হেটমিয়ার ঝড় থামালেন মিরাজ, ইমরুলের ইনজুরি

ছবি: ছবিঃ ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশঃ ৩২৪ অল আউট; ওভার-৯২.৪
মমিনুল ১২০, (গ্যাব্রিয়েল ৭০/৪)
উইন্ডিজ ১৮০/৬, ৩১.৫ ওভার
ডরউউচ ৩০* (সাকিব ৩৬/২)
টসঃ বাংলাদেশ
দ্বিতীয় দিন
চট্টগ্রাম টেস্টে দ্বিতীয় দিন সকালে ৩২৪ রানে অল আউট হয়েছে বাংলাদেশ। আগের দিন ৫৬ রানের জুটি গড়ে দিন শেষ করা নাঈম-তাইজুল এদিন মাত্র ৯ রান যোগ করেছেন স্কোরবোর্ডে। দলীয় ৩২৪ রানে ২৬ রান করা নাঈমকে বিদায় করার পর মুস্তাফিজকেও ০ রানে বিদায় করেন ওয়ারিকেন।
অপরপ্রান্তে থাকা তাইজুল ইসলাম অপরাজিত থাকেন ৩৯ রানে। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল এবং জোমেল ওয়ারিকেন নেন ৪টি করে উইকেট। জবাবে এখন ব্যাট করছে উইন্ডিজরা। এখন পর্যন্ত তাদের স্কোর ৬ উইকেটে ১৮০ রান।

ইমরুলের ইনজুরিঃ সিলি পয়েন্টে ফিল্ডিংয়ের সময় শেন ডরউইচের জোড়াল শট গিয়ে আঘাত হানে ইমরুলের পায়ে। এরপরই মাঠ ছাড়তে হয় বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে।
বিধ্বংসী হেটমিয়ারঃ ৫ উইকেট হারিয়ে বসলেও এর প্রভাব নিজের উপর পরতে দেন নি হেটমিয়ার। বাংলাদেশী বোলারদের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ৪৪ বলে ফিফটি তুলে নিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। অবশ্য হেটমিয়ার ফিফটি হাঁকানোর আগে ৫ রান জরিমানা দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ওভারে উইকেট রক্ষক মুশফিক বল তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে বলটি যেয়ে উইকেটের পেছনে রাখা হেলমেটে লাগলে ৫ রান জরিমানা গুনতে হয় বাংলাদেশ দলকে। কিন্তু ফিফটি হাঁকানোর পর ইনিংস বেশীক্ষণ লম্বা করতে পারেন নি হেটমিয়ার। মেহেদি হাসান মিরাজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৬৩ রানে বিদায় নেন তিনি।
নাঈমের জোড়া আঘাতঃ লাঞ্চের পর ব্যাট করতে নেমে হাল ধরে খেলছিলেন রস্টন চেজ এবং সুনিল আম্ব্রিস। কিন্তু তাদের দুজনের ৪৬ রানের জুটি ভাঙ্গেন অভিষিক্ত স্পিনার নাঈম হাসান। ইমরুল কায়েসের হাতে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে ৩১ রানে ফেরেন চেজ। এর খানিক পর নাঈমকে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে লেগ বিফরের ফাঁদে পড়েন আম্ব্রিস।
সাকিবের জোড়াঃ ইনজুরির কারনে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু বল হাতে মাঠে ফিরে প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান এই অলরাউন্ডার। ১ রান করা শাই হোপকে দুর্দান্ত এক ডিলেভারিতে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। একই ওভারের পঞ্চম বলে ক্রেইগ ব্রাথওয়েটকেও বিদায় করেন তিনি। ব্যক্তিগত ১৩ রানে সৌম্য সরকারের হাতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন এই ওপেনার।
তাইজুলের প্রথমঃ
শুরুটা দেখে শুনেই করেছিলেন দুই উইন্ডিজ ওপেনার ক্রেইগ ব্রাথওয়েট এবং কিরন পাওয়েল। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজের বলে আউট হলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান পাওয়েল। কিন্তু জীবন পেয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেন নি এই ব্যাটসম্যান। ব্যক্তিগত ১৪ রানে তাইজুল ই??লামকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফরের ফাঁদে পরে বিদায় নেন তিনি।
প্রথম দিনঃ
এর আগে প্রথম দিন উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে পার করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম দুই সেশনে ব্যাট হাতে দাপট দেখালেও শেষ সেশনে উইন্ডিজ পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের এক স্পেলে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের মিডেল অর্ডার। শেষ বেলায় দলের হয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তাইজুল ইসলাম এবং নাঈম হাসান।
দুজনের ৫৬ রানের জুটিতে দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ৩১৫ রান। দলের পক্ষে এদিন ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন মমিনুল হক। যদিও ব্যক্তিগত ১২০ রানে বিদায় নিতে হয়েছে তাকে। সফরকারীদের পক্ষে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল একাই নিয়েছেন ৪টি উইকেট।
এদিকে দিনের শুরুতে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অধিনায়কের সিদ্ধান্তে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি টাইগারদের। ব্যক্তিগত ০ রানে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার সৌম্য সরকার।
সৌম্য বিদায় নেয়ার পর ইমরুলের সঙ্গে হাল ধরার চেষ্টা করেছেন মমিনুল। যদিও দুইবার জীবন পেয়েছেন ইমরুল। কিন্তু তারপরও সেটাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন এই ওপেনার। দুজনের ১০৪ রানের জুটি ভেঙ্গেছেন জোমেল ওয়ারিকেন। ইমরুল বিদায় নেন ৪৪ রান করে।
লাঞ্চের পর মোহাম্মাদ মিথুন ব্যক্তিগত ২০ রানে অহেতুক শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিলেও সাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে মমিনুল তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট শতক।
ইনিংসের ৫০ তম ওভারে ক্যারিবিয়ান স্পিনার রস্টন চেজের করা তৃতীয় বলটি বাউন্ডারি পার করে শতক হাঁকান ২৭ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। আর এরই সাথে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টানা তিন টেস্টে শতক হাঁকানোর কীর্তি গড়লেন তিনি। এরপর সাকিব এবং মমিনুল মিলে হাল ধরে খেলে চা বিরতিতে যান।
চা বিরতির পর বাত করতে নেমেই শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে উইকেট বিলিয়ে দেন মমিনুল হক। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলকে মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ১২০ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। একই ওভারের শেষ বলে লেগ বিফরের ফাঁদে পরে বিদায় নেন মুশফিক।
এর দুই ওভার পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দুর্দান্ত ডিলেভারিতে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান এই পেসার।একই কান্ড ঘটান অধিনায়ক সাকিবও। গ্যাব্রিয়েলের বলে বোল্ড হয়ে তাঁকেও ফিরতে হয়ে হয় সাজঘরে।
চা বিরতির পর ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। মিরাজ ২২ রান করে বিদায় নিলে ৩০০'র নীচে অলআউট হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয় বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু ৮ উইকেট হারিয়ে বসা বাংলাদেশকে উদ্ধার করেন দুই টেইলেন্ডার ব্যাটসম্যান তাইজুল ইসলাম এবং নাঈম ইসলাম। দুজনের ৫৬ রানের জুটিতে প্রথম দিন পার করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ একাদশঃ সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুর ইসলাম, নাঈম হাসান।
উইন্ডিজ একাদশঃ ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), সুনীল আমব্রিস, দেবেন্দ্র বিশু, রস্টন চেজ, শেন ডওরিচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল,, শিমরন হেটমায়ার, শাই হোপ, কাইরন পাওয়েল, কেমার রোচ, জোমেল ওয়ারিকেন।