ইমপ্যাক্ট নয়, কে কত রান করেছে মানুষ এটাই দেখে: অঙ্কন

ছবি: ক্রিকফ্রেঞ্জি

যদিও বিপিলের সবশেষ আসরে খুলনা টাইগার্সের জার্সিতে অঙ্কনকে দেখা গেছে ভিন্ন ভূমিকায়। টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডার ব্যাটার থেকে হয়ে গেছেন খুলনার ফিনিশার। নতুন ভূমিকায় বাড়তি চ্যালেঞ্জ থাকলেও সেটা ভালোভাবেই উতরে গেছেন অঙ্কন। এক হাফ সেঞ্চুরিতে ১৪ ম্যাচে ১৭৪.৫৮ স্ট্রাইক রেটে ডানহাতি উইকেটকিপার ব্যাটার করেছেন ৩১৬ রান। চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ১৮ বলের হাফ সেঞ্চুরিতে হয়েছেন বিপিএলে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরিয়ানও। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের বদলে যাওয়ার গল্প শুনিয়েছেন অঙ্কন।
অঙ্কনের রান আউটই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছে, দাবি খুলনার ব্যাটিং কোচের
২৩ জানুয়ারি ২৫
ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিপিএলে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কতটা খুশি?
মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন- যেমনটা প্রত্যাশা করছিলাম আল্লাহর রহমতে পুরোপুরি মেটাতে না পারলেও আলহামদুলিল্লাহ। দল হিসেবে যদি আমরা ফাইনাল খেলতে পারতাম তাহলে আরও বেশি খুশি হতাম। যদিও ফাইনাল খেলতে পারতাম সেটাও আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। খানিকটা প্রত্যাশা হয়ত মেটাতে পেরেছি কিন্তু এখনও অনেক কিছুই করার বাকি আছে। আবার অনেক কিছুর উন্নতিও করার আছে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: ঘরোয়া ক্রিকেটে মিডল অর্ডার কিংবা টপ অর্ডারে ব্যাটিং করলেও বিপিএলে আপনার ভূমিকা ছিল ফিনিশার। টুর্নামেন্টের আগে কোচ এবং অধিনায়কের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা ছিল কিনা?
অঙ্কন- আমার ভূমিকা কী হবে সেটা নিয়ে আমি একেবারে পরিষ্কার ছিল। এটা আমাকে অনেক বেশি হেল্প করেছে। পুরোটা মৌসুম আমি কোন জায়গায় ব্যাটিং করব, আমার ভূমিকা কী কিংবা দল আমার কাছ থেকে কী চায় এগুলো আমি আগে থেকেই জানতাম। ভূমিকা নিয়ে ক্লিয়ার থাকায় আমার পরিকল্পনা করতে সহজ হয়েছে। আমিও ওইভাবেই প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করেছি। আল্লাহর রহমতে, ম্যাচে সেটার ফল এসেছে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: ফিনিশারের জন্য আলাদা একটা প্রস্তুতি ছিল নিশ্চই?
অঙ্কন- হ্যাঁ, প্রস্তুতিটা অনেক আগে থেকেই ছিল। ড্রাফট থেকে যখন খুলনা আমাকে দলে নেয় তখন থেকেই আমি বুঝতে পারছিলাম কোন জায়গায় ব্যাটিং করতে হতে পারে। তারপর প্রত্যেকটা কোচের সঙ্গে কাজ করে আবার নিজে নিজেও ফিল করেছি আমার কী কী উন্নতি করা প্রয়োজন। এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে আরও বেশি উন্নতি করতে পারি এবং আরও ভালো খেলতে পারি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার কিংবা একজন ফিনিশার হিসেবে ব্যাটিংয়ের পার্থক্যটা কোথায়?
অঙ্কন- আমার কাছে মনে হয় এটা পুরোপুরি মানসিক ব্যাপার। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে ছোটোবেলা থেকেই এমন শাফল করে ব্যাটিং করা হয়। সেক্ষেত্রে ওই জিনিসগুলো তখন আমার ভালো না লাগলেও আমি অনুভব করি এখন এগুলো মানিয়ে নিতে সহজ হয়। প্রত্যেকটা পরিস্থিতিই আমি উপভোগ করি, চেষ্টা করি দলের জন্য যেকোন পজিশনে পারফর্ম করতে। যে দলেই খেলি না কেন আমার সবসময় চেষ্টা থাকে যাতে দলের জেতার জন্য কিছু অবদান রাখতে পারি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: সবশেষ তিন মৌসুুমে আপনি ১৬ ম্যাচ খেলেছেন, খুলনার হয়ে এক মৌসুমেই খেললেন ১৪ ম্যাচ। আপনার কাছে কী মনে হয় তারকাবহুল দলের চেয়ে এমন দলে যাওয়াটা ভালো যেখানে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন...

