আমার ভাই তামিম যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার মাঠে ফিরতে পারে: সাকিব

ছবি: ফাইল ছবি

বছরখানেক আগে রাজনীতিতে নাম লেখানো সাকিব ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেয়া তামিমের পথচলাটা একেবারে ভিন্ন। সাকিব দেশের বাইরে থাকলেও বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের জন্মদিন নিয়ে ভক্তদের আমেজের কমতি নেই। ২৩ মার্চ দিবাগত রাত ১২ টা থেকেই পুরো ফেসবুক জুড়ে ছিলেন সাকিব। তবে সকাল ১১ টা থেকে বদলে যায় ফেসবুকের নিউজফিডের গল্প। বন্ধু সাকিবের জন্মদিনে ফেসবুকের পুরো দখলটাই যেন নিলেন তামিম।
উন্নত চিকিৎসার জন্যে থাইল্যান্ডে নেয়া হতে পারে তামিমকে
৭ ঘন্টা আগে
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের অসুস্থতার খবরে ফেসবুক জুড়ে তখন কেবলই হাহাকার আর বিষাদে ছেঁয়ে গেছে। তামিমের এমন অসুস্থতার খবরে সারাটা দিন জুড়ে সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে বার্তা দিয়েছেন হার্শা ভোগলে, যুবরাজ সিং, লাসিথ মালিঙ্গার মতো বিদেশি তারকারা। আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি কলকাতা, ইংলিশ কাউন্টির দল এসেক্সও তামিমের জন্য দোয়া চেয়েছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা সাকিব অবশ্য ছিলেন না কোথাও।
মাগুরায় জন্ম নেয়া সাকিবের বেড়ে ওঠা বিকেএসপিতে। বিপরীতে তামিম উঠে এসেছেন বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে। দুজন ভিন্ন শহর থেকে এলেও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে একসঙ্গেই খেলেছেন তারা দুজন। সেখান থেকেই তাদের দুজনের বন্ধুত্বের শুরু। লম্বা সময় জাতীয় দলেও একসঙ্গে খেলেছেন। আইপিএল খেলতে গিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সের এক ভিডিওতে তামিমকে নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন সাকিব।
যদিও সবশেষ কয়েক বছরে সেই বন্ধুত্বে একটু একটু করে ফাঁটল ধরেছে। তামিমের এমন অসুস্থতার দিনেও এজন্যই কী সাকিবের কোনো বার্তা নেই? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল লম্বা সময় ধরেই। তবে এসবকে যেন তুঁড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। নিজের জন্মদিনেও বন্ধু, সতীর্থ তামিমের জন্য মন খারাপ সাকিবের। তামিমের দ্রুত সুস্থতার প্রার্থনা করে জন্মদিনের সেরা উপহার হিসেবে বাঁহাতি ওপেনারের জন্য দোয়া চেয়েছেন তিনি।

নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সাকিব লিখেছেন, ‘আজ আমার জন্য বিশেষ দিন, কিন্তু মনটা পুরোপুরি আনন্দে নেই, কারণ আমার প্রিয় সতীর্থ ও বন্ধু তামিম ইকবাল অসুস্থ। মাঠে আমরা একসঙ্গে অনেক লড়াই করেছি, অনেক স্মৃতি রয়েছে, আর সবসময় চাইব আমাদের এই পথচলা আরও দীর্ঘ হোক।’
অসুস্থ তামিমকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন সাকিবের বাবা-মা
২৫ মার্চ ২৫
‘তামিম, তুমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম বড় শক্তি। তোমার দ্রুত সুস্থতা ও মাঠে ফিরে আসার জন্য দোয়া করছি। ইনশাআল্লাহ, তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। তামিমের জন্য আপনার দোয়াই হবে, আমার জন্মদিনের সেরা উপহার । দোয়া করবেন—আমার ভাই তামিম যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার মাঠে ফিরতে পারে!’
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে স্বাভাবিক দিনের মতোই মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে টস করে ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন তামিম। তবে ফিল্ডিং করার এক পর্যায়ে বুকে ব্যথা অনুভব করায় মাঠ থেকে বেরিয়ে ড্রেসিং রুমে চলে যান বাঁহাতি ওপেনার। পরবর্তীতে বিকেএসপির অদূরে সাভারের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে গিয়ে ইসিজি ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান মোহামেডানের অধিনায়ক।
কিছুটা সমস্যা দেখা দিলেও ঢাকায় ফেরার উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টার কল করে বিকেএসপি ফিরে যান তামিম। তবে ঢাকায় ফেরার জন্য হেলিকপ্টারে উঠতে যাওয়ার আগে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। ফলে দ্রুততার সঙ্গে আবারও সেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলা তামিমকে ‘সিপিআর’ দেয়ার পাশাপশি ‘ডিসি শক’ দেয়া হয়। এনজিওগ্রাম করানোর পর ‘লেফট এন্টেরিয়র ডিসেন্ডিং আর্টারি’তে শতভাগ ব্লক ধরা পড়লে রিং পরানো হয়।
রিং পরানোর ঘণ্টা দুয়েক পর তামিমের জ্ঞান ফেরে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকীর সঙ্গে বড় ভাই নাফিস ইকবাল, চাচা আকরাম খানও ততক্ষণাৎ পৌঁছে যান সেখানে। আপাতত সাভারের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে আছেন তামিম। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পর পরবর্তীতে তামিমকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিসিবির মেডিকেল বিভাগের প্রধান দেবাশিষ চৌধুরি।