ছন্নছাড়া বাংলাদেশের পাইপলাইন

ছবি: পাইপ লাইনের ক্রিকেটাররা

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বাংলাদেশ দলের পাইপলাইনের হাল খুবই করুণ। গত কয়েক বছর ধরে তরুনদের নিয়মিত ব্যর্থতা চিত্র এবারের এশিয়া কাপে প্রকট আকার ধারন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দলের সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারের পরিসংখ্যান দেখলে তরুন ক্রিকেটারদের বর্তমান অবস্থা স্পষ্ট বুঝা যায়।
ভারতের বিপক্ষে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচেও একই চিত্র দেখা গিয়েছে। সেই ম্যাচের ৩৩তম ওভারের মাথায় মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের উইকেট তিনটি হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। তিন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বিদায় নেয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোটা ছিল অনেকটা অলৌকিক ঘটনাকে বাস্তবে রূপান্তর করার মত।
সেই পরিস্থিতিতে একমাত্র প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন শুধু মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। কিন্তু তাঁর প্রতিভা নিয়ে কোন প্রশ্ন না থাকলেও চাপ সামলানোর মত ব্যাটসম্যান যে তিনি নন এর প্রমাণ মিলেছে এই ম্যাচেই।
রবীন্দ্র জাদেজার করা ৩৪তম ওভারে একটি স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক ধোনির গ্লাভসে ধরা পড়েন সৈকত। আর এরই সাথে জাদেজাকে চতুর্থ উইকেট উপহার দিয়ে আসেন তিনি।
দলের বিপর্যয়ের সময় সৈকতের এই ধরণের শট সিলেকশন অনেকটা দৃষ্টিকটু ছিল। এমনকি যে ৪২টি বল খেলেছেন তিনি তার প্রায় সবগুলোতেই তাঁকে বেশ নড়বড়ে লাগছিল। সৈকতের এই বিবর্ণ রূপটিই যেন বাংলাদেশের পাইপ লাইনের প্রতিবিম্ব।
দেশে মূল ব্যাকআপ ক্রিকেটারের সংখ্যা দশ জনের মত হলেও তাদের সামর্থ্য নিয়ে বড় ধরণের প্রশ্ন রয়েছে। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিডল অর্ডার??? মোহাম্মদ মিথুন পেয়েছিলেন অর্ধশতকের দেখা। কিন্তু সেই পর্যন্তই।
এরপরই সৈকতের মতো তিনিও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন টানা দুই ম্যাচে। আফগানিস্তান এবং ভারতের বিপক্ষে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে যথাক্রমে ২ এবং ৯ রান। সুতরাং সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা জ্বলে উঠতে না পারলে যে বাংলাদেশ দলও তিমিরেই থাকবে সেটাই যেন বর্তমানে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে দেশের ব্যাক আপ ক্রিকেটার বলতে দলের সাথে থাকা লিটন, মোসাদ্দেক, মিথুন, শান্তরা ছাড়া আরও রয়েছেন সাব্বির, বিজয়, ইমরুল, নাসিররা। কিন্তু তাদের কারোর পারফর্মেন্সই খুব একটা আহামরি নয়।
পরিসংখ্যান বলছে দলের ব্যাক আপ ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গড় সৌম্য সরকারের। এখন পর্যন্ত ৩২টি ওয়ানডেতে ৩৪.৫৩ গড়ে ৯৬৭ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। যেখানে রয়েছেন ১টি শতক এবং ৬টি অর্ধশতক।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড় আরেক ওপেনার আনামুল হক বিজয়। ৩৭টি ম্যাচে ৩০.৫২ গড়ে ১০৩৮ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। যেখানে হাঁকিয়েছেন ৩টি শতক এবং সমান সংখ্যক অর্ধশতক। গড়ের দিক থেকে তৃতীয়তে অবস্থান নাসির হোসেনের। ৬৫ ম্যাচে ২৯.১১ গড়ে ১২৮১ রান তাঁর। রয়েছে ১টি শতক এবং ৬টি অর্ধশতক।
দেখে নিন ব্যাক আপ ব্যাটসম্যানদের রান সংখ্যা এবং তাঁদের গড়-
১। সাব্বির রহমান- ৫৪ ম্যাচে ২৪.৫১ গড়ে ১০৫৪ রান (৫টি অর্ধশতক)
২। আনামুল হক বিজয়- ৩৭ ম্যাচে ৩০.৫২ গড়ে ১০৩৮ রান (৩টি শতক, ৩টি অর্ধশতক)
৩। লিটন কুমার দাস- ১৫ ম্যাচে ১২.৭১ গড়ে ১৭৮ রান (কোন অর্ধশতক/ শতক নেই)
৪। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত- ২৪ ম্যাচে ৩১ গড়ে ৩৪১ রান (১টি অর্ধশতক)
৫। নাসির হোসেন- ৬৫ ম্যাচে ২৯.১১ গড়ে ১২৮১ রান (১টি শতক, ৬টি অর্ধশতক)
৬। মোহাম্মদ মিথুন- ৬ ম্যাচে ২২ গড়ে ১১০ রান (১টি অর্ধশতক)
৭। ইমরুল কায়েস- ৭০ ম্যাচে ২৮.৯৫ গড়ে ১৯৯৮ রান (২টি শতক, ১৪টি অর্ধশতক)
৮। নাজমুল হোসেন শান্ত- ২ ম্যাচে ৭ গড়ে ১৪ রান
৯। মমিনুল হক- ২৭ ম্যাচে ২৩ গড়ে ৫৫২ রান (৩টি অর্ধশতক)
১০। সৌম্য সরকার- ৩২ ম্যাচে ৩৪.৫৩ গড়ে ৯৬৭ রান (১টি শতক, ৬টি অর্ধশতক)