টানা পাঁচ হারের পর স্বস্তির জয়

ছবি:

বাংলাদেশ ১৭১/৫, ওভার ২০
সাকিব - ৬০ (৩৮), তামিম - ৭৪ (৪৪)
নার্স ২/২৪, পোল ২/৩৯
উইন্ডিজ ১৫৯/৯, ওভার ২০
পাওয়েল ৪৩, ফ্লেচার ৪৩
মুস্তাফিজ ৩/৫০, সাকিব ২/১৯, রুবেল ১/৩৫, অপু ৩/২৮
নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের পর টানা পাঁচ ম্যাচে হারের পর অবশেষে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ দল। ফ্লোরিডায় প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শকদের সামনে উইন্ডীজদের ১২ রানে হারিয়ে সিরিজে ফিরল সাকিব আল হাসানের দল। ব্যাটে বলে দারুন পারফর্মেন্স দেখিয়ে সিরিজ জয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেয়া ১৭২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা উইন্ডিজদের কাজটা কঠিন করে তুলেছিল মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম টি-টুয়েন্টি ম্যাচের মত এই ম্যাচেও মুস্তাফিজের প্রথম ওভারে লেগ বিফরের ফাঁদে পড়েন ওপেনার এভিন লুইস।
১ রান করেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। লুইসের বিদায়ে ক্রিজে আসা আন্দ্রে রাসেল চার-ছয় খুঁজে নিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের চাপে ফেলেন। কিন্তু সতর্ক মুস্তাফিজের বিপক্ষে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি তিনি।
মুস্তাফিজের দ্বিতীয় ওভারে ছয় ও চার হাঁকিয়ে বিধ্বংসী রূপ ধারন করলেও শেষ পর্যন্ত পাতা ফাঁদে পা দেন রাসেল। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আসা মুস্তাফিজের বাউন্সারে কট বিহাইন্ড হন ১০ বলে ১৭ রান করা আন্দ্রে রাসেল।
বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি অভিজ্ঞ মারলন স্যামুয়েলসের ইনিংসও। অধিনায়ক সাকিবের বোলিংয়ে ১০ রান যোগ করে আউট হন তিনি। নতুন ব্যাটসম্যান রামদিন ক্রিজে আসলে রান আটকে চাপ সৃষ্টি করে স্পিনাররা।

