ব্যাটিং ব্যর্থতায় ঢাকার হার, জয়ে শুরু রংপুরের
ছবি: ভালো শুরু পেলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি লিটন দাস, ক্রিকফ্রেঞ্জি
২৭ রান খরচায় মেহেদী ফিরিয়ে দিয়েছেন লিটন, তানজিদ, হাবিবুর রহমান সোহান ও ফারমানউল্লাহ শাফিকে। ৬৫ থেকে ৭৫ রানে যেতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ঢাকা। সেখান থেকে আর দলকে টেনে তুলতে পারেননি থিসারা পেরেরা, স্টিফেন এস্কিনাজিরা। ভালো শুরুর পরও মাঝের ব্যাটিং ধসে ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান তোলে তারা। ঢাকাকে ৪০ রানে হারিয়ে বিপিএলের এবারের আসরের প্রথম ম্যাচেই জয় পেল রংপুর।
জনসন চার্লস ও জেসন রয় না আসায় রংপুরের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিমের উপরই আস্থা রেখেছে ঢাকা। রংপুরের দেয়া ১৯২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও শেখ মেহেদীর বিপক্ষে বাউন্ডারি বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন তানজিদ। তবে ফিল্ডারদের তৎপরতায় সেটা করে উঠতে পারলেন না তিনি আরেক ওপেনার লিটনও খানিকটা রয়েসয়েই শুরু করলেন। পঞ্চম ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বিকে পেয়ে একটু হাত খুলে খেলার প্রচেষ্টা করলেন লিটন।
সমান একটি করে ছক্কা-চারে সেই ওভার থেকে এসেছে ১৩ রান। পরের ওভারে সাইফউদ্দিনকে দুই ছক্কার সঙ্গে একটি চার মেরে তানজিদ এনেছেন ১৯ রান। তাতে পাওয়ার প্লেতে কোন উইকেট না হারিয়ে ৫৮ রান তুলে ঢাকাকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন লিটন ও তানজিদ। তবে অষ্টম ওভারে এসে নিজেদের প্রথম উইকেট হারায় তারা। মেহেদী অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় সাইফ হাসানকে ক্যাচ দিয়েছেন তানজিদ।
বাঁহাতি ওপেনারকে ফিরতে হয়েছে ২১ বলে ৩০ রান করে। একই ওভারে হাবিবুর রহমান সোহানকেও ফিরিয়েছেন মেহেদী। ব্যাটিংয়ে এসে প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছিলেন হাবিবুর। পরের বলেই একই চেষ্টায় আউট হয়েছেন স্টিভেন টেলরের হাতে ক্যাচ দিয়ে। একটু আর আউট হয়েছেন লিটনও। মেহেদীর গুড লেংথ ডেলিভারিতে ছক্কা মারতে গিয়ে ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারেননি তিনি। ফলে লং অনে থাকা অ্যালেক্স হেলসকে ক্যাচ দিয়েছেন ৩০ রান করা লিটন।
একই ওভারে ফারমানউল্লাহ শাফিকেও ফিরিয়েছেন মেহেদী। ডানহাতি অফ স্পিনারের দারুণ এক ডেলিভারি বোল্ড করেছেন আফগানিস্তানের এই ব্যাটারকে। নিজের ৪ ওভারের স্পেলে ২৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী। অধিনায়ক থিসারা পেরেরা আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে বিপদ কাটানোর চেষ্টা করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। কামরুল রাব্বির ওয়াইড লাইনের স্লোয়ার ডেলিভারিতে মিড অফের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে সাইফকে ক্যাচ দিয়েছেন। পেরেরাকে ফিরতে হয় ১৭ রানে।
আলাউদ্দিন বাবু, আমির হামজাও ফিরেছেন দ্রুতই। মিরপুরের উইকেটে ধুঁকতে থাকা স্টিফেন এস্কিনাজি সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন। রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি ইংলিশ এই ব্যাটারের। শেষ দিকে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ ও নাজমুল ইসলাম অপুর ব্যাটে কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে ঢাকা। রংপুরের হয়ে মেহেদী চারটি ও খুশদিল নিয়েছেন দুটি উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ভালো শুরুর আভাসই দিয়েছিলেন রংপুর রাইডার্সের দুই ওপেনার স্টিভেন টেলর ও অ্যালেক্স হেলস। প্রথম ওভারে আমির হামজার বিপক্ষে এক ছক্কা ও দুই চারে ১৪ রান এনেছেন টেলর। তবে পরের ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বিপক্ষে সাজঘরে ফিরেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। মুস্তাফিজের দারুণ এক ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন ৭ বলে ১৪ রান করা টেলর। তৃতীয় ওভারে আলাউদ্দিন বোলিংয়ে এসেই ফিরিয়েছেন হেলসকে। অভিজ্ঞ এই মিডিয়াম পেসারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন ৫ রান করা এই ব্যাটার।
২০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে তোলেন সাইফ ও ইফতিখার। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৮৯ রান। শুরুর ধাক্কা সামলে রংপুরকে এগিয়েও নিয়েছেন তারা। সাইফের বিদায়ে ভাঙে তাদের দুজনের জমে ওঠা জুটি। আলাউদ্দিনের বলে ফারমানউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৩৩ বলে ৪০ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটার। একটু পর ফিরেছেন ইফতিখারও। আলাউদ্দিনের স্লোয়ার ডেলিভারিতে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে তানজিদকে ক্যাচ দিয়েছেন।
দারুণ ব্যাটিং করলেও হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি তাঁর। পাকিস্তানের এই অলরাউন্ডার খেলেছেন ৩৮ বলে ৪৯ রানের ইনিংস। ইফতিখার ফিরলেও রানের গতি সচল রেখেছিলেন খুশদিল ও সোহান। তাদের দুজনের ব্যাটে সঠিক পথেই ছিল রংপুর। কদিন আগে জাতীয় ক্রিকেট লিগে দারুণ ব্যাটিং করা সোহান বিপিএলেও নিজের ফর্ম টেনে এনেছেন। সাজঘরে ফেরার আগে ছয়টি চারে ১১ বলে ২৫ রানের ক্যামিও খেলেছেন।
বরিশাল ছেড়ে রংপুরে যোগ দেয়া সাইফউদ্দিন আউট হয়েছেন পরের বলে গোল্ডেন ডাক মেরে। ইয়র্কার মেরে হ্যাটট্রিক করতে চাইলেও মুকিদুল ইসলামকে সেটা করতে দেননি শেখ মেহেদী। তবে পরের ওভারে মুস্তাফিজকে ২ ছক্কা মেরে রংপুরকে বড় পুঁজি এনে দিয়েছেন খুশদিল। বাঁহাতি এই ব্যাটার অপরাজিত ছিলেন ২৩ বলে ৪৬ রানের ইনিংস খেলে। ঢাকার হয়ে আলাউদ্দিন তিনটি, মুকিদুল দুটি এবং মুস্তাফিজ একটি উইকেট নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
রংপুর রাইডার্স- ১৯১/৬ (১৬ ওভার) (টেলর ১৪, হেলস ৫, সাইফ ৪০, ইফতিখার ৪৯, সোহান ২৫, খুশদিল ৪৬*)
ঢাকা ক্যাপিটালস- ১৫১/৯ (২০ ওভার) (তানজিদ ৩০, লিটন ৩০, হাবিবুর ৬ এস্কিনাজি ১৭, পেরেরা ১৭, মুকিদুল ১৮; মেহেদী ৪/২৭)