সমস্যার মূল শিকড়েই

ছবি: বাংলাদেশ দল

শেষ ওভারের জুজু নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে যা চলছে তা অনেকটা পরিহাসেরই সামিল। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি টুয়েন্টিতেও শেষ ওভারে এসে হারতে হয়েছিলো টাইগারদের।
এবার সেই ধারাবাহিকতা তারা বজায় রেখেছে ক্যারিবিয়ানদের মাটিতেও। হতাশার একটি টেস্ট সিরিজের পর যখন প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ একটি জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ তখন অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে দ্বিতীয় ম্যাচটি জিতে আগেভাগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করবে মাশরাফি বাহিনী।
এই লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচের শেষ ওভারে মাত্র ৮ রান প্রয়োজন ছিলো তাদের। ক্রিকেটে এই রান করা নিতান্তই মামুলি বৈকি। কিন্তু সেই মামুলি কাজটিই যে টাইগারদের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে সেটি কে জানতো!
স্নায়ু চাপের কারণেই শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি মাত্র ৩ রানে হেরে বসেছে তারা। ফলে আরো একবার জেতা ম্যাচ জলাঞ্জলি দিয়ে ফিরে আসতে হলো। বাংলাদেশ দলের এরূপ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলেছেন দেশের দুই স্বনামধন্য এবং অভিজ্ঞ কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম এবং সারওয়ার ইমরান। বিষয়টি যে মনস্তাত্ত্বিক এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই ফাহিমের। তাঁর মতে চাপের মুখেই ভেঙ্গে পড়েছিলো বাংলাদেশ। ফাহিম বলছিলেন,

'কোনো সন্দেহ নেই, ব্যাপারটা পুরোপুরি মনস্তাত্ত্বিক। আমরা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখলাম এবারও। শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত খেলার প্রায় পুরোটা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। খেলা যখন শেষের দিকে এল, তখনো সেট ব্যাটসম্যানরা ছিল এবং তাদের ব্যাটে বলেও ভালো হচ্ছিল। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ‘যদি না পারি তাহলে কী হবে’-ভয়টাই ব্যর্থতার একমাত্র কারণ বলে আমার মনে হয়।'
অপরদিকে সারওয়ার ইমরান মনে করছেন মূলত নেতিবাচক চিন্তা করার কারণেই ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে উইকেটে থিতু হওয়া ব্যাটসম্যানেরা সে সময় আউট হয়ে যাওয়াতেই কাজটি কঠিন হয়ে গিয়েছিলো। ইমরানের ভাষায়,
'এটা তো জেতা ম্যাচ, যেকোনো দল হলেই জিততো। কিন্তু আমরা পারিনি। এটাকে শুধু দুর্ভাগ্য বললে হবে না। ওই মুহূর্তে নেতিবাচক চিন্তা করলে ম্যাচ জেতা যায় না। তবে আমাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে বলে মনে হয়-উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানরা ওই মুহূর্তে আউট হয়ে গেছে, সে কারণেই কাজটা কঠিন হয়ে যায়।'
অবশ্য সমস্যার শিকড়ও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন সারওয়ার ইমরান। জানিয়েছেন মূল সমস্যা হলো ঘরোয়া ক্রিকেটেই। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান খুব একটা উচ্চপর্যায়ের না হওয়ায় খেলোয়াড়েরা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা শিখছে না খুব একটা। অর্থাৎ চাপ সামলানোর যে ব্যাপারটি আছে সেটাই তারা বুঝে উঠতে পারছে না। ইমরান তাই বললেন,
'আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান দেখুন। খেলোয়াড়েরা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা শিখবে কীভাবে? গতবার বিপিএলে খেলল পাঁচ বিদেশি। তার একটা প্রভাব আছে না? এখন তো আমাদের নিজেদের খেলোয়াড়েরা দায়িত্বই নিতে চায় না। একজন করে বিদেশি কম করে খেলালে, দায়িত্বের জায়গাটা আরেকটু বাড়ত ওদের।'
এক্ষেত্রে একটি সমস্যার পথও বাতলে দিয়েছেন ইমরান। তাঁর মতে চাপ মোকাবেলা করার মানসিকতা তৈরি করতে হলে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগকে আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি আম্পায়ারিংয়ের মানও বাড়াতে হবে। অভিজ্ঞ এই কোচের বক্তব্য,
'তুলনামূলকভাবে ঢাকা লিগটা একটু বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তাঁর ফল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমরা ওয়ানডেতেই কিছুটা ভালো খেলছি। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। এই সংস্করণকে আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলতে হবে। ভালো মাঠে খেলাতে হবে, আম্পায়ারিংয়ের মান আরও বাড়াতে হবে।'