অঙ্কন- এটা তো আসলে কোনো খেলার ঠিক করতে পারবে না সে কোন দলে যাবে। আপনি যদি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দিকে লক্ষ্য করেন এমন হয়নি যে কোনো খেলোয়াড় উঠে আসেনি। কুমিল্লায় খেলেও অনেক খেলোয়াড় উঠে এসেছে। কুমিল্লায় খেলে জাকের আলী অনিক, তানভীর (ইসলাম) ভাই এমনকি আগেও অনেকে উঠে এসেছে। ওইটা কোনো ম্যাটার করে না। সুযোগের কতটা সদ্ব্যবহার করতে পারছি সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সুযোগটা যাতে আসে সেটার জন্য একটু ভাগ্যবানও হতে হয়। কিন্তু যেটা বললাম ওই সুযোগটা আমি কতটা লুফে নিতে পারছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
লেগ সাইডে ১ হাজার রান হলে সমস্যা নেই, রান হলেই হবে: নাইম
১৭ ফেব্রুয়ারি ২৫
ক্রিকফ্রেঞ্জি: বেশি ম্যাচ খেলার নিশ্চয়তা পাওয়ায় মানসিকভাবে আপনি একটু রিল্যাক্স থাকতে পেরেছিলেন কিনা?
অঙ্কন- একজন খেলোয়াড় যখন কিছু ম্যাচ খেলার নিশ্চয়তা কিংবা বিশ্বাসটা পায় তখন তার জন্য ভালো হয়। কিন্তু দিনশেষে একজন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমি মনে করি অজুহাত দেয়ার সুযোগ নেই। আমি যদি এক ম্যাচও সুযোগ পাই সেই ম্যাচেই পারফর্ম করতে হবে। কারণ এটাই আমার কাজ। অজুহাত দেয়ার হয়ত অনেক উপায়ই আছে কিন্তু আমি এসব নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: গত মৌসুমে কুমিল্লার হয়ে ১১৪.৭০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছিলন, এবছর খুলনার জার্সিতে আপনার স্ট্রাইক রেট ১৭৪.৫৮। এই পরিবর্তনটা কীভাবে করলেন?
অঙ্কন- আমি মনে করি আমার বিশ্বাস থেকেই এমন পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। আমি যখন নিজে থেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি তখন থেকেই কাজগুলো হয়েছে। সবসময় বিশ্বাস করতাম আমি টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে পারব। এমন না এখনই অনেক বেশি ভালো করে ফেলেছি, মাত্র শুরু হলো। বিশ্বাস ছিল আমি যদি প্রথম থেকেই ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই... কারণ অনেক বছর হয়ে গেছে বিপিএলের সাথে আছি কিন্তু হয়তবা প্রথম থেকে ম্যাচ খেলা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ব্যাটিং করার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। ওইভাবেই অনুশীলন করছিলাম, আল্লাহর রহমতে যখন প্রথম ম্যাচে ভালো শুরু পেয়েছে চেষ্টা ছিল পুরো মৌসুম যাতে মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: একজন টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডার ব্যাটারের সফল হওয়ার চান্স যত বেশি ফিনিশারের বেলায় সেটা তুলনামূলক কম। কোচ ও অধিনায়ক যখন আপনাকে এমন রোল দেয় তখন ভয় কিংবা মনের মাঝে সংশয় কাজ করেছে কিনা?
অঙ্কন- হ্যাঁ, টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করলে সফল হওয়ার সুযোগটা একটু বেশি। কিন্তু আমার কাজ নিয়ে আমি আগে থেকেই একদম ক্লিয়ার ছিলাম। এজন্য আমার কাছে ওতো বেশি কঠিন হয়নি। কারণ আমি আগেও এসব পজিশনে ব্যাটিং করেছি, জানতাম ওইসব পরিস্থিতিতে কী হয়। টি-টোয়েন্টিতে আগে হয়ত করতে পারিনি কিন্তু প্রথম ম্যাচে ভালো শুরু পাওয়ায় তখন আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: তবুও ফিনিশারের রোলটা নেয়ার সময় একটা ভয় ছিলই কিনা?
