বাংলাদেশের আরেকটি দাপুটে সেশন
ছবি:
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ১৬৪/১০ (৭১.৫ ওভার) (সাদমান ৬৪, মিরাজ ৩৬, শাহাদাত ২২, তাইজুল ১৬; সিলস ৪/৫, শামার ৩/৪৯ )
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস)- ১৪৬/১০ (৬৫ ওভার) (ব্র্যাথওয়েট ৩৯, কার্টি ৪০, লুইস ১২, হজ ৩, অ্যাথানাজে ২; নাহিদ ৫/৬১, তাসকিন ১/১৭)
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ১১০/২ (২০ ওভার) (জয় ০, সাদমান ৪৪*, দিপু ২৮, মিরাজ ২৬*)
আরেকটি সেশনে বাংলাদেশের দাপট
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেস আগুনে পুড়িয়ে দিনের প্রথম সেশনটা নিজেদের করিয়ে নিয়েছিল বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর এসেও স্বাগতিকদের দুই উইকেট তুলে নেয় সফরকারীরা। ১৮ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে উইকেট হারালেও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন শাহাদাত হোসেন দিপু, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাদমান ইসলামরা। ২ উইকেটে ১১০ রান তুলে আরেকটি সেশন নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ১২৮ রানে এগিয়ে তারা।
ওয়ানডে মেজাজে সাদমান-মিরাজ জুটির পঞ্চাশ, বাংলাদেশের একশ
ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ১৮ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। জেইডেন সিলসের অফ স্টাম্পের বাইরের গুড লেংথ ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে এজ হয়ে দ্বিতীয় স্লিপে থাকা অ্যালিক অ্যাথানাজেকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। রানের খাতা খুলতে না পারা ডানহাতি ওপেনার পুরো সিরিজ জুড়েই প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৪ ইনিংসে মাত্র ১৪ রান করেছেন জয়। তরুণ ওপেনার ফেরার পর শুরু থেকেই দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন শাহাদাত হোসেন দিপু।
তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ওপেনার সাদমান ইসলামও। তাদের দুজনের ব্যাটে বিশেষ করে দিপুর আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাংলাদেশ। তবে ড্রিংকস ব্রেকের পর উইকেট হারায় সফরকারীরা। আলজারি জোসেফের গুড লেংথ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় সিলসকে ক্যাচ দিয়েছেন ২৬ বলে ২৮ রান করা দিপু। ব্যাটিংয়ে এসে মেহেদী হাসান মিরাজও দ্রুত রান তুলতে থাকেন। শুরু থেকে সাবধানী ব্যাটিং করতে থাকা সাদমানও তাদের পথে হাঁটেন। তাতে ওয়ানডে মেজাজে রান তুলে মাত্র ২৯ বলে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়েছেন মিরাজ ও সাদমান।
১৬৪ রানে অল আউট হয়েও বাংলাদেশের লিড
দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে বাংলাদেশের পেসারদের বিপক্ষে দারুণ এক প্রতিরোধ গড়েছিলেন ক্রেইগ ব্রার্থওয়েট এবং কেসি কার্টি। সাবধানী ব্যাটিংয়ে জুটির পঞ্চাশও করেছেন তারা দুজন। তবে ব্রার্থওয়েটকে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙেছেন নাহিদ রানা। ডানহাতি পেসারের বাউন্সারে ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন ব্রার্থওয়েট। তবে বলে ব্যাটে লেগে চলে যায় গালিতে। সেখানে দাঁড়িয়ে ক্যাচ নিতে ভুল করেননি জাকির হাসান। নাহিদের ওভারের চতুর্থ বলেই ফিরতে পারতেন কাভেম হজ। বাংলাদেশের তরুণ পেসারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
টপ এজ হয়ে ক্যাচ তুলে দিলেও শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়িয়ে থাকা তাসকিন আহমেদ খানিনকটা দৌড়ে এলেও লুফে নিতে পারেননি। জীবন পেয়ে অবশ্য সেই সুযোগ একেবারেই কাজে লাগাতে পারেননি হজ। ওই ওভারের শেষ বলে নাহিদের বলেই সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। ২২ বছর বয়সী পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের গতিময় ডেলিভারিতে এজ হয়ে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে। একটু ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন দাস। প্রথম টেস্টে ব্যাট হাতে পারফর্ম করা অ্যালিক অ্যাথানাজে ব্যর্থ হয়েছেন জ্যামাইকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে।
আগের বলটা একটু অফ স্টাম্পের বাইরের করেছিলেন তাসকিন। তবে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে পরের বলটা তাসকিন করেছিলেন ভেতরের দিকে। ডানহাতি পেসারের নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন ২ রান করা অ্যাথানাজে। দিনের প্রথম ঘণ্টায় বল হাতে দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে ৩২ রান খরচায় ব্রার্থওয়েট, হজ এবং অ্যাথানাজেকে ফিরিয়েছে সফরকারীরা। ড্রিংকস ব্রেক শেষের একটু পর আবার উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিনের শুরুতে বল হাতে নিলেও দুই ওভারের বেশি বোলিং করেননি তাইজুল ইসলাম।
নাহিদের সঙ্গে তাসকিনকে ডেকে নিয়েছিলেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। নিজের স্পেল শেষ করে নাহিদ ড্রেসিংরুমে ফেরায় একপ্রান্তে তাসকিন থাকলেও অন্যপ্রান্তে তাইজুলের হাতে বল তুলে দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। নিজের দ্বিতীয় স্পেলের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার। বলে খুব বেশি টার্ন না থাকলেও জাস্টিন গ্রিভসের ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে বল আঘাত করে স্টাম্পে। আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান গ্রিভসকে ফিরতে হয়েছে মাত্র ২ রানে।
একটু পর বাংলাদেশকে উইকেট এনে দিয়েছেন হাসান মাহমুদও। ডানহাতি পেসারের মিডল স্টাম্পে পড়ে লেগ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করেন জশুয়া ডি সিলভা। বল প্যাডে আঘাত করতেই আবেদন করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। আম্পায়ারও আঙুল তুলে আউট দেন। তবে তৎক্ষণাৎ রিভিউ নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটকিপার ব্যাটার। যদিও সেটা কাজে আসেনি। ৫ রান করে হাসানের শিকার হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে ডি সিলভাকে। নিজের পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে বাংলাদেশের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ানো কার্টিকেও ফিরিয়েছেন হাসান।
বাকিরা সবাই যখন আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন তখন একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন কার্টি। তবে হাসানের শিকার হয়ে হাফ সেঞ্চুরির আগেই ফিরতে হয়েছে তাকে। ডানহাতি পেসারের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। বল কার্টির ব্যাটের ছোঁয়া লেগে উইকেটকিপার লিটনের গ্লাভসবন্দী হয়েছিলেন। আম্পায়ার নট আউট দিলেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ। ফলস্বরূপ ৪০ রান করা কার্টিকে বিদায় করেছে সফরকারীরা। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল লিটনের গ্লাভসে যাওয়ার আগে ব্যাটের কানায় স্পর্শ করেছে।
প্রথম স্পেলে বাজিমাত করা নাহিদকে বোলিংয়ে ফেরানো হয়েছে লাঞ্চের একটু আগে। বোলিংয়ে এসেই বাংলাদেশকে উইকেট এনে দিয়েছেন ডানহাতি এই পেসার। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় নাহিদকে আক্রমণের চেষ্টা করছিলেন আলজারি জোসেফ। বাংলাদেশও তাই মাহমুদুল হাসান জয়কে সীমানায় পাঠিয়ে দেয়। তবে আলজারির বিপক্ষে নাহিদ করেছিলেন স্লোয়ার ফুলটস। সেটা বুঝতে না পেরে শর্ট মিড অফে থাকা মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৭ রান করা এই ব্যাটার। দিনের প্রথম সেশনের পুরোটা সময় দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬৫ রান তোলার সেশনে সফরকারী বোলাররা নিয়েছেন ৭ উইকেট।
লাঞ্চ থেকে ফিরেই দ্বিতীয় ওভারে উইকেটের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজের দারুণ এক ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন শামার জোসেফ। পরবর্তীতে কেমার রোচকে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৬ রানে অল আউট করে বাংলাদেশ। এদিকে রোচকে ফিরিয়ে প্রথমবারের মতো টেস্টে ৫ উইকেটের দেখা পেয়েছেন নাহিদ। ডানহাতি পেসারের দারুণ এক ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন রোচ। রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা কাজে আসেনি। নাহিদের পাশাপাশি হাসান দুটি এবং একটি করে উইকেট পেয়েছেন তাসকিন, তাইজুল এবং মিরাজ। স্বাগতিকদের ১৪৬ রানে গুঁড়িয়ে দেয়ায় ১৮ রানের লিড পেয়েছে বাংলাদেশ।