কোহলির সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে সেমিতে এক পা ভারতের

ছবি: আইসিসি

ভারতের জিততে বাকি ৪ রান কোহলির সেঞ্চুরি পেতে দরকার ৫। কোহলির সেঞ্চুরি হবে কি হবে না তা নিয়ে শঙ্কা। সেখানে বাউন্ডারি মারা ছাড়া মাইলফলকে পৌঁছানোর সুযোগ ছিল না তার। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই যেন নিলেন কোহলি। ৪৩তম ওভারের তৃতীয় বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে লং অফ দিয়ে চার মেরে ভারতের জয়ের সঙ্গে নিজের সেঞ্চুরিও তুলে নিলেন কোহলি। সেঞ্চুরির পর ড্রেসিং রুমের দিকে কোহলি হাত নেড়ে যেন বোঝালেন ' 'রিল্যাক্স' আমি জানি কী করতে হবে'। ওয়ানডেতে এটি কোহলির ৫১তম সেঞ্চুরি। আর ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে কোহলির সেঞ্চুরি হয়ে গেল ৮২টি। এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই ইতিবাচক ব্যাটিং করেছেন কোহলি।
‘কোহলির কাউকে প্রমাণের কিছু নেই’
২২ ফেব্রুয়ারি ২৫
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ২৪২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ভারতকে ভালো শুরুই এনে দিয়েছিলেন রোহিত ও শুভমান গিল। সাবধানী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি প্রায় প্রতি ওভারে বাউন্ডারিও বের করছিলেন তারা দুজন। তবে পঞ্চম ওভারে এসে তাদের জুটি ভাঙেন শাহীন আফ্রিদি। বাঁহাতি পেসারের পঞ্চম ডেলিভারিতে কভারের উপর দিয়ে চার মেরেছিলেন রোহিত। পরের বলেই অবশ্য ভারতের অধিনায়ককে দারুণ জবাব দিয়েছেন শাহীন আফ্রিদি।
পাকিস্তানের পেসারের দুর্দান্ত ইয়র্কারের সঙ্গে লেট সুইংয়ে এলোমেলো হয়েছে রোহিতের স্টাম্প। ভালো শুরু পেয়েও তাকে ফিরতে হয়েছে ২০ রানে। অধিনায়কের উইকেট হারালেও পাওয়ার প্লেতে দাপট দেখিয়েছে ভারত। ১০ ওভার শেষে ৬৪ রান তোলে তারা। পাওয়ার প্লের পরের কয়েক ওভার দ্রুত রান তুললেও পরবর্তীতে সেটা কমে যায়। ১৪ হাজার থেকে ১৫ রান দূরে থেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন কোহলি।
ইনিংসের ১৩তম ওভারে হারিস রউফের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে দারুণ এক কাভার ড্রাইভে চার মেরে ওয়ানডেতে ১৪ হাজার রান ছুঁয়েছেন কোহলি। ২৮৭ ইনিংসে এমন কীর্তি গড়েছেন তিনি। শচীন টেন্ডুলকার ও কুমার সাঙ্গাকারার পর তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ১৪ হাজার রান করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ১৪ হাজার করতে শচীন ৩৫০ এবং সাঙ্গাকারা ৩৭৮ ইনিংস খেলেছিলেন। ফলে ইনিংসের হিসেবে তাদের দুজনের চেয়ে দ্রুততম সময়ে এমন রেকর্ড গড়েছেন কোহলি।

আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পাওয়া গিল এদিনও সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন। হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার খুব কাছেও ছিলেন। ডানহাতি ওপেনারকে সেটা অবশ্য করতে দেননি আবরার আহমেদ। ডানহাতি স্পিনারের ক্যারম ডেলিভারি বুঝেনই উঠতে পারেননি গিল। ফলে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন তিনি। নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা কোহলিও প্রতিক্রিয়া দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছিলেন আবরারের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতেই আউট হয়েছেন ৪৬ রান করা গিল।
ভুলে ভারতের জাতীয় সংগীত বাজানোয় আইসিসির কাছে ব্যাখ্যা চায় পাকিস্তান
১৩ ঘন্টা আগে
অন্য প্রান্তে থাকা কোহলি অবশ্য সাবলীলই ছিলেন কোহলি। সাম্প্রতিক সময়ে ছন্দে না থাকলেও পাকিস্তানকে পেয়ে জ্বলে উঠেছেন তিনি। নাসিমকে চার মেরে ৬২ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। কোহলিকে দারুণভাবে সঙ্গ দিতে থাকেন চারে নামা আইয়ার। কোহলির সঙ্গে আইয়ারের ১১৪ রানের জুটি ভেঙেছেন খুশদিল। ৫৬ রান করা আইয়ার এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দিয়েছেন ইমাম উল হকের হাতে। এরপর অবশ্য হার্দিক পান্ডিয়া শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেননি। আফ্রিদির ওপর চড়াও হতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে রিজওয়ানের হাতে। তাতেই ৬ বলে ৮ রানে শেষ হয় হার্দিকের ইনিংস। এরপর ভারতকে আর উইকেট হারাতে দেননি অক্ষর প্যাটেল ও কোহলি। দুজনে মিলে ভারতকে জয় এনে দিয়ে মাঠ ছেড়েছেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ইমাম উল হক ও বাবর আজম মিলে ভালো শুরুর আভাসই দিয়েছিলেন। ইনিংসের নবম ওভারে এসে নিজেদের প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। হার্দিকের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। ভালো শুরু করা বাবর আউট হয়েছেন ২৩ রানে। পরের ওভারে আউট হয়েছেন আরেক ওপেনার ইমাম। কুলদীপ যাদবের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মিড অনে ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন তিনি।
যদিও নন স্ট্রাইক প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙেছেন অক্ষর প্যাটেল। চোটে পড়া ফখর জামানের বদলি হিসেবে সুযোগ পেয়ে ১০ রানের বেশি করতে পারেননি ইমাম। দ্রুতই দুই উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে তোলেন রিজওয়ান ও সাউদ সাকিল। তবে প্রত্যাশিতভাবে রান তুলতে পারেননি তারা। ১১ থেকে ২০ ওভারে মাত্র ২৭ রান করেছেন তারা দুজন। এ ছাড়া প্রথম ১২০ বলের মাঝে ৮০টা ডট দিয়েছিলেন পাকিস্তানের ব্যাটাররা।
পরবর্তীতে অবশ্য রান তোলার গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন সাকিল। সাবধানী ব্যাটিংয়ে রবীন্দ্র জাদেজার বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে ৬৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। হাফ সেঞ্চুরির পথে ছিলেন রিজওয়ানও। হার্দিকের পঞ্চম বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে জুটির সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন তিনি। তবে পরের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। যদিও খানিকটা দৌড়ে গিয়ে সেটা লুফে নিতে পারেননি হার্শিত রানা। জীবন পেয়েও সেটা কাজে লাগাতে পারলেন না রিজওয়ান।
অক্ষরের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন ৭৭ বলে ৪৬ রানের ইনিংস খেলা পাকিস্তানের অধিনায়ক। রিজওয়ানের বিদায়ে ভেঙেছে সাকিলের সঙ্গে ১০৪ রানের জুটি। হাফ সেঞ্চুরি করা সাকিলও আউট হয়েছেন একটু পরই। হার্দিকের বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে থাকা অক্ষরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ৭৬ বলে ৬২ রান করে। আরও একবার ব্যর্থ হয়েছেন তৈয়্যব তাহির।
জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও সালমান আলী আঘা ও খুশদিলকে সেটা বেশিদূর টেনে নিয়ে যেতে দেননি কুলদীপ। বাঁহাতি স্পিনারের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে ১৯ রানে আউট হয়েছেন সালমান। পরের বলে ফিরেছেন শাহীন আফ্রিদিও। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি হলেও কুলদীপকে সেটা করতে দেননি নাসিম। শেষের দিকে খুশদিলের ৩৮ রানের ইনিংসে ২৪১ রানের পুঁজি পায় পাকিস্তান। ভারতের হয়ে কুলদীপ তিনটি এবং হার্দিক দুটি উইকেট নিয়েছেন।