নড়বড়ে নব্বইতে লিটনের মস্তিষ্ক বিস্ফোরণ

ছবি:

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ, প্রথম ইনিংসঃ
৫১৩ অল আউট (১২৯.৫ ওভার) মমিনুল ১৭৬, মুশফিক ৯২, মাহমুদুল্লাহ ৮৩*।
হেরাথ ৩/ ১৫০, লাকমল ৩/ ৬৮।
শ্রীলঙ্কা, প্রথম ইনিংসঃ
৭১৩/৯ ডিক্লে (১৯৯.৩ ওভার ) মেন্ডিস ১৯৬, ধনঞ্জয়া ১৭৩ এবং রোশেন ১০৯।
তাইজুল ৪/ ২১৯, মিরাজ ৩/১৭৪।
বাংলাদেশ, দ্বিতীয় ইনিংসঃ
২৬৫/৪ (৭৯ ওভার) মাহমুদুল্লাহ ১২*, মোসাদ্দেক ০*
বাংলাদেশের সাবধানী শুরু-
চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চম অর্থাৎ শেষ দিন যে বেশ কঠিন এক পরীক্ষা অপেক্ষা করছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য। বিশেষ করে চতুর্থ দিনের শেষ বেলায় পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানের দ্রুত বিদায়ে চাপে পড়ে রিয়াদের দল। দুই ওপেনার তামিম-ইমরুল উইকেট জমে আউট হওয়ার পর মুশফিকের বিদায়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে বাংলাদেশের।
সেখান থেকে ৭ উইকেট হাতে রেখে ১১৯ রানে পিছিয়ে থেকে শেষ দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। তবে শেষ দিন ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা সাবধানী ভঙ্গিতেই করেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মমিনুল হক ও লিটন কুমার দাস। ঝুঁকিহীন ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের স্কোর ১০০ এর কোটা ছাড়িয়ে গেছে প্রথম সকালেই। ইনিংসের ৪১তম ওভারে লিটন ও মমিনুল জুটির ফিফটি পূর্ণ করে।

আবার মমিনুলঃ
৪৩তম ওভারে এসে ফিফটির দেখা পান মমিনুল হক। স্পিনারদের উপর চড়াও হয়ে ৭৮ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। দুটি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি। মমিনুলের সতর্ক ব্যাটিংয়ের সাথে মৃদু আগ্রাসনের মিশেলে ধিরে ধিরে লিডের পথে এগোতে থাকে বাংলাদেশ।
লিটন-মমিনুল জুটির সেঞ্চুরিঃ
মমিনুলের পথে হেটে উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান লিটন দাসও লঙ্কান বোলারদের উপর চড়াও হন। বাজে বলকে শাসন করার সাথে ভালো বলকে সম্মান জানিয়ে খেলে যান তিনি। প্রথম সেশনের শেষের দিকে এসে লিটন-মমিনুল জুটি সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়।
প্রথম সেশন বাংলাদেশেরঃ
সেঞ্চুরি পার্টনারশিপে পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনে লঙ্কানদের কোন সুযোগ দেয় নি বাংলাদেশ। স্পিনার ও পেসারদের বিপক্ষে সাবলীল ব্যাটিং করে অবিচ্ছিন্ন থেকে লাঞ্চে যায় লিটন ও মমিনুল। সাত উইকেট হাতে রাখা বাংলাদেশ ১৩ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় সেশন শুরু করবে।
লিটন দাসের ফিফটিঃ
দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই ফিফটি তুলে নেন উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান লিটন। স্পিনারদের উপর সুইপ শটের ব্যবহার করে সাফল্য পান তিনি। ৫৫ স্ট্রাইক রেটে দলের বিপদের মুখে গুরুত্বপূর্ণ ফিফটি করেন প্রথম ইনিংসে শুন্য করে আউট হওয়া লিটন।
বাংলাদেশের লিডঃ
দ্বিতীয় ইনিংসের লিড পেতে বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশের। মমিনুল ও লিটন দাস জুটি সমৃদ্ধ করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংস লিড এনে দেয়। ইনিংসের ৬৯তম ওভারে জুটির দেড়শ পূর্ণ করেন এই দুই বাংলাদেশি।
মমিনুলের ইতিহাসঃ
দ্বিতীয় সেশনে লঙ্কানরা উইকেটের আশায় হেরাথ ও সান্দাকানকে দুই প্রান্ত থেকে বল তুলে দেয়। কিন্তু মমিনুল হক খেলে গেছেন ভয়ডয়হীন ক্রিকেট। সান্দাকান ও হেরাথকে কয়েকদফা স্টেপ আউট করে লং অন বাউন্ডারি ছাড়া করেন তিনি, এগিয়ে যান একই টেস্টে পরপর দুই ইনিংসের সেঞ্চুরির পথে। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই রেকর্ড গড়তে বেশি সময় নেন নি সাগরিকার পাড়ের ছেলেটি। ৭০তম ওভারে মাত্র ১৫৪ বল খরচায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।
চূড়ায় থেকে মমিনুলের বিদায়ঃ
তবে সেঞ্চুরির পর ইনিংস লম্বা হয়নি মমিনুলের। পার্ট টাইমার ধনঞ্জয়ার অফ স্পিনে পা বাড়িয়ে ফরওয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ আউট হন তিনি। মমিনুলের বিদায়ে চতুর্থ উইকেটে ১৮০ রানের রেকর্ড জুটি বিচ্ছিন্ন হয়। আউট হওয়ার আগে ১৭৪ বলে ১০৪ রানের চোখ জুড়ানো ইনিংস খেলেন তিনি।
লিটনের মস্তিষ্ক বিস্ফোরণঃ
সঙ্গী হারালেও লিটন দাস খেলে গেছেন সাবলীল ভঙ্গিতে। স্পিনারদের পায়ের কাজের সাহায্যে থিতু হতে দেন নি এই ডানহাতি। একই সাথে বাংলাদেশের লিড ৫০ রান ছাড়াতে সাহায্য করেন তিনি। অধিনায়ক রিয়াদের সাথে জুটি গড়ে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির পথে এগচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু নড়বড়ে নব্বইতে এসে মনোযোগ হারান তিনি।
সুযোগ ছিল খালেদ মাসুদ ও মুশফিকের পর তৃতীয় বাংলাদেশি উইকেট কিপার হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক হওয়ার। কিন্তু নতুন বলে হেরাথকে ছয় হাঁকানোর চেস্টায় টাইমিংয়ে গড়বড় করে পেরেরার অবিশ্বাস্য ক্যাচে পরিনত হন তিনি। ১৮২ বল খেলে ৯৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন লিটন।
বাংলাদেশ একাদশ-
তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক),মমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম, সানজামুল ইসলাম।
শ্রীলঙ্কা একাদশ-
দিমুথ করুনারত্নে, ধনঞ্জয় ডি সিলভা, কুশল মেন্ডিস, দিনেশ চান্দিমাল (অধিনায়ক), নিরোশান ডিকওয়েলা (উইকেট রক্ষক), রোশেন সিলভা, দিলরুয়ান পেরেরা, রঙ্গনা হেরাথ, সুরঙ্গা লাকমাল, লক্ষ্মণ সন্দাকান, লাহিরু কুমারা।