কিন্তু উইকেট আসে ফাস্ট বোলার রুবেলের দ্বিতীয় ওভারে। ইনিংসের অষ্টম ওভারে এসে ইন সুইং ডেলিভারিতে রামদিনকে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলেন তিনি। উপরের সারির চার ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন পাওয়েল ও ফ্লেচার।
অর্ধশত রানের জুটি গড়ে উইন্ডিজদের ম্যাচে ফেরায় এই জুটি। অবশ্য দারুন বোলিং করা আবু হায়দার রনির বোলিংয়ে জুটি ভাঙ্গার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বাউন্ডারিতে থাকা আরিফুল পাওয়েলের ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ হন।
তবে ১৫তম ওভারে এসে জুটি ভাঙ্গেন বাঁহাতি স্পিনার অপু। ৩৮ অলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন উইন্ডিজ ওপেনার। স্থায়ী হয়নি উইন্ডিজ কাপ্তান ব্রাথওয়েটের ইনিংস। সাকিবের বোলিংয়ে লিটনের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও পাওয়েলের ব্যাটে স্বপ্ন দেখতে থাকে উইন্ডিজ। কিন্তু ইনিংসের ১৯তম ওভার নিজের শেষ ওভারে এসে উইন্ডিজদের স্বপ্ন ভঙ্গ করেন মুস্তাফিজ। বাউন্সারের ফাঁদে ফেলে পাওয়েলকে মুশফিকের দারুন ক্যাচে পরিনত করেন তিনি।
একই ওভারে অ্যাশলে নার্স চার ও ছয়ে শেষ ওভারের সমীকরণ ছয় বলে ১৫ রানে কমিয়ে আনলেও শেষ রক্ষা হয়নি উইন্ডিজদের। কিন্তু শেষ ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে উইন্ডিজদের কফিনে শেষ পেরেক গেঁথে দেন বাঁহাতি স্পিনার অপু।
শেষ পর্যন্ত নয় উইকেটে ১৫৯ রানে থামে স্বাগতিকদের ইনিংস। মুস্তাফিজের সাথে অপু তার বাঁহাতি স্পিনে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন। এছাড়া সাকিব দুটি ও রুবেল একটি উইকেট শিকার করে বাংলাদেশের জয়ে অবদান রেখেছেন।
এর আগে টপ অর্ডার ব্যর্থতার পর তামিম ও সাকিবের ব্যাটে লড়াই করার মত মূলধন পায় বাংলাদেশ। টসে হেরে আগে ব্যাট করে তামিম ইকবাল ও সাকিবের জোড়া ফিফটি বাংলাদেশকে ১৭১/৫ রানে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়।
তবে বাংলাদেশি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের শুরুটা ভালো ছিল না। বাঁহাতি-ডানহাতি কম্বিনেশনের ভাবনা থেকে তামিম ও লিটনকে এই ম্যাচে ওপেন করতে দেখা যায়। কিন্তু দ্রুত উইকেট পতন থামাতে পারেনি বাংলাদেশ। অফ স্পিনার অ্যাশলে নার্সের বলে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ইনসাইড আউট শট খেলার চেষ্টায় ক্যাচ আউট হন লিটন।
১ বল খেলে ১ রান যোগ করে দলীয় ৮ রানে আউট হন তিনি। লিটনের পথে হেঁটে নার্সকে উইকেট দেন আরেক ডানহাতি মুশফিকও। চতুর্থ ওভারে নার্সকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে রাসেলের সহজ ক্যাচে থামে মুশফিকের ইনিংস।
চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসা সৌম্য সরকারও বিশেষ কিছু করে দেখায়ে পারেননি। ১৮ বলে ১৪ রান যোগ করে কিমো পোলের স্লোয়ার বলে আউট হন তিনি। অপর প্রান্ত থেকে একা হাতে দলের স্কোর বোর্ড সচল রাখার চেষ্টা করেন তামিম।
আরেক বাঁহাতি সাকিব আল হাসান ক্রিজে এসেই আগ্রাসী ব্যাটিং করার চেষ্টা করেন। ইনিংসের ১৪তম ওভারে এই জুটির ফিফটি পূর্ণ হয়। একই সাথে বাংলাদেশের স্কোর একশ ছাড়িয়ে যায় এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের হাত ধরে।
পরের ওভারেই ৩৫ বল খেলে টি-টুয়েন্টি সপ্তম ফিফটি পূর্ণ করেন তামিম, যা তামিমের ক্যারিয়ারের দ্রুততম ফিফট। ফিফটি পূর্ণ করার পর আরও ভয়ঙ্কর রুপ ধারন করেন টাইগার ওপেনার। বাউন্ডারি ও ওভার বাইন্ডারিতে দলের স্কোর দ্রুত বাড়াতে থাকেন তিনি।
রাসেলের বোলিংয়ে বিধ্বংসী ব্যাটিং করে ২২ রান তুলে নিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ আউট হন তিনি। ৪৪ বল খেলে চারটি ছয় ও ছয়টি চারের সাহায্যে ৭৪ রানের ইনিংস খেলে আউট হন তামিম।
তামিমের বিদায়ে দলকে বড় স্কোরে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব বর্তায় সাকিবের কাঁধে। অধিনায়ক হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পূর্ণ করে সেই পথেই এগোচ্ছিলেন তিনি। মাত্র ৩০ বলে অর্ধশত পূর্ণ করেন সাকিব।
শেষ ওভারে সাকিব ৩৮ বলে ৬০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আউট হন। শেষের দিকে রিয়াদের ১৩ রানের ইনিংস দলের স্কোর ১৭১ রানে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। উইন্ডিজ বোলারদের মধ্যে অ্যাশলে নার্স ও কিমো পোল দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
বাংলাদেশ একাদশ-
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ (সহ-অধিনায়ক), নাজমুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, আবু হায়দার, আরিফুল হক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ-
কার্লোস ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), স্যামুয়েল বদ্রি, আন্দ্রে ফ্লেচার, এভিন লুইস, অ্যাসলে নার্স, কিমো পল, রোভম্যান পাওয়েল, দীনেশ রামদিন (উইকেটরক্ষক), আন্দ্রে রাসেল, মারলন স্যামুয়েলস, চ্যাডউইক ওয়ালটন, কেসরিক উইলিয়ামস।