অঙ্কন- এগুলো আসলে আমি আগে থেকেই জানি। যখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলতাম তখন ৬ কিংবা সাতে ব্যাটিং করতাম। কিন্তু আমি এমন জায়গা ব্যাটিং করা পছন্দ করতাম না। স্বাভাবিকভাবে আমাদের দেশের মানুষের একটা পার্সপেক্টিভ আছে ইমপ্যাক্টের চেয়ে কে কত রান করছে এটা দেখা হয়। পেশাদার জায়গায় এসব অজুহাত দেয়ার আসলে কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। দল আমাকে যেখানে ব্যাটিং করতে বলবে সেখানেই ব্যাটিং করব। আমার ভাবনাটা হচ্ছে আমি দলের জয়ে কতটা অবদান রাখতে পারছি, কতটা পারফর্ম করতে পারছি এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: চিটাগং কিংসের বিপক্ষে শরিফুল ইসলামের বিপক্ষে হেলিকপ্টার শটে আপনি একটা ছক্কা মেরেছিলেন। ডেথ ওভারের জন্য বিশেষ প্রস্তুতির কারণেই কী এমন শটে খেলা সহজ হচ্ছে?
অঙ্কন- অনুশীলনে আমি এগুলো চেষ্টা করছিলাম। আমার মাথায় ব্যাপারটা ছিল যে আমি যদি শেষের দিকে ব্যাটিং করি তাহলে বোলার আমাকে কী ধরনের ডেলিভারিগুলো করতে পারে। ওইটা ধরেই আমি অনুশীলনে কাজ করছিলাম। আমার মনে হয় অনুশীলনের ফলেই ওই সময় ওইটা হয়েছে। এমন না আমি পুরোপুরি অ্যাডাপ্ট (হেলিকপ্টার শট) করে ফেলেছি। আশা করি সামনে আরও ভালো করতে পারব।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: ফিনিশারদের জন্য ব্যাট সুইং কিংবা পাওয়ার হিটিংটা তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রোলের জন্য আপনি আসলে কী ধরনের কাজ করেছেন?
অঙ্কন- টি-টোয়েন্টি কিংবা ফিনিশারের জন্য অবশ্যই ব্যাট সুইং একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এসব নিয়ে কোচদের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। আমি আগে থেকেই ফিল করছিলাম এটা সবার সামনে আসবে একদিন কিন্তু চেষ্টাটা অনেক আগে থেকেই করতেছিলাম। এবার হয়ত আমি সবার সামনে আনতে পেরেছি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: ব্যাট সুইংয়ের জন্য বাইরের দেশের ক্রিকেটারদের গলফ খেলতে দেখা যায়। বাংলাদেশে হয়ত আমরা এমন কিছু সেভাবে দেখি না। নির্দিষ্ট করে বললে আপনি নিজে কী কী করেন?
অঙ্কন- নির্দিষ্ট করে বললে আমি একটু ভারী ব্যাট-বলে অনুশীলন করি। গলফ খেলার কথা যেটা বললেন এটা আমিও মনে করি ক্রিকেটারদের জন্য এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আমাদেরও এমন একটা পরিবেশ তৈরি হবে। আসলে পরিবেশ তৈরি না আমার নিজে থেকেই করতে হবে। ইনশাআল্লাহ, দ্রুতই আমিও চেষ্টা করব এসব স্পোর্টসের সঙ্গে যুক্ত হতে যাতে ক্রিকেটে হেল্প হয়।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিসিবি হয়ত অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে তবুও বাইরের দেশের সঙ্গে তুলনা করলে এখনও ঘাটতি দেখেন কিনা?
অঙ্কন- দেখুন, আমার মনে হয় আমরা সবাই অনেক ঢাকামুখী। আমাদের সুযোগ-সুবিধার কথা যদি বলেন আগের চেয়ে অনেক ভালো। কিন্তু আরও একটু ভালো সুযোগ-সুবিধা পেলে আমাদের জন্য ভালো হতো। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে মনে করি না আমি কারও উপর নির্ভরশীল। আমি সবসময় চেষ্টা করি কিভাবে নিজের আরও উন্নতি করতে পারি তার জন্য যত বিনিয়োগ হোক সেটা করি এবং ওই পরিবেশটা তৈরি করি। অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে চেষ্টা করি যাতে ওইরকম সুযোগ-সুবিধা নিজে তৈরি করতে পারি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি বললেন এমন কিছু নিজেই তৈরি করার চেষ্টা করেন কিন্তু সব ক্রিকেটারের পক্ষে কী সম্ভব? কারও কারও জন্য তো চ্যালেঞ্জিং...
অঙ্কন- অবশ্যই, চ্যালেঞ্জিং। যারা জাতীয় দল থেকে একটু বাইরে তাদের জন্য একটু কঠিন। তারপরও আমি বলব যতটুকু সুযোগ আছে সেটার মাঝে আমি বিনিয়োগ করছি কিনা, নিজের উন্নতির জন্য কাজ করছি কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ।