৯ বছর ও ১১ ম্যাচ পর আবাহনীকে হারাল মোহামেডান

ছবি: ৪ উইকেট নিয়ে মোহামেডানের জয়ে অবদান রেখেছেন ইবাদত হোসেন, ক্রিকফ্রেঞ্জি

কিছুক্ষণ আগেই ইমনকে আউট না দেয়ায় অনফিল্ড আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ান মোহামেডানের ফিল্ডাররা। মোহাম্মদ মিঠুনের ক্ষেত্রেও একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তারা। মিরপুরে ম্যাচের পুরোটা সময় জুড়েই আগ্রাসী ছিলেন মোহামেডানের ক্রিকেটাররা। নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে আবাহনী জয়ের স্বপ্ন দেখলেও সেটা ছিনিয়ে নিয়েছেন ইবাদত ও সাইফউদ্দিন। তাদের দুজনের শেষের বোলিংয়ে ২২৫ রানে গুটিয়ে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
১ ম্যাচ নিষিদ্ধ হৃদয়, ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ইবাদতের
২ ঘন্টা আগে
২০১৬ সালের পর অর্থাৎ ৯ বছর ও ১১ ম্যাচ পর ডিপিএলের ওয়ানডে সংস্করণে প্রথমবারের মতো জয় পেয়েছে মোহামেডান। শেষ রাউন্ডের জয়ে আবাহনীকে ছুঁয়েও ফেলেছে তারা। ১১ ম্যাচে ৯ জয়ে মোহামেডানের পয়েন্ট ১৮। চ্যাম্পিয়ন আবাহনীও ১১ ম্যাচের ৯টিতে জিতেছে। ফলে ডিপিএলের শিরোপা জয়ে আবাহনীর সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে রইলো মোহামেডান। সুপার লিগেও একে অপরের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাবে তারা।
মিরপুরে জয়ের জন্য ২৬৪ রান তাড়ায় আবাহনীকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেনি পারভেজ হোসেন ইমন-জিসান আলম জুটি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই মোহামেডানকে প্রথম উইকেট এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ডানহাতি অফ স্পিনারের বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে খেলতে গিয়ে ইবাদত হোসেনকে ক্যাচ দিয়েছেন জিসান। একটু পর ফিরতে পারতেন পারভেজ ইমনও। মিরাজের বলে বাঁহাতি ওপেনারের ক্যাচ নিয়েছিলেন স্লিপে থাকা ফিল্ডার। যদিও বল প্যাডে লাগায় তাকে আউট দেননি।
মোহামেডানের ফিল্ডাররা অবশ্য অনফিল্ড আম্পায়ারের এমন সিদ্ধান্ত মানতে পারছিলেন না। আম্পায়ারকে নানাভাবে কনভিন্স করার চেষ্টা করছিলেন মিরাজ-হৃদয়রা। যদিও পারভেজ ইমন টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। দারুণ ছন্দে থাকা ওপেনারকে একটু পরই ফিরিয়েছেন ইবাদত। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে খেলার চেষ্টায় মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৬ রান করা পারভেজ ইমন।
ইবাদতের পরের ওভারেও আম্পায়ারিং নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মোহামেডানের ক্রিকেটাররা। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে লেগ বিফোর হতে পারতেন মোহাম্মদ মিঠুন। তবে তাকে আউট দেননি অনফিল্ড আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে ফিল্ডাররা তর্কেও জড়িয়েছিলেন। পারভেজ ইমনের মতো মিঠুনও ইনিংস বড় করতে পারেননি। মিরাজের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন ১৯ রান করা এই ব্যাটার।

