে মিরপুর শের-এ বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট থেকে স্পিনাররাই বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন। আর টাইগারদের কথা চিন্তা করে আগামীকালও একই ধরণের উইকেট দেখা যেতে পারে। তেমনটি হলে টেস্ট সিরিজের মতো এবার ওয়ানডেতেও স্পিনারদের ওপর জোর দিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।
স্পট লাইটে থাকবেন যারাঃ
তামিম ইকবালঃ উইন্ডিজদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত মোট ১৯টি ওয়ানডে খেলেছেন টাইগার ওপেনার তামিম। যেখানে তাঁর সংগ্রহ ৩৬.৬৪ গড়ে ৬২৩ রান। রয়েছে ২টি শতক এবং ৩টি অর্ধশতক।
সম্প্রতি ইনজুরি থেকে ফিরে প্রস্তুতি ম্যাচে ১০৭ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেছেন ২৯ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। সুতরাং আগামীকাল তাঁর ব্যাটেই চেয়ে থাকবে দল তথা গোটা বাংলাদেশ।
মাশরাফি বিন মর্তুজাঃ টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার অধীনে বর্তমানে সেরা সময় পার করছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। তাঁর জ্বলে ওঠার দিনে যেকোনো প্রতিপক্ষকেই যে হারাতে সক্ষম টাইগাররা সেটি এর আগেও প্রমাণ হয়েছে বেশ কয়েকবার।
শুধু তাই নয়, উইন্ডিজদের বিপক্ষে নিজের বোলিং পারফর্মেন্সও দারুণ। ১২টি ওয়ানডে ম্যাচে মাত্র ৪.৬৭ ইকোনমি রেটে ১৮ উইকেট শিকার করেছেন ৩৫ বছর বয়সী নড়াইল এক্সপ্রেস। যেখানে ৪ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন একবার। সবমিলিয়ে আগামীকাল পাদপ্রদীপের আলোতেই থাকছেন টাইগার দলপতি।
শিমরন হেটমায়ারঃ বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র ৩টি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে ২১ বছর বয়সী শিমরন হেটমায়ারের। আর এই তিন ম্যাচেই নিজের জাত চিনিয়েছেন দুর্দান্তভাবে।
এখন পর্যন্ত ৬৯ গড় এবং ৯৭ স্ট্রাইক রেটে টাইগারদের বিপক্ষে তাঁর সংগ্রহ ২০৭ রান। যেখানে রয়েছে ১টি শতক এবং সমান সংখ্যক অর্ধশতক। সুতরাং আগামীকালের ম্যাচে তাঁর ব্যাটেই তাকিয়ে থাকবে ক্যারিবিয়ানরা।
কিমার রোচঃ ৩০ বছর বয়সী এই উইন্ডিজ পেসারের তান্ডব গত ক্যারিবিয়ান সফরেই দেখেছে বাংলাদেশ। গতির ঝড় তুলে সফরকারী ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করেছিলেন তিনি।
টাইগারদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১৩টি ওয়ানডে খেলেছেন রোচ। যেখানে তাঁর শিকার ৫.১২ ইকোনমি রেটে ২৮টি উইকেট। পাঁচ উইকেট শিকার করার কীর্তি গড়েছেন ২ বার এবং ৪ উইকেট নিয়েছেন ১ বার।
বাংলাদেশ স্কোয়াডঃ
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, আবু হায়দার রনি, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, নাজমুল ইসলাম অপু, আরিফুল হক, লিটন কুমার দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন, মোহাম্মদ সাইফুদিন, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন।
উইন্ডিজ স্কোয়াডঃ
রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), ফাবিয়ান অ্যালেন, দেবেন্দ্র বিশু, সুনীল আমব্রিস, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, ড্যারেন ব্রাভো, রস্টন চেজ, চন্দরপল হেমরাজ, শিমরন হেটমায়ার, শাই হোপ (উইকেটরক্ষক), কিমো পল, কাইরন পাওয়েল, কিমার রোচ, মারলন স্যামুয়েলস, ওশানে থমাস।