রাকিবুল-মাহফুজুরের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

ছবি: রাকিবুল হাসান (বামে) ও মাহফুজুর রহমান রাব্বি (ডানে)

এক রান নিতে মোকোয়েনাও দৌড়ে দিলেন। তবে ডানহাতি ব্যাটার পৌঁছার আগেই কভারে দাঁড়িয়ে থাকা আরিফুল ইসলাম সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে দেন। আরিফুলের ওমন থ্রোতেই শেষ পর্যন্ত সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে একদিনের সিরিজের শেষ ম্যাচে ৩৪ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ইমার্জিং দল। এমন জয়ের পর আরিফুলকেই নিয়েই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠলেন সতীর্থরা। শেষ ম্যাচে সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছেন আকবর আলীরা।
মাহফুজুরের ৩৯ বলে ৮২ রানের ঝড় ছাপিয়ে ১ রানে জিতল মেট্রো
১৭ ডিসেম্বর ২৪
বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের নায়ক অবশ্য রাকিবুল হাসান ও মাহফুজুুর রহমান রাব্বি। ১১৮ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেছিলেন তারা দুজন। রাকিবুল ও মাহফুজুরের ৮৪ রানের জুটিতেই দুইশ পার করে বাংলাদেশ। রাকিবুল ৪২ রানে ফিরলেও মাহফুজুর হাফ সেঞ্চুরি করে থেমেছিলেন ৫৮ রানের ইনিংস খেলে। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও অবদান রেখেছেন তারা দুজনই। রাকিবুল ১০ ওভারে ২৬ রানে ৪ উইকেট ও মাহফুজুর ৩৬ রান খরচায় নিয়েছেন ২ উইকেট। তাদের এমন পারফরম্যান্সেই ২২৫ রান করেও জয় পেল বাংলাদেশ।
রাজশাহীর বিভাগীয় স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ২২৫ রান তাড়ায় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় সাউথ আফ্রিকা। রাকিবুলের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন মিকা এল প্রিন্স। তিনে নামা রিচার্ড সেলেটওয়ানেকে ফিরিয়েছেন মাহফুজুর। তৃতীয় উইকেটে অবশ্য জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন আন্দিলে চার্লস মোগাকানে ও জর্জ ভ্যান হার্দিন।
তাদের দুজনের জুটি ভেঙেছেন রাকিবুল। বাঁহাতি স্পিনারের বলে ৩৪ রান করা হার্দিনও আউট হয়েছেন বোল্ড হয়ে। একটু পর মোগাকানের উইকেটও তুলে নেন রাকিবুলই। বাংলাদেশের এই স্পিনারকে যেন খেলতেই পারছিলেন না সাউথ আফ্রিকার ব্যাটাররা। ডিয়ান ফরেস্টে, রোমাশান পিল্লাই ও কনোর বয়েডও ফিরেছেন দ্রুতই। ৯৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের মতোই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে সাউথ আফ্রিকাও।
রাকিবুল ও মাহফুজুরের মতো জুটি গড়ে তোলেন সফরকারীদের মাইকেল ভ্যান ভারেন ও মোকোয়েনা। তাদের দুজনের ব্যাটেই একশ পেরিয়ে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকে সাউথ আফ্রিকা। তাদের দুজনের জমে ওঠা জুটি ভেঙেছেন শেখ পারভেজ হোসেন জীবন। ডানহাতি অফ স্পিনার বলে তারই হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৪০ রান করা ভারেন। পরবর্তীতে ইনোসেন্ট এনটুলিকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন মোকোয়েনা।

আকবর-রাকিবুলের শেষের ঝড়ে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য জয়
১২ মে ২৫তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৪২ রান। নিজের শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে ১৭ রান করা এনটুলিকে ফেরান রাকিবুল। পরের ওভারে রান আউট হয়েছেন ৩৭ রান করা মোকোয়েনা। সাউথ আফ্রিকাকে ১৯১ রানে অল আউট করার দিনে রাকিবুল চারটি ও মাহফুজুর, ওয়াসি সিদ্দিকী নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন রিজওয়ান। পেসার মাইকেল ভ্যান ভারেনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে থার্ডম্যানের উপর দিয়ে খেলার চেষ্টায় সীমানার কাছে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ৬ বল খেলা রিজওয়ান আউট হয়েছেন রানের খাতা খোলার আগেই। মাহফিজুল ইসলাম রবিন ও রায়ান রাফসান মিলে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন।
যদিও পাওয়ার প্লে শেষের আগেই রায়ান রাফসানের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রোমাসান পিলাইয়ের পায়ের উপর করা ডেলিভারিতে স্কয়ার লেগ দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তবে টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় শর্ট ফাইন লেগে থাকা দিয়ান ফরেস্টার দারুণ ক্যাচে ফিরে যেতে হয় ১৯ রান করা রায়ানকে। একটু পর আউট হয়েছেন চারে নামা আরিফুল। পুরো সিরিজেই ব্যাট হাতে প্রত্যাশা মেটাতে না পারা ডানহাতি ব্যাটারকে ফেরান ইনোসেন্ট এনটুলি।
ডানহাতি অফ স্পিনারের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ১১ রান করা আরিফুল। লম্বা সময় টিকে থাকলেও ইনিংস বড় করতে না পেরে ফিরে গেছেন মাহফিজুল। প্রথম একদিনের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা ডানহাতি ওপেনার আউট হয়েছেন ভারানের বলে। ২ চার ও এক ছক্কায় ৪৮ বলে ২৬ রান করেছেন তিনি। প্রীতম কুমারও সুবিধা করতে পারেননি। ৩ রান করে ফিরেছেন সেসোনার বলে। ভালো শুরু পাওয়া আকবরকে ফিরতে হয় ৫১ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে।
দ্রুতই ফিরে গেছেন শেখ পারভেজ জীবন এবং ওয়াসি সিদ্দিকী। ফলে ১১৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এমন সময় দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন রাকিবুল ও মাহফুুজুর। তাদের দুজনের ব্যাটেই দুইশ পার করে বাংলাদেশ। শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করতে থাকা রাকিবুল আউট হয়েছেন ৪২ রানে। হ্যান্ডসাম মোকোয়েনার বলে ছক্কা মেরে হাফ সেঞ্চুরি করা মাহফুজুর থেমেছেন ৫৮ রানে। সাউথ আফ্রিকার হয়ে সেসোনা তিনটি এবং ভারেন দুটি উইকেট নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর—
বাংলাদেশ ইমার্জিং দল— ২২৫/১০ (৪৫.৫ ওভার) (মাহফুজুর ৫৮, রাকিবুল ৪২, আকবর ৩৮, মাহফিজুল ২৬; সেসোনা ৩/২৮, ভারেন ২/৪১)
সাউথ আফ্রিকা ইমার্জিং— ১৯১/১০ (৩৮.২ ওভার) (ভারেন ৪০, মোকোয়েনা ৩৭, মোগাকান ৩৫, হার্দিন ৩৪; রাকিবুল ৪/২৬, মাহফুজুর ২/৩৬, ওয়াসি ২/৬০)