চিটাগংকে হারিয়ে বিপিএলে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন বরিশাল

ছবি: চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফরচুন বরিশালের শিরোপা উল্লাস, ক্রিকফ্রেঞ্জি

কয়েক ওভারের ব্যবধান তামিম, ডেভিড মালান, হৃদয় এবং মুশফিকুর রহিমের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বরিশাল। ফাইনালের আগেরদিন তামিম মনে করিয়ে দিয়েছিলেন মাঠে ফাইনালের চাপ সামলে যারা শান্ত থাকতে পারবে তাই বিপিএলের শিরোপা উঁচিয়ে ধরবে। অধিনায়কের কথা যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন কাইল মেয়ার্স। মাথা ঠাণ্ডা রেখে বাজে বলের অপেক্ষা করে বরিশালকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটার।
এমন বিপিএলে বিদেশিরা কেউ বিনিয়োগ করবে না: মিজানুর
১১ ফেব্রুয়ারি ২৫
ম্যাচ জিততে শেষ ২৪ বলে বরিশালের প্রয়োজন ছিল ৩২ রান। উইকেটে তখনও মেয়ার্স এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মাঠে নামার অপেক্ষায় ছিলেন মোহাম্মদ নবি, রিশাদ হোসেনরা। এমন ব্যাটিং অর্ডার থাকায় সমীকরণটা খুব বেশি কঠিন হওয়ার কথা ছিল না বরিশালের জন্য। এমন সময় একই ওভারে ‘জীবন’ পেয়েছেন মেয়ার্স ও মাহমুদউল্লাহ। বল হাওয়ায় ভাসলেও চিটাগংয়ের কোন ফিল্ডারই সেটা লুফে নিতে পারেননি। যদিও দুটি ক্যাচ ছিল নো ম্যানস ল্যান্ডে।
যদিও পরের ওভারে ৪৬ রানের ইনিংস খেলা মেয়ার্সকে বিদায় করেন শরিফুল। একই ওভারে মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে চিটাগংকে ম্যাচে ফেরান বাঁহাতি এই পেসার। ১২ বলে ২০ রানের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে রিশাদকে রেখে ১৯তম ওভারে আউট হয়েছেন নবি। ফলে শেষ ওভারে বরিশালের প্রয়োজন ছিল ৮ রান। হুসাইন তালাতের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে বরিশালকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে যান রিশাদ। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে দুই দলের রান সমান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
এমন অবস্থায় এক বল ডট দেন তানভীর ইসলাম। যদিও পরের বলে ওয়াইড দিয়ে বরিশালের জয় নিশ্চিত করেন তালাত। ফলে চিটাগংকে ৩ উইকেট হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন শিরোপা ঘরে তুলল বরিশাল। বিপিএল ইতিহাসে ফাইনালে এটিই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড। উল্টো দিকে এক যুগ পর বিপিএলে ফিরে আরও একবার স্বপ্নভঙ্গ হলো চিটাগংয়ের। নিজেদের সবশেষ আসরে অর্থাৎ ২০১৩ সালে ফাইনালে উঠলেও ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের কাছে শিরোপা খোয়াতে হয়েছিল তাদেরকে।
মিরপুরে জয়ের জন্য ১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বরিশালকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন তামিম ও হৃদয়। ইনিংসের প্রথম ওভারে বিনুরা ফার্নান্দো তিন চার মেরে আক্রমণাত্বক শুরুর আভাসই দেন তামিম। পুরো সময় ধরেই সেটা অব্যাহত রাখেন বরিশালের অধিনায়ক। তবে অন্য প্রান্তে থাকা হৃদয় ছিলেন খানিকটা ধীরগতির। সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা তামিম। আরাফাত সানির ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তিনি।

যদিও হাফ সেঞ্চুরির একটু পরই ফিরেছেন তামিম। পেসার শরিফুলের লেংথ ডেলিভারিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে লং অফের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে খালেদ আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৫৪ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটার। একই ওভারে ডেভিড মালানকেও ফিরিয়েছেন শরিফুল। ওপেনার হৃদয় যখন একটু হাতখুলে খেলার চেষ্টা করছেন তখন তাকে নিজের শিকার বানিয়েছেন নাঈম ইসলাম। ডানহাতি অফ স্পিনারের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেট সানিকে ক্যাচ দিয়েছেন।
ফাইনালে আলিসকে না পাওয়ার আক্ষেপ মিঠুন, খালেদের
৭ ফেব্রুয়ারি ২৫
মুশফিকুর রহিমও এদিন সুবিধা করে উঠতে পারেননি। নাঈমকে টানা দুই চার মেরে বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ৬ হাজার রান ছোঁয়ার দিনে ১৬ রান করেছেন তিনি। দ্রুতই চার উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে বরিশাল। চ্যাম্পিয়নদের সেখান থেকে টেনে তোলেন মেয়ার্স। ফেরার আগে খেলেছেন ৪৬ রানের ইনিংস। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ ও নবি ব্যর্থ হলেও বরিশালের শিরোপা জয় নিশ্চিত করেছেন ১৮ রান করা রিশাদ। চিটাগংয়ের হয়ে চারটি উইকেট নিয়েছেন শরিফুল।
টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে চিটাগংকে দারুণ এক শুরু এনে পারভেজ হোসেন ইমন ও খাওয়াজা নাফে। উদ্বোধনী জুটিতে তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ১২১ রান। বিপিএলের ফাইনালে উদ্বোধনী জুটিতে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি। দারুণ ব্যাটিংয়ে তারা দুজনেই হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ৬৬ রানের ইনিংস খেলা নাফের বিদায়ে ভেঙেছে তাদের জুটি।
তিনে ব্যাটিং করতে এসে ইমনকে দারুণভাবে সঙ্গ দিতে থাকেন গ্রাহাম ক্লার্ক। তারা দুজনে মিলে ৭০ রানের জুটি গড়ে তোলেন। ২৩ বলে ৪৪ রান করা ক্লার্ক ফিরলে জুটি ভাঙে। অন্য প্রান্তে চার-ছক্কায় দ্রুত রান তোলা ইমন অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন। ইমন ও নাফের ব্যাটে শেষ পর্যন্ত ১৯৪ রানের পুঁজি পায় চিটাগং। বরিশালের হয়ে একটি করে উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ আলী ও ইবাদত হোসেন চৌধুরি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
চিটাগং কিংস- ১৯৪/২ (২০ ওভার) (ইমন ৭৮*, নাফে ৬৬, ক্লার্ক ৪৪; মোহাম্মদ আলী ১/২১)
ফরচুন বরিশাল- ১৯৫/৭ (১৯.৩ ওভার) (তামিম ৫৪, হৃদয় ৩২, মেয়ার্স ৪৬, রিশাদ ১৮*; শরিফুল ৪/৩৪, নাঈম ২/১৮)