টেস্টে নতুন দল গঠন করতে চান পাপন

ছবি: নাজমুল হাসান

টেস্টে ক্রিকেটে দীর্ঘ দিন থেকে খেলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু এরপরেও এখন পর্যন্ত এই ফরম্যাটে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনি তারা। ওয়ানডের থেকে টেস্টে সাফল্যের পরিধিটাও বলা যায় নগণ্য তাদের।
আর এর পেছনে মূল কারণ হলো টেস্টে আলাদা কোনো দল না থাকাটা। এই ফরম্যাটে ভালো করতে হলে আলাদা দল গঠন করতে হবে বলে মত দিয়েছেন অনেক ক্রিকেট বোদ্ধারাই। এবার একই কথা বললেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। টেস্ট এবং টি টুয়েন্টিতে সম্পূর্ণ আলাদা একটি দল তৈরি করা প্রয়োজন উল্লেখ করে গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন,
'এখানে বিষয়টি আসলে মানসিকতার নয়। টেস্টের জন্য আমাদের নতুন দল করতে হবে। আমি আপনাদের খুব সাধারণ একটি কথা বলি। আজ থেকে চার বছর আগে থেকেই কিন্তু আমি একটা কথা বলে আসছি। টেস্টে আমাদের নতুন একটি দল গঠন করতে হবে। একই ভাবে টি টুয়েন্টিতেও। হয়তো তিন চার জন কমন থাকবে, বাকিরা সবাই নতুন। সব দেশগুলো কিন্তু এখন সেটাই করে।'
বিশ্বের অন্যান্য বড় দলগুলো ওয়ানডে, টেস্ট কিংবা টি টুয়েন্টিতে আলাদা দল গঠন করে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। এখানে একটি ফরম্যাটের জন্য স্পেশালিষ্ট ক্রিকেটার খুব বেশি নেই, যার দরুন আলাদা দল বানানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন পাপন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

'আপনি যদি দেখেন, বাইরের খেলাগুলোতে টি টুয়েন্টি স্পেশালিষ্ট ক্রিকেটার রয়েছে, টেস্ট এবং ওয়ানডেতেও রয়েছে। আমাদের কিন্তু তেমন স্পেশালিষ্ট ক্রিকেটার নেই। আমরা খালি মমিনুলকে রেখেছি শুধু টেস্টের জন্য। এই একজন ক্রিকেটারকে রাখলে তো হবে না, আরো পাঁচ থেকে ছয় জনকে বানাতে হবে। কিন্তু সেটি করতে গেলে তো ওদেরকে সুযোগ দিতে হবে।'
তবে টেস্টের জন্য আলাদা দল গঠন করা যে খুব একটা সহজ হবে না সেটিও মানছেন পাপন। কারণ একাদশে তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদরা অটো চয়েজই বলা চলে। পাশাপাশি একজন স্পিনার এবং তিনজন পেসার থাকবে। সেক্ষেত্রে জায়গা থাকে দুইটি। তিন নম্বরে শুধু স্পেশালিস্ট টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে থাকবেন মমিনুল হক। সুতরাং সব মিলিয়ে টেস্টের দলে পরিবর্তন আনা বেশ কঠিন হবে বলেই মনে করছেন বিসিবি প্রধান। তার ভাষায়,
'আপনি বলেন আপনার যে স্কোয়াড রয়েছে সেখানে তামিমের সাথে একজন ওপেন করবে, এখানে দুইজন চলে গেল। তিনটি পেসার আসবে, এরপর একটি তো স্পিনার নিবেন। এখানে চার এবং দুই ছয় চলে গেল। এখন মুশফিক, রিয়াদ এবং সাকিবকে বাদ দিবেন কি করে? ওরা তো অটো চয়েজ, ওরা তো আসবেই। সেক্ষেত্রে জায়গা থাকে মাত্র দুটি। একটি হলো তিনে কে আসবে, সেখানে মমিনুল আছে। সে একটি সিরিজ খারাপ খেলায় তাঁকে তো বাদ দেয়া যাবে না। সুতরাং মমিনুলের তিন নম্বর জায়গাটিও নিশ্চিত।'
সাত নম্বরের জন্যেও স্ট্যান্ডবাই রয়েছে বেশ কিছু ক্রিকেটার। যাদের মধ্যে আছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আরিফুল হক, সাব্বির রহমান এবং মেহেদি হাসান মিরাজরা। ফলে এই পজিশনে কে খেলবেন সেটা ঠিক করাই আসলে বড় সমস্যা। পাপন তাই বলছিলেন,
'এখন বাকি থাকে সাত নাম্বার। আর এই সাত নাম্বারে কত জন ক্রিকেটার আছে দেখেন। মোসাদ্দেক, আরিফুল আছে, সাব্বির, মিরাজ আছে। এখন এদের কাউকে যদি বাদ দেয়া হয় তাহলেও কথা উঠবে। মানুষ বলবে এটি কি করলো! আর যদি সিনিয়র কাউকে বাদ দেয়া হয় তাহলে তো কথাই নেই। এখন ক্রিকেটের স্বার্থে আমাদের এগুলো সহ্য করে নিতে হবে।'
ক্রিকেটে নিজেদের ভবিষ্যৎ ভালো চাইলে নতুন নতুন সাকিব, তামিম, মুশফিকদের প্রয়োজন বলেও মনে করেন বোর্ড প্রধান। তার মতে এখন থেকেই তামিমদের বিকল্প ঠিক করার জন্য পদক্ষেপ হাতে নিতে হবে। কেননা যখন তারা অবসর নিবেন তখন সমস্যার মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। পাপনের ভাষায়,
'আমাদের ভবিষ্যৎ যদি আমরা ভালো চাই তাহলে নতুন নতুন তামিম, সাকিব, মুশফিক রিয়াদ আমাদের দরকার। ওরা আমাদের আছে এবং থাকবে, কিন্তু যখন ওরা থাকবে না তখন কি হবে? নতুনদের তৈরি করতে হবে। হঠাৎ করে কারও পারফর্মেন্স লেভেল খারাপ হলে তাঁকে তো ফেলে দেয়া যায় না। কন্ডিশন অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।'