একপ্রান্ত আগলে রেখে অবশ্য ৬৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন শান্ত। বাঁহাতি ব্যাটারকে পরবর্তীতে মুমিনুল হক সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করলেও ফিরেছেন ২৫ রানে। ইবাদতের বলে সাইফউদ্দিনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। বল হাতে আলো ছড়ালেও ব্যাটিংয়ে ১ রানের বেশি করতে পারেননি মাহফুজুর রহমান রাব্বি। উইকেটে এসে শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। যদিও তাকে ইনিংস বড় করতে দেননি ইবাদত। ডানহাতি পেসারের লেংথ ডেলিভারিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে মিড অফে মিরাজকে ক্যাচ দিয়েছেন ২৪ রানে।
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের উত্তেজনা হারিয়ে যাওয়ার কারণ জানা নেই শান্তর
১১ এপ্রিল ২৫
গরমের কারণে বেশ কয়েকবারই ক্র্যাম্প হয়েছে শান্তর। যদিও দলের প্রয়োজনে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই ব্যাটিং চালিয়ে যান তিনি। বাঁহাতি ব্যাটারের ব্যাটে জয়ের পথেই হাঁটছিল আবাহনী। এমন সময় শান্তকে ফিরিয়ে মোহামেডানকে স্বস্তি এনে দেন সাইফউদ্দিন। ডানহাতি পেসারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ৮০ রানের ইনিংস খেলা শান্ত। একই ওভারে রাকিবুল হাসানকেও ফেরান সাইফউদ্দিন।
শান্ত ফিরলেও আবাহনীর জয়ের আশা জাগিয়েছিলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। পেসার রিপন মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে ২৫ রানের জুটি গড়ে তোলেন। ২৪ রান করা বাঁহাতি ব্যাটারকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন আবু হায়দার রনি। শেষ উইকেটে নাহিদ রানা ও রিপন মিলে চেষ্টা করলেও তা কাজে আসেনি। ১৩ রান করা রিপনকে ফিরিয়ে মোহামেডানের ৩৯ রানের জয় নিশ্চিত করেন ইবাদত। ৯ বছর পর আবাহনীর বিপক্ষে জয় পাওয়া ম্যাচে মোহামেডানের হয়ে ইবাদত চারটি উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া সাইফউদ্দিন ও মিরাজ পেয়েছেন দুটি করে উইকেট।
টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে খানিকটা আক্রমণাত্বক মেজাজে শুরু করেছিলেন রনি তালুকদার ও আনিসুল। যদিও তাদের দুজনের বড় হয়ে উঠতে দেননি নাহিদ রানা। ডানহাতি পেসারের করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারের প্রথম পাঁচ বলে একটি ছক্কা ও চার মেরেছিলেন রনি। তবে ওভারের শেষ বলে ডানহাতি ব্যাটারের উইকেট নিয়েছেন নাহিদ। আবাহনীর পেসারের লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে খোঁচা দিতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন রনি।
বাম দিকে বেশ খানিকটা ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মোহাম্মদ মিঠু। ওপেনার রনিকে ফিরতে হয় ১৬ রানে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ে তোলেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও আনিসুল। শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকা আনিসুল হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন ৪৮ বলে। আরেক ব্যাটার অঙ্কনও পঞ্চাশ ছুঁতে পারতেন। তবে ব্যক্তিগত ৪৮ রানের সময় রাকিবুল হাসানের বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি। ডানহাতি উইকেটকিপার ব্যাটারের বিদায়ে ভাঙে ১২৩ রানের অনবদ্য জুটি।
চারে নেমে সুবিধা করতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়। বাঁহাতি স্পিনার মাহফুজুর রহমান রাব্বির বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন ৩ রানে। এরপর মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে মোহামেডানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন আনিসুল। দারুণ ব্যাটিংয়ে পেয়েছেন সেঞ্চুরিও। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করে ১০৪ বলে সেঞ্চুরি করেছেন আনিসুল। ডিপিএলের চলতি মৌসুমে এটা ডানহাতি ওপেনারের প্রথম সেঞ্চুরি।
মুশফিক ও আনিসুলের বিদায়ে জুটি গড়ার প্রয়োজন হলেও সেটা করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ভালো শুরু পেয়েও ফিরেছেন ১৭ রানে। রাকিবুলের নিচু হওয়া ডেলিভারিতে সুইপ করে বড় শট খেলার চেষ্টায় বোল্ড হয়েছেন তিনি। আবু হায়দার, সাইফউদ্দিনরাও আউট হয়েছেন দ্রুতই। শেষের দিকে ১৮ রান করেছেন মিরাজ। শেষ পর্যন্ত ২৬৪ রানে অল আউট হয় মোহামেডান। আবাহনীর হয়ে তিনটি উইকেট নিয়েছেন নাহিদ। এ ছাড়া রাকিবুল, মৃত্যুঞ্জয় ও মাহফুজুর দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব- ২৬৪/১০ (৪৮.২ ওভার) (রনি ১৬, আনিসুল ১১৪, অঙ্কন ৪৮, মুশফিক ২০, মিরাজ ১৮, মাহমুদউল্লাহ ১৭; নাহিদ ৩/৪৯, রাকিবুল ২/২৩)
আবাহনী লিমিটেড- ২২৫/১০ (৪৭.২ ওভার) (পারভেজ ইমন ১৬, শান্ত ৮০, মিঠুন ১৯, মুমিনুল ২৫, মোসাদ্দেক ২৪; ইবাদত ৪/৩৬)