|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
সেঞ্চুরির পর প্রথম দিনের শেষে রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে রবিচন্দ্রন অশ্বিন জানিয়ে রেখেছিলেন দ্বিতীয় দিন সকালেও উইকেট থেকে বাড়তি সুবিধা পাবেন পেসাররা। ভারতের অভিজ্ঞ স্পিনারের কথার ফল পাওয়া গেছে পুরো দিন জুড়ে। সকালের শুরুতে ভারতকে গুঁড়িয়ে দেয়ার কাজটা সারলেন ৩ উইকেট নেয়া তাসকিন আহমেদ। ভারতকে পেস আগুনে পুড়িয়ে মারা বাংলাদেশও পুড়ল জসপ্রিত বুমরাহ, আকাশ দীপ, মোহাম্মদ সিরাজদের। ভারতের পেসারদের সামনে টিকে থাকার যেন উপায়ই খুঁজে পেলেন না সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান, মুমিনুল হক থেকে মুশফিকুর রহিমরা।
নাজমুল হোসেন শান্তদের আসা-যাওয়ার মিছিলে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অল আউট হয়েছে মাত্র ১৪৯ রানে। সফরকারীদের চেয়ে ২২৭ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ উইকেটে ৮১ রান তুলে দিন শেষ করেছে ভারত। চেন্নাইয়ে সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট পড়ার দিনে চালকের আসনে বসে আছেন রোহিত শর্মারা। বাংলাদেশের চেয়ে ৩০৮ রানে এগিয়ে থেকে তৃতীয় দিন সকালে ব্যাটিংয়ে নামবেন পান্ত এবং শুভমান গিল।
২২৮ রানে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ভারতের। শুরুতেই তারা ওপেনার ও অধিনায়ক রোহিত শর্মার উইকেট হারিয়েছে। তাসকিন আহমেদের শর্ট লেংথের লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে এঙ্গেলে খেলতে গিয়ে আউট সাইড এজ হয়ে গালিতে জাকির হাসানের হাতে ধরা পড়েন রোহিত। ফলে ৫ রান করেই ফিরে যেতে হয় তাকে।
এরপর খানিক বাদেই আরেক ভারতীয় ওপেনার ইয়াসভি জায়সাওয়ালকে তুলে নেন নাহিদ রানা। নিজের প্রথম ওভার করতে এসে তৃতীয় বলেই অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হন দারুণ শুরু পাওয়া জায়সাওয়াল। সহজ ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি বাংলাদেশ দলের উইকেটরক্ষক লিটন দাস। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন শুভমান গিল ও বিরাট কোহলি। যদিও তাদের দুজনের কেউই দ্রুত রান তুলতে পারেননি।
বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ডানহাতি অফ স্পিনারের বল প্যাডে লাগতেই আবেদন করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। আবেদন করতেই আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। গিলের সঙ্গে কথা বললেও রিভিউ নেননি কোহলি। পরবর্তীতে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্যাডে লাগার আগে কোহলির ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। রিভিউ নিলেই বেঁচে যেতেন ১৭ রানে আউট হওয়া এই ব্যাটার। পান্তকে সঙ্গে নিয়ে দিনের বাকিটা সময় শেষ করেছেন ৩৩ রানে অপরাজিত থাকা গিল।
এর আগে ভারতের ৩৭৬ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দেখেশুনেই করতে চেয়েছিলেন সাদমান ইসলাম। বাংলাদেশের বাঁহাতি ওপেনারকে বিপদে ফেলতে নিজের করা প্রথম পাঁচটি ডেলিভারিই ওভার দ্য উইকেট থেকে আউট সুইং করেছেন জসপ্রিত বুমরাহ। তবে শেষ ডেলিভারিটি করার জন্য রাউন্ড উইকেটে যান ডানহাতি পেসার। বুমরাহর গুড লেংথ ডেলিভারিতে খেলার চেষ্টা না করে বোল্ড হয়েছেন সাদমান। বাঁহাতি ওপেনার ভেবেছিলেন অফ স্টাম্পে পড়ে বল হয়ত বেরিয়ে যাবে।
সাদমানের ভাবনার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক থাকায় বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় তাকে। সঙ্গীকে হারিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে হাল ধরার চেষ্টায় ছিলেন জাকির হাসান। লাঞ্চ থেকে মাত্র এক ওভার দূরে ছিল বাংলাদেশ। এমন সময় আকাশ দীপের ভেতরে ঢোকা বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন। পরের বলে ফিরেছেন মুমিনুল হকও। ডানহাতি পেসারের দারুণ এক ডেলিভারিতে ডিফেন্স করার চেষ্টায় বোল্ড হতে হয় তাকে।
মুমিনুল গোল্ডেন ডাক মেরে ফেরার পর বাকি চারটি বল খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। বিরতি থেকে ফেরার পর শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। মোহাম্মাদ সিরাজের বল স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বসেন শান্ত। ২০ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দলের এমন বিপদের সময় টিকতে পারেননি মুশফিকও। বুমরাহর বলে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ৮ রানে সাজঘরে ফেরেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। লাঞ্চ থেকে ফেরার পর প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান।
তারা দুজনে মিলে দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টায় আর কোন উইকেট হারাতে দেননি। সাকিব ও লিটনের জমে ওঠা পঞ্চাশ পেরোনো জুটি ভেঙেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। বাঁহাতি স্পিনারের অফ স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগ ধ্রুব জুরেলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন লিটন। বাংলাদেশের উইকেটকিপার ব্যাটার ফিরেছেন ২২ রানে। একটু পর জাদেজাকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে পান্তের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন ৩২ রান করা সাকিব।
চা বিরতিতে যাওয়ার আগে হাসান মাহমুদের উইকেটও হারিয়েছে বাংলাদেশ। বুমরাহর বলে দ্বিতীয় স্লিপে থাকা বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৯ রান করা হাসান। চা বিরতি থেকে ফিরে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে তাদের দুজনের জুটি খুব বেশি বড় হতে দেননি বুমরাহ। লম্বা সময় ধরে তাসকিনের শরীর বরাবর বোলিং করে যাচ্ছিলেন ডানহাতি এই পেসার।
বাউন্সার করতে করতে এক পর্যায়ে এসে দারুণ এক ইয়র্কারে তাসকিনকে বোল্ড করেছেন বুমরাহ। মিরাজ অপরাজিত থাকলেও নাহিদ রানা ফিরেছেন মোহাম্মদ সিরাজের বলে বোল্ড হয়ে। নাহিদের বিদায়ে প্রথম ইনিংসে ১৪৯ রানে অল আউট হয়েছে বাংলাদেশ। তাতে চেন্নাই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানের লিড পেয়েছে স্বাগতিক ভারত।
সকালের শুরুতে আগের দিনের ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। নতুন বলে তাসকিন-হাসানকে দেখে শুনে সামাল দেয়ার চেষ্টায় ছিলেন অশ্বিন-জাদেজা। কিন্তু তাসকিনের ওভারে একটু লাফিয়ে ওঠা বলে খোঁচা দিয়ে বসেন সেঞ্চুরির জন্য ব্যাট করতে থাকা জাদেজা। ৮৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। ফলে তার বিদায়ে অশ্বিনকে সঙ্গ দিতে আসেন আকাশদীপ।
ক্রিজে এসে স্কোরিং শটস খেললেও তাসকিনের বিপক্ষে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন আকাশ। তবে সেই ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ হন সাকিব আল হাসান। জীবন পেলেও এই তাসকিনের ওভারেই আবারও আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর তালুবন্দি হন আকাশ। এর খানিক পরই তাসকিনের নাকল ডেলিভারি উড়িয়ে মারতে গিয়ে আবারও শান্তর হাতে ক্যাচ দেন অশ্বিন। ১১৩ রানে থামে অশ্বিনের ইনিংস।
এরপরের ওভারেই জাস্প্রিত বুমরাহকে দারুণ এক ইয়োর্কারে বোকা বানান হাসান, যদিও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান বুমরাহ। কিন্তু এর পরের বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বুমরাহ। হাসান দেখা পান নিজের পঞ্চম উইকেটের। ভারত অলআউট হয় ৩৭৬ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)-
ভারত (প্রথম ইনিংস)- ৩৭৬/১০ (৯১.২ ওভার) (অশ্বিন ১১৩, জাদেজা ৮৬) (হাসান ৫/৮৩, তাসকিন ৩/৫৫)
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ১৪৯/১০ (৪৭.১ ওভার) (শান্ত ২০, সাকিব ৩২, লিটন ২২, মিরাজ ২৭)
ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস)- ৮১/৩ (২৩ ওভার) (রোহিত ৫, জায়সাওয়াল ১০, গিল ৩৩*, কোহলি ১৭, পান্ত ১২*)