ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের

ছবি:

শ্রীলংকা ১ম ইনিংসঃ ২২২ (৬৫.৩ ওভার) ( কুশল মেন্ডিস ৬৪, রোশন সিলভা ৫৬) আব্দুর রাজ্জাক ৪/৬৩, তাইজুল ইসলাম ৪/৮৩, মুস্তাফিজুর রহমান ২/১৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসঃ ১১০ (৪৫.৪ ওভার) ( মিরাজ ৩৮*) লাকমল ৩/২৫, দিলরুয়ান পেরেরা ২/২৫, আকিলা ধনঞ্জয়া ৩/২০
শ্রীলংকা ২য় ইনিংসঃ ২২৬ (অলআউট) (৭৩.৫ ওভার) (রোশন ৭০*) আব্দুর রাজ্জাক ১/৬০, মুস্তাফিজ ৩/৪৯, তাইজুল ৪/৭৬, মিরাজ ২/৩৭
লিডঃ ৩৩৮ রান
লক্ষ্য- ৩৩৯ রান
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসঃ ১২৩ (অলআউট) (২৯.৩ ওভার) (মুস্তাফিজ ৫*) (ধনঞ্জয়া ৫/২৪, হেরাথ ৪/৪৯, পেরেরা ১/৩২, )
ফলাফল- শ্রীলঙ্কা ২১৫ রানে জয়ী
বাংলাদেশ ইনিংস--------
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ-
৩৩৯ রানের রেকর্ড লক্ষ্যে খেলতে নেমেই যথারীতি বিপদে পড়েছিলো বাংলাদেশ। দলীয় মাত্র ৩ রানের মাথায় ওপেনার তামিম ইকবালকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন লঙ্কান স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা। ফলে মাত্র ২ রান করে আউট হতে হয় তামিমকে।
ইমরুল-মমিনুলের ব্যাটে বিপদ কাটানোর আভাস-
ইনিংসের শুরুতেই তামিম আউট হয়ে যাওয়ার পর ইমরুল কায়েসের সাথে ব্যাটিংয়ে যোগ দেন চট্টগ্রাম টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকানো টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান মমিনুল হক। আর খেলতে নেমেই রীতিমত ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং শুরু করেন মমিনুল। দ্রুত ৩ টি চারও হাঁকান তিনি। ইমরুলের সাথে ৪৬ রানের জুটি গড়েন টাইগারদের লিটল মাস্টার।
ইমরুলের বিদায়-
মমিনুলের সাথে জুটি গড়ে ভালোই খেলছিলেন ইমরুল কায়েস। ১৭ রান করে ইনিংস বড় করার আভাসও দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারেননি টাইগার ওপেনার।

দলীয় ৪৯ রানের মাথায় রঙ্গনা হেরাথের একটি বল রক্ষণাত্মক ভঙ্গীতে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে নিরোশান ডিকওয়েলার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেলেন ইমরুল। ফলে দলকে আবারো বিপদে ফেলে সাজঘরে ফিরে যান তিনি।
মুশফিক মমিনুলের ব্যাটে লাঞ্চ বিরতিতে বাংলাদেশ-
ইমরুল ফিরে গেলে মমিনুলের সাথে ব্যাটিংয়ে যোগ দেন মুশফিকুর রহিম। এরপর এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। বিরতির আগে ২ উইকেটে ৫৭ রান সংগ্রহ করেছিলো বাংলাদেশ।
লাঞ্চের পরেই মমিনুলের বিদায়-
লাঞ্চ বিরতির পর ৩১ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন মমিনুল। কিন্তু আর মাত্র ২ রান যোগ করেই হেরাথের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরতে হয় মমিনুলকে। উইকেটরক্ষক ডিকওয়েলার হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ।
মমিনুলের পর লিটনও ব্যর্থ-
মমিনুল ফিরে যাওয়ার পর ক্রিজে যোগ দেন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস। কিন্তু তিনিও আজ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। মাত্র ১২ রান করে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
তাসের ঘরে পরিণত বাংলাদেশ-
মমিনুল ও লিটন আউট হওয়ার পর দলকে চরম বিপদে ফেলে ১০০ রানের মাথায় আকিলা ধনঞ্জয়ার বলে দিমুথ করুনারত্নের হাতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। আর এরপরেই রীতিমত তাসের ঘরে পরিণত হয় বাংলাদেশ।
মাত্র ২৩ রানের ব্যবধানে বাকি ৫ উইকেট খুইয়ে বসে টাইগাররা। ফলে ঢাকা টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১২৩ রানেই অলআউট হয়ে গেলো বাংলাদেশ। আর ২১৫ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে সক্ষম হলো সফরকারী শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশকে এত কম রানে অলআউট করার পেছনে সবথেকে বড় কৃতিত্ব ছিলো ২৪ বছর বয়সী অভিষিক্ত স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার। নিজের অভিষেক টেস্টেই মাত্র ২৪ রানে ৫ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ৪৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ধনঞ্জয়াকে ভালোই সঙ্গ দিয়েছেন রঙ্গনা হেরাথ। এছাড়াও ৩২ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন দিলরুয়ান পেরেরা।
শ্রীলঙ্কা ইনিংস-----
তৃতীয় দিন সাবধানী শুরু করেছিলো শ্রীলঙ্কা-
ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন ৮ উইকেটে ২০০ রান নিয়ে খেলা শেষ করেছিলো সফরকারী শ্রীলঙ্কা। এরপর আজ দুই উইকেট হাতে রেখে ৩১২ রানের লিড নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান রোশন ডি সিলভা এবং সুরঙ্গা লাকমল। ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ সাবধানী ভঙ্গিতেই খেলা শুরু করেছিলেন তারা। দলকে বড় লিড এনে দেয়ার পথে ভালোই ব্যাট করছিলেন দুই ব্যাটসম্যান।
তাইজুলের বলে অলআউট শ্রীলঙ্কা-
লাকমল ও রোশন জুটি ভালোই ভুগিয়ে যাচ্ছিলো বাংলাদেশকে। দুই ব্যাটসম্যান জুটি গড়েছিলেন ৪৮ রানের। বড় লিডের পথে দলকে এগিয়েও নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। অবশেষে গলার কাঁটা হয়ে থাকা এই জুটিটি ভাঙ্গতে সক্ষম হলেন তাইজুল ইসলাম।
দলীয় ২২৬ রানের মাথায় লাকমলকে বোল্ড করে ফিরিয়েছেন তিনি। ঠিক এরপরের বলেই রঙ্গনা হেরাথকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে লঙ্কানদের অলআউট করে দেন এই টাইগার স্পিনার। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ৭০ রানে অপরাজিত ছিলেন রোশন ডি সিলভা। ফলে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে ৩৩৯ রান।
অর্থাৎ এই টেস্টে জয় পেতে হলে ইতিহাস রচনা করতে হবে বাংলাদেশকে। কেননা মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে এর আগে এত রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আর কোনো দেশের নেই। এর আগে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ছিলো ২০৯ রানের। ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঢাকায় এই রান তাড়া করে জিতেছিলো ইংলিশরা।
দ্বিতীয় দিনের শেষে চালকের আসনে ছিলো শ্রীলঙ্কা-
ঢাকা টেস্টের প্রথম দুই দিনই শ্রীলংকার পকেটে গিয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ থেকে ৩১২ রানে এগিয়ে আগের দিন শেষ করে সফরকারীরা। ব্যাকফুটে থাকা বাংলাদেশকে এদিন একাই জবাব দিয়েছিলেন টানা ৪ ইনিংসে ফিফটি হাঁকানো ব্যাটসম্যান রোশন সিলভা।
ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান গত দিন অপরাজিত ছিলেন ৫৮ রান নিয়ে। তবে এদিন বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট শিকার করেন এই বাঁহাতি পেসার।
বাংলাদেশ একাদশ-
তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মমিনুল হক, লিটন কুমার দাস (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, আব্দুর রাজ্জাক, মুস্তাফিজুর রহমান।
শ্রীলঙ্কা একাদশ-
দিমুথ করুনারত্নে, কুশল মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, রোশন ডি সিলভা, দীনেশ চান্ডিমাল (অধিনায়ক), নিরোশান ডিকওয়েলা, দানুশকা গুনাথিলাকা, দিলরুয়ান পেরেরা, আকিলা ধনঞ্জয়া, রঙ্গনা হেরাথ, সুরঙ্গা লাকমল।