খালেদ মাহমুদ সুজন: পাশে থাকুন, সমর্থন দিন
ছবি:

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সব্যসাচী চরিত্র খালেদ মাহমুদ সুজন। একাধারে বিপিএল, ডিপিএল, ডিভিশনাল ক্রিকেটের কোচিংয়ের সাথে বোর্ড ডিরেক্টরের মত বড় দায়িত্ব সমানতালে সামলে আসছেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আতুরঘর বিসিবি গেইম ডেভলাপমেন্টের প্রধানও একসময়ের এই অলরাউন্ডার।
দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় দলের ম্যানেজার হিসেবে। বর্তমানে আছেন টিম ডিরেক্টর পদে। খালেদ মাহমুদ সুজন একজন ব্যক্তি হিসেবে এত দায়িত্ব কিভাবে পালন করেন? সুজন অবশ্য বলেছিলেন, 'আমি কাজটা ঠিকঠাক মত করতে পারি বলেই সবাই আমাকে দায়িত্ব দেয়। না পারলে দায়িত্বও পাওয়ার কথা না।'
কথা কিন্তু খুব একটা মিথ্যা নয়। বাকী দায়িত্ব গুলো বাদ দেই, কোচ হিসেবে বাংলাদেশের সবার প্রিয় সুজন চাচাকে স্পেশাল ওয়ান বললে ভুল হবে না। যথেষ্ট বর্ণাঢ্য কোচিং ক্যারিয়ারে আবাহনী, প্রাইম ব্যাংকের মত বড় দলগুলোকে ডিপিএল চ্যাম্পিয়ন করেছেন তিনি। সাকিব-সুজন জুটি তো ইতিমধ্যেই বিপিএলের শিরোপা জয় করেছে।
ডিভিশনাল ক্রিকেটেও ভালো ছেলেদের নিয়ে ভালো কাজ করছেন তিনি। কোচ হিসেবে দেশের অন্যতম সেরাদের একজন 'ফাইটার' সুজন। তার কমিটি গেইম ডেভলাপমেন্ট থেকেই উঠে আসছে তরুন ক্রিকেট প্রতিভারা। ভবিষ্যতের তারকাদের ঘষামাজা করা হচ্ছে তার নজরের সামনেই।

কোচ হিসেবে সুজন নি:শব্দে রেপুটেশনের তিনটি স্ট্যাম্প পুঁতে দিয়েছিলেন ২০১৪-১৫ ক্রিকেট মৌসুমে। ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষস্থানীয় তিনটি টুর্নামেন্টের ট্রফি জয়ী দলের কোচ ছিলেন তিনি। প্রাইম ব্যাংক সেই মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন, বিজয় দিবস টি-টুয়েন্টি এবং বিসিএল শিরোপা জয় করেছিল।
তার অধীনেই ৬ বছর পর ডিপিএলের শিরোপার দেখা পায় আবাহনী লিমিটেড। ঘরোয়া ক্রিকেটে স্পেশাল ওয়ান হওয়ার আরও আগে থেকেই জাতীয় দলের সেট আপের অংশ ছিলেন তিনি। ২০১০ সালে জিমি সিডন্সের একনায়কতন্ত্রের সাথে মানিয়ে চলতে পারেননি বিধায় স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছাড়েন সুজন।
বিসিবি’র এডহক কমিটিতে থাকায় কথা ছিল তার। কমিটিতে যোগ দিলে বিপিএলে কোচিং করাতে পারবে না, তাই সদস্যপদ গ্রহন করেননি সাবেক এই কাপ্তান। কোচিংয়ের প্রতি তার আলাদা আবেগটা সব সময় ছিল। ক্রিকেটার কোটায় বিসিবির পরিচালক হলেও অফিস ওয়ার্ক তার জন্য নয়। মাঠের ধুলাবালিই তার প্রিয়। সবার প্রিয় সুজন চাচা সব সময় বলে এসেছেন, 'আমি সবসময় বলেছি যত কিছুই করি কোচিংটা সবচেয়ে ভালোবাসি এবং এটি কখনোই ছাড়ব না।'
তবুও কোচ সুজনে এত বিরক্তি কেন সবার? বিসিবির পরিচালক, জাতীয় দলের ম্যানেজার কিংবা টিম ডিরেক্টর পদের সুজনকে নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে... কিন্তু কোচ সুজনকে নিয়ে তার শত্রুও আঙ্গুল তুলে কথা বলতে পারবে না। গত সাত-আট বছরে কোচ সুজনের সাথে পাল্লা দিয়ে আসছেন আরেক পরীক্ষিত কোচ সালাউদ্দিন।
তবে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের প্রিয় পাত্র হিসেবে সুজন সবসময় এগিয়ে থাকবে। হাথুরু যাওয়ার পর কোচ হিসেবে এই সুজনেই বিশ্বাস রাখছে বিসিবি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেই হাথুরুর বিপক্ষেই কোচ হিসেবে লড়তে হবে সুজনকে। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াইটা হবে কোচ হাথুরু বনাম কোচ সুজনের।
আগামী বছর শ্রীলঙ্কা টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টেও সেই হাথুরুর সামনে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ দলকে হাড়ে হাড়ে চেনা হাথুরু আগামী বছর জুড়ে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে যাচ্ছে, এমন সময়ে ফাইটার সুজনকেই আঁকতে হবে পরিকল্পনার ছক। হয়তো সফল হবেন, হয়তো হবেন না। কিন্তু তিনি ফাইট করে যাবেন, এটা নিশ্চিত।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে যেমনটা করেছিলেন, করেছিলেন ২০০৩ সালে পাকিস্তানের মাটিতে, মুলতান টেস্টে। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে কঠিন সময়ে কঠিন ওভার গুলো করে গেছেন বুক চিতিয়ে। ক্রিকেটার হিসেবে সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দেয়া তো তিনিই দেখিয়েছিলেন। এবার হয়তো কোচ হিসেবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার পালা। আমরা সমর্থকরা একটু সমর্থন তো দিতেই পারি, তাই নয